শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রপ্তানির নতুন বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য নেই

ইমদাদ হোসাইন
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর একটি পোশাক কারখানায় কমর্রত শ্রমিকরা Ñ ফাইল ছবি

রপ্তানিকারকদের প্রচলিত বাজার ছেড়ে নতুন বাজার খেঁাজার ক্ষেত্রে পণ্যের কোনো বৈচিত্র্য নেই। দেশের রপ্তানির বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কয়েকটি দেশেই সীমাবদ্ধ। যদিও বাংলাদেশের পণ্য বিশ্বব্যাপী রপ্তাানির উদ্দেশ্যে ২০১০ সালে প্রথাগত বাজারের বাইরে নতুন বাজার খেঁাজার জন্য প্রণোদোনা ঘোষণা করে সরকার।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) গত কয়েক বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথাগত বাজারগুলোর বাইরে শুধ পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে ১৬ শতাংশ। যেখানে ৫ বিলিয়ন ডলারের আয় হয়েছে। সবের্শষ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পযর্ন্ত নতুন বাজারে পোশাকের রপ্তানি গেল বছরের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি।

২০১০ সালে ওই প্রণোদোনা ঘোষণার আরেকটি লক্ষ্য ছিল নতুন বাজার ধরতে পণ্যের বৈচিত্র্য আনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো- বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের কোনো বৈচিত্র্য আসেনি। তৈরি পোশাক খাতের পণ্যগুলো আগের মতোই। শুধুমাত্র এ শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়নই হয়েছে বেশি। অথচ ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল অথার্ৎ তিন বছরে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে প্রায় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন টাকা ভতুির্ক দেয়া হয়েছে।

এই প্রণোদোনা প্যাকেজটির গোড়া থেকে পোশাক খাতের কয়েকটি কোম্পানি ভারত, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশে নতুন বাজার তৈরি করে সেখানে শিপমেন্ট করেছে। এসব রপ্তানি কাজের উন্নয়নের সঙ্গে পরিচিত কয়েকজন জানিয়েছেন, নতুন বাজার খেঁাজার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধা সব সময়ই ডিঙাতে হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, শুল্ক, অশুল্ক ও অন্য আরও সমস্যাগুলো।

আমেরিকান বংশো™ভ‚ত বাংলাদেশি আরএমজি খাতের বিশ্লেষক ফরেস্ট ই কুকসনের মতে নতুন বাজার বলতে বুঝায় রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা বিষয়টি। কিন্তু আরেকটি ব্যাপারও সেখানে মাথায় রাখতে হবে- নতুন বাজারের ক্ষেত্রে পণ্যের বৈচিত্র্য একটি বড় ব্যাপার। সেজন্য পণ্যের প্রকারভেদ ও বৈচিত্র্যে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাস হলো, বেশি উৎপাদন করে বেশি বেশি রপ্তানি করা। অথচ গামেন্টসের সংখ্যা খুবই নগণ্য ছিল। এখন যেহেতু পোশাক শিল্পের প্রসার ও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে সেহেতু মানসম্পন্ন পণ্যের উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। আর বিদেশি ক্রেতাদের নজর যেহেতু ফ্যাক্টরি নিরাপত্তা ও শ্রমিকের অধিকারের দিকে সুতরাং সেটিও খুব জোরালোভাবে নজরদারি করতে হবে।

বাংলাদেশে বতর্মানে যেসব কারখানা পরিমাণে কম পোশাক সরবরাহ করে, অগার্নাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) তাদের বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যয় ও শ্রম ব্যয়ের বিষয়টি জোরালোভাবে দেখে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালক মো. আব্দুর রউফ জানান, প্রণোদোনা দেয়ার পর থেকে রপ্তানি বেড়েছে। আগের চেয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার বেশি রপ্তানি হয়েছে। নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। তবে সেটি অনেকটা প্রথাগত বাজারের মতোই পোশাকখাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

তিনি আরও জানান, নতুন বাজার খেঁাজার ক্ষেত্রে যদি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকে তবে আমরা বলতে পারি অন্য কেউ খুব দ্রæত সে বাজার দখলে নিচ্ছে। কিন্তু সেটি এখন হচ্ছে না। বিভিন্ন নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরিতে প্রতিনিধি পাঠিয়ে ইপিবি কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যের চুক্তি করেছি।’

অন্যদিকে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রণোদোনা ঘোষণাটি নতুন নতুন দেশে বাজার তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। তবে এখাতের উন্নতি ধরে রাখতে হলে পোশাক শিল্পের মালিকদের দেয়া ভতুির্কর টাকার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এখনই বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান তৈরির উপযুক্ত সময় বলেও মনে করেন কেউ কেউ।

পলিসি রিসাসর্ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার বলেন, বতর্মানে নতুন বাজার খেঁাজার জন্য ৪ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ দেয়া হয়। পণ্যের বৈচিত্র্য আনার জন্য এটি যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের দেশের পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ মোটেও হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসাসর্ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, একটি বাজার দীঘির্দন ধরে তো নতুন থাকতে পারে না। নতুন বাজারের সংজ্ঞা ঠিক করা দরকার। ধরা যাক, ‘ক’ নামের একজর রপ্তানিকারক ‘গ’ নামের একটি দেশে কয়েক বছর ধরে রপ্তানি করছে। কিন্তু এতদিন রপ্তানি করার পর তার কাছে তো ওই বাজার আর নতুন থাকতে পারে না। এ জন্য ১০ বছরের মতো একটি সময়সীমা নিধার্রণ করে দেয়া দরকার।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সিনিয়র অথর্নীতিবিদ ড. এম মাসরুর রিয়াজ জানান, তারা এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। কিভাবে পণ্যের বৈচিত্র্য আনা যায় তা নিয়েও গবেষণা করছেন তারা।

তিনি বলেন, এ জন্য আমরা তিনটি বড় বিষয়কে সুনিদির্ষ্টভাবে চিহ্নিত করেছি। এগুলো হলো- চামড়ার জুতা, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ও লাইট উৎপাদন। এ জন্য একটি এক্সপোটর্ রোডম্যাপ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এসব পণ্যে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। আমরা কিছু কাজ করতে পারলে এসব বাজার দখল করা সহজ হবে।

বাংলাদেশ গামের্ন্ট ম্যানুফ্যাকসারাসর্ অ্যান্ড এক্সপোটাসর্ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই প্রণোদোনা নতুন বাজার খুঁজতে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। ১৬ শতাংশ শেয়ার কোনোভাবেই ছোট নয়। এটি আরও বাড়তে পারে।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুশের্দী বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানিতে শীষের্ পোশাক খাত। নতুন বাজার খেঁাজায় অনেক সমস্যা আছে। সব জায়গায় কমন ব্যাংক সেবা নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37003 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1