শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাক খাত

যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

মহামারি করোনাভাইরাসের ক্ষতির মুখে বিশ্ব অর্থনীতি। থমকে গেছে বিশ্ববাজারে পণ্যের লেনদেন। এ পরিস্থিতিতে সরাসরি বাণিজ্যিক আঘাত হানে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে। একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে এপ্রিলে প্রায় ৮৫ শতাংশ পোশাক রপ্তানি কমে যায়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাক খাত।

করোনা প্রাদুর্ভাবে স্থগিত ও বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশ ফিরে আসতে শুরু করেছে। বাড়ছে রপ্তানি। আশায় বুক বাঁধছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা প্রাথমিকভাবে কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। আগের স্থগিত হওয়া রপ্তানি আদেশ কিছু ফিরে আসছে।

সরকারও পোশাক খাত পুনরুজ্জীবিত করতে আর্থিক ও নীতিগত সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। আশার দিক হলো, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে এ খাত। তবে নতুন রপ্তানি আদেশ না আসা পর্যন্ত এ খাতের অনিশ্চয়তা কাটছে না। শীতকালীন রপ্তানি অর্ডার কী পরিমাণ পাবে, তার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের আগামীর সম্ভাবনা। যে জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত। তারপরই বোঝা যাবে কোন অবস্থায় পৌঁছবে দেশের পোশাক শিল্প।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলতি বছরের মার্চে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমে ২০ দশমিক ১৪ শতাংশ। এরপর এপ্রিলে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন রপ্তানি কমে ৮৫ দশমিক ২৫ শতাংশে ঠেকে। মে মাসে কমে ৬২ শতাংশ। জুনেও রপ্তানি কমার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। কিন্তু এর ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির হার আগের তুলনায় কম। অর্থাৎ মাত্র ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বলছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে চলতি বছরের এপ্রিলে। ওই মাসে মাত্র ৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। মে মাসে আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ডলারে; যা আগের বছরের চেয়ে ৬২ শতাংশ কম। জুনে এসে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২২৪ কোটি ডলারে, যদিও এ অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৩ শতংশ কম। তবে আগের মাসের চেয়ে ৮২ শতাংশ বেশি।

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন- বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ বলেন, 'করোনার সময় সবকিছু বন্ধ ছিল, যার কারণে রপ্তানি হয়নি। এখন কিছুটা রপ্তানি হচ্ছে। সবাই তাদের নিজেদের ঘর গোছাচ্ছে। তবে মে-জুন সময়ে যেসব রপ্তানি পণ্য তৈরি হয়েছে কিন্তু রপ্তানি করা যায়নি অথবা রপ্তানি স্থগিত হয়েছিল, ওইসব পণ্য এখন পাঠানো হচ্ছে। অর্থাৎ রিশিডিউল পণ্যগুলো পাঠানো হচ্ছে। প্রকৃত রপ্তানি আদেশ বাড়েনি।'

দেশের অন্যতম শীর্ষ নিট কম্পোজিট শিল্প সাভারটেক্স গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে রপ্তানি বেড়েছে, এটাকে পজিটিভ ধরলে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। কারণ সামনে শীতের সময়। এ সময় অনেক অর্ডার আসে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কাজের অর্ডার হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেই অর্ডারগুলো আমরা পাইনি। অর্ডারগুলোর ওপর নির্ভয় করবে আগামী বছর কী পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ পোশাক শিল্পের আসল চিত্র বোঝা যাবে।'

পোশাক মালিকদের নেতা ফয়সাল সামাদ জানান, সরকার আমাদের অনেক সহযোগিতা করছে। আমরা যদি সঠিকভাবে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার সঠিক ব্যবহার করতে পারি; তাহলে আগামীতে লাভবান হব। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর- এই তিন মাস পর্যবেক্ষণ করব। এ সময় যে পরিস্থিতি হবে তার ওপর নির্ভর করবে আগামীতে আমরা কোন দিকে যাব এবং আমাদের অবস্থাটা কোথায় দাঁড়াবে?

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ২০ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। গত অর্থবছর দুই হাজার ৭৯৪ কোটি ৯১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

বর্তমান পোশাক খাত প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই'র সহসভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'ক্রেতারা আগে যেসব অর্ডার স্থগিত ও বাতিল করেছিলেন, সেই অর্ডার থেকেই এখন কিছু কিছু পণ্য নিচ্ছেন। কিছু নতুন অর্ডারও আসছে। তবে এটি খুবই কম। আগামীতে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা নিয়ে বায়াররা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। সামনে শীতকালীন অর্ডার কী পরিমাণ আসে, তা দেখার বিষয়। যদি কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি আদেশ না পাই, তাহলে আবারও কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।'

'সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেখতে হবে, এরপর বোঝা যাবে আগামীতে পরিস্থিতি কী হবে। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আশা করছি ঘুরে দাঁড়াতে পারব।' সূত্র : জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107908 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1