শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
করোনার প্রভাব

স্কিল ও ফিটনেসে চিন্তিত টাইগাররা

সমস্যা সবারই হবে। বিশ্বের অনেক নামিদামি খেলোয়াড়ের বাড়ির সঙ্গে ব্যক্তিগত ইনডোর বা ছোট্ট খেলার মাঠ আছে। আমাদের সেটা নেই। পরিস্থিতি মেনে নিতেই হবে -মুস্তাফিজুর রহমান
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

করোনাকালে না হয় ঘরে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে পারছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু ব্যাট-বলের অনুশীলন লম্বা সময়ের জন্য গৃহবন্দি হয়ে পড়ার নেতিবাচক প্রভাব কি পড়বে না খেলায়! করোনায় দীর্ঘ ক্রিকেটীয় বিরতিতে ক্রিকেটাররা কেউ স্কিল নিয়ে চিন্তিত আবার কেউ ফিটনেস নিয়ে। কেউ বলছেন পরিস্থিতির কারণে যে সমস্যাটা হবে তাতে কিছু করার নেই।

গত ফেব্রম্নয়ারিতে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাজেভাবে হারের পর এক জরুরি সভায় বসেছিলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা। সভায় বদলের ডাক দিয়েছিলেন তামিম-মুমিনুলরা। খেলোয়াড়েরা প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন, 'পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দেব। সবাই ফিট থাকব। এখন যে যতটুকু করছি, দলে তার চেয়ে বেশি অবদান রাখার চেষ্টা করব।'

প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী ফেব্রম্নয়ারিতে একটু অন্যভাবে অনুশীলন শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। দেশের মাঠে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে হারানো আত্মবিশ্বাসও যেন কিছুটা ফিরে পায় দল। এভাবে যখন যখন সব স্বাভাবিক বৃত্তে ফেরার পথে, তখনই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের থাবায় থমকে গেল খেলা। ক্রিকেটাররা এখন ঘরবন্দি। ঘরে থেকেও অবশ্য অনেকে ফিটনেস ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনুশীলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ 'স্কিল ট্রেনিং'। যা বন্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য! ব্যাটসম্যানরা হয়তো ঘরেই মাঝেমধ্যে শ্যাডো করছেন, বোলাররা একটু হাত ঘোরাচ্ছেন। কিন্তু লম্বা সময় সত্যিকারের ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন না করলে ভবিষ্যতে তো সেটার বাজে প্রভাবও পড়তে পারে খেলায়।

টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের অবশ্য ভিন্ন মত। তিনি মনে করেন, লম্বা সময় অনুশীলন না করলেও সেটির প্রভাব খেলায় পড়বে না। তিনি বরং প্রবাদতুল্য উদাহরণটাই সামনে আনলেন, 'কয়েকদিনের জন্য অস্ত্র জমা দিয়েছি, প্রশিক্ষণ তো আর জমা দিইনি! না খেলতে খেলতে সবাই ভীষণ ক্ষুধার্ত। ক্ষুধার কারণেই দেখবেন খেলা আরও ভালো হবে।'

অর্থাৎ টেস্ট অধিনায়কের মতে বিরতির কারণে ফিটনেস নিয়েই চিন্তিত তিনি।

পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে অবশ্য কিছুটা চিন্তিত মনে হলো বিষয়টা নিয়ে, 'সমস্যা সবারই হবে। বিশ্বের অনেক নামিদামি খেলোয়াড়ের বাড়ির সঙ্গে ব্যক্তিগত ইনডোর বা ছোট্ট খেলার মাঠ আছে। আমাদের সেটা নেই। পরিস্থিতি মেনে নিতেই হবে।'

করোনার সংক্রমণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন নাঈম হাসান। সর্বশেষ তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে (একটি টেস্টসহ) পান ৩০ উইকেট। এমন ছন্দে থাকার পরও খেলতে না পারার আক্ষেপ যাচ্ছেই না তরুণ অফস্পিনারের, 'ক্যারিয়ারটা বেশ গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। সবখানে নিয়মিত উইকেট পেতে শুরু করেছিলাম। তখনই বিরতিটা পড়ে গেল। আগের সেই ছন্দ ধরতে একটু কষ্ট হবে, সময়ও লাগতে পারে।'

করোনা-বিরতিতে দক্ষতা যদি কিছুটা এলোমেলো হয়েও যায়, জাতীয় দলে থাকায় মুমিনুল-নাঈমরা নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু যারা জাতীয় দলে নেই, তারা কীভাবে চ্যালেঞ্জটা উতরে যাবেন? সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বলছেন, 'আমার কাছে মনে হয় ফিটনেস ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। যারা সহজাত প্রতিভাবান, তাদের স্কিল নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময়ে শ্যাডো, ভারসাম্য ঠিক রাখার অনুশীলনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

আশরাফুলের মতো হাবিবুল বাশারকেও স্কিলের চেয়ে বেশি চিন্তিত হলো খেলোয়াড়দের ফিটনেস ধরে রাখা নিয়ে। বিসিবির নির্বাচক বলেছেন, 'স্কিল ট্রেনিংয়ে লম্বা বিরতি পড়ে গেলে মূল সমস্যাটা হয় হাত ও চোখের সমন্বয়ে। চোখে ভালো দেখছি, হাত দ্রম্নত যাচ্ছে, এটার সমন্বয় নিখুঁত হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনুশীলন না করলে, ম্যাচ না খেললে এটা নিখুঁত হয় না। তবে এতে বড় কোনো সমস্যা হবে না আশা করি। কিছুদিন অনুশীলন আর কয়েকটা ম্যাচ খেললেই ঠিক হয়ে যাবে, যদি ফিটনেস ঠিক থাকে। ফিটনেস হারিয়ে ফেললে আগের জায়গায় আসতে একটু সময় লাগে।'

স্কিল নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও মুমিনুলের উদাহরণটাই একটু ঘুরিয়ে দিলেন, 'ফেরার পর কিছুদিন লাগবে মানিয়ে নিতে। তবে বেশি সময় লাগবে না। স্কিল সাধারণত খেলোয়াড়েরা ভোলে না। সেটা সবসময়ই মাথায় থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলা শুরু হলে কারও কারও সমস্যা হতে পারে। কিছুদিন অনুশীলন করলে ঠিক হয়ে যাবে।'

আপাতত ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলনের সুযোগ নেই বলে সালাউদ্দিন মনস্তাত্ত্বিক অনুশীলনটাই বেশি করতে বলছেন। কীভাবে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ানো যায়, মানসিকভাবে শক্ত হওয়া যায় এবং স্নায়ুচাপকে জয় করা যায়, এসব নিয়েই খেলোয়াড়দের বেশি ভাবতে বলছেন।

এর আগে একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ সরওয়ার ইমরান। পেস বোলাররা ঘরেই কল্পচোখে দেখবেন দৌড়াচ্ছেন, লাফ দিচ্ছেন, বল ছাড়ছেন। ফলো থ্রম্নতে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গে তার আরেকটা পরামর্শ, 'অতীতের ভুলগুলো মনে করবে। সেগুলো শুধরে নেওয়ার উপায় বের করবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95645 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1