শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শবেবরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

হযরত আবু উমামার (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে, পাঁচ রাতের দোয়া বিফল হয় না। শবেকদর, শবেবরাত, জুমার রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।
মাওলানা আনোয়ার-উল-করিম
  ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতকে লাইলাতুল বরাত কিংবা শবেবরাত বলে। 'শব' কিংবা 'লাইলা' শব্দের অর্থ রাত। আর 'বারাআত' অর্থ হচ্ছে মুক্তি। বাংলায় 'বরাত' শব্দটি ভাগ্য বা সৌভাগ্য অর্থে ব্যবহৃত হলেও আরবিতে এ শব্দটির অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আরবিতে 'বারাআত' শব্দটির অর্থ বিমুক্তি, সম্পর্কচ্ছিন্নতা, মুক্ত হওয়া, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া ইত্যাদি। ফার্সি 'শবেবরাত', আরবি 'লাইলাতুল বারাআত' বা 'বিমুক্তির রজনী' বলতে আরবি ৮ম শাবান মাসের মধ্যম রজনী বোঝানো হয়। সুতরাং মানুষ যদি এ রাতে নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে চক্ষু থেকে অশ্রম্ন প্রবাহিত করে, তাহলে মহান রাব্বুল আলামিন তার পাপরাশি মুক্ত করে দেন। কোরআন ও হাদিসে 'লাইলাতুল বারাআত' পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়নি। সাহাবী-তাবেয়ীগণের যুগেও এ পরিভাষাটির ব্যবহার হয়েছে বলে জানা যায়নি। এ রাতকে হাদিস শরিফে 'লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান' বা 'মধ্য শাবানের রজনী' বলা হয়েছে।

সাহাবী-তাবিয়ীগণের যুগের অনেক পরে এ রাতকে 'লাইলাতুল বারাআত' বা 'বিমুক্তির রজনী' বলে আখ্যায়িত করার প্রচলন শুরু হয়। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উলেস্নখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনের বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রথম এ রাতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়। মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৩৮৮

তবে কোরআনে কারীমের একটি আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ 'শবেবরাত' প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। মহান আলস্নাহ বলেন, 'আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক (বরকতময়) রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরিকৃত হয়। (সূরা দুখান-৩-৪ আয়াত)। অবশ্য অধিকাংশ মুফাসসির একে শবে-কদরের সঙ্গেই সম্পৃক্ত করেছেন। অবশ্য 'শবেবরাত' বা 'লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান' সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

শবেবরাতের গুরুত্ব : এ সম্পর্কে হাদিসে ব্যাপক আলোচনা বিদ্যমান রয়েছে। এক হাদিসে রয়েছে, নবী করিম (স.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা রমজান মাসের জন্য শাবান চাঁদের হিসাব রাখো। হুজুর (স.) রমজানের রোজা ছাড়া শাবান মাসে যত অধিক রোজা রাখতেন, অন্য মাসে তত অধিক রোজা রাখতেন না। এ জন্যই হুজুর (স.) শাবান মাসকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। হযরত আসমা ইবনে জায়েদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, শাবান আমার মাস, আর রমজান আলস্নাহর মাস।

হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা.) বলেন, রাসূলুলস্নাহ (স.) বলেছেন, মহান আলস্নাহ বরাত রজনীতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনু মাজাহ)।

হযরত আবু সালাবা আল খুশানী (রা.) বলেন, রাসূলুলস্নাহ (স.) বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে, তখন আলস্নাহতায়ালা তার সৃষ্টি জীবের প্রতি দৃকপাত করেন। অতঃপর মুমিনদের মার্জনা করে দেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতায় লিপ্তদের তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেন। (আস সুন্নাহ : ২২৩-২২৪ পৃ.)।

হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, শবেবরাতে চলতি বছরে জন্মগ্রহণকারী আদম সন্তানদের নাম এবং চলতি বছরে মৃতু্যবরণকারী আদম সন্তানদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রাতে আদম সন্তানদের আমল উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তাদের রিযক অবতীর্ণ হয়। (বায়হাকী)

হযরত আবু উমামার (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে, পাঁচ রাতের দোয়া বিফল হয় না। শবেকদর, শবেবরাত, জুমার রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।

মহানবী (স.) শবেবরাত অর্থাৎ ১৫ শাবানের দিনে রোজা রাখা এবং রাতে ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। মিশকাত শরীফে হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত। হুজুর (স.) ইরশাদ করেন, শাবানের ১৫তম রজনী উপনীত হলে তোমরা সে রাতে অধিক হারে আলস্নাহর ইবাদত কর। অতঃপর দিনের বেলা রোজা পালন কর। সেদিন আলস্নাহতায়ালা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হন এবং আহ্বান করতে থাকেন- আছে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করব; আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী, আমি তাকে রিজিক দান করব; আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন। (মিশকাত : ১/২৬)।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি, রাসূলকে (স.)-কে পেলাম না। খুঁজতে বের হয়ে দেখি তিনি মদিনা শরিফের সর্ববৃহৎ গোরস্থান 'জান্নাতুল বাকি'তে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, আয়েশা! তুমি কি জানো আজ কোন রজনী? আমি বললাম, না। রাসূলুলস্নাহ্‌ (স.) বললেন, আলস্নাহতায়ালা বরাত রজনীতে নিকটতম আকাশে অবতীর্ণ হন এবং 'কালব' গোত্রের মেষপালের পশম-সংখ্যারও অধিক ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন। আজ সেই রজনী। (মিশকাত : ১/২৮)

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত আছে। একদা নবী করিম (স.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আয়েশা! তুমি কি জান বরাত রজনীতে কী ঘটে? তিনি বললেন, 'ইয়া রাসূলালস্নাহ কী ঘটে? হুজুর (স.) বললেন, এ রাতে নির্দিষ্ট হয় এ বছরে যত মানুষ জন্মলাভ করবে, এ বছর যেসব মানুষ মৃতু্যবরণ করবে, এ রাতে উপস্থিত করা হয় মানুষের কর্মসমূহ এবং এ রাতে অবতীর্ণ করা হয় মানুষের রিজিকসমূহ। আলস্নাহতায়ালা এ রজনীতে আদম সন্তানের ব্যাপারে ঘটিতব্য স্থিরিকৃত সব ফয়সালা তথা জন্ম, মৃতু্য, রিজিক বণ্টন ইত্যাদি বিষয়াবলির তালিকা পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করে নেন এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ফেরেশতাগণের কাছে তা অর্পণ করেন।

হযরত আতা ইবনে ইয়াছার (রা.) বর্ণনা করেন, শবেবরাত উপস্থিত হলে মালাকুল মাওত নামক ফেরেশতাকে একটি তালিকা অর্পণ করে বলে দেয়া হয় যে, এ তালিকায় যত নাম লিপিবদ্ধ আছে, তাদের আত্মাগুলো নিধন করে নেবে। অথচ মানুষ বৃক্ষরোপণ, বিবাহশাদি, গৃহ নির্মাণ প্রভৃতি কাজ করে যাচ্ছে। হতে পারে তাদের নামও মৃতু্যবরণকারীদের তালিকাভুক্ত হয়ে আছে।

হযরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) ফরমান, দুনিয়ার ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর নামে মুসলমানদের জন্য দুটি ঈদ রয়েছে, তেমনি ঊর্ধ্বাকাশসমূহে ফেরেশতাগণের জন্যও দুটি ঈদ রজনী রয়েছে। এর একটি হচ্ছে শবেকদর, অপরটি শবেবরাত। মুমিন বান্দাগণের জন্য ঈদ-উৎসব দিনে থাকে। আর ফেরেশতাগণের ঈদ-উৎসব নির্ধারণ করা হয়েছে রাতে। কেননা মানুষ নিদ্রা যায় পক্ষান্তরে ফেরেশতাদের কোনো নিন্দ্রা নেই।

এ রজনীতে আলস্নাহতায়ালা কিছু সংখ্যক মানুষ ছাড়া সব ইমানদার ব্যক্তির গুনাহ ক্ষমা করেন। পরিপূর্ণ তওবা ছাড়া এ রাতে যাদের গুনাহ মাফ করা হবে না তারা হলো- ১. মুশরিক ২. হিংসুক ৩. পিতামাতার অবাধ্য সন্তান ৪. পায়ের নিচের গিরা ঢেকে কাপড় পরিধানকারী ৫. মদ্যপানকারী ৬. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ৭. জাদুকর ৮. গণক-ঠাকুর ৯. হস্তরেখা দেখে ভাগ নির্ণয়কারী ১০. গায়েবের সংবাদদাতা ১১. অন্যায়ভাবে ট্যাক্স আদায়কারী ১২. জালেম সৈনিক ১৩. ঢোল, তবলা হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদক ১৪. গায়ক-গায়িকা, বিদয়াতি ১৫. জুয়াখেলায় অভ্যস্ত ব্যক্তি।

শবেবরাতে করণীয় : হাদিস শরিফে শবেবরাতের নিম্নোক্ত পালনীয় আমল উলেস্নখ রয়েছে-

১. কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বা আয়োজন না করে সাধারণভাবে এ রাতে কবরস্থানে যাওয়া এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা, দরুদ-ইস্তেগফার পাঠ করে দোয়া করা।

২. এ রাতে জাগ্রত থেকে আলস্নাহর ইবাদত তথা কোরআন তেলাওয়াত করা, অধিকহারে দরুদ শরিফ পাঠ করা এবং নফল নামাজ পড়া। তবে নামাজের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বরং সামর্থ্যানুসারে জামাত ছাড়া অনির্দিষ্টভাবে নামাজ পড়া এবং নিজের জন্য ও সব মুসলমানের জন্য রোজা রাখা।

৩। শবেবরাতের পরদিন অর্থাৎ ১৫ শাবান নফল রোজা রাখা। রাসূলে আকরাম (স.) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের সামনে শাবান মাসের পঞ্চদশ রাত শবেবরাত উপস্থিত হয়, তখন তোমরা সেই রাতে নামাজ পড়ো আর দিনের বেলায় রোজা রাখো।

শবেবরাতে রাসূলে আকরামের (স.) আমলের বর্ণনা দিয়ে হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, নবীজী (স.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! তুমি জানো আজ কোন রাত্রি? আমি আরজ করলাম, এ সম্পর্কে আলস্নাহর রাসূল (স.)-ই অধিক জ্ঞাত। নবীজী (স.) ইরশাদ করলেন, আজ শাবান মাসের মধ্যরাত। এ রাতে আলস্নাহতায়ালা তার বান্দাদের দোজখের শাস্তি হতে মুক্তিদান করেন। আজ কি তুমি আমাকে ইবাদত করার অনুমতি দেবে? আমি বললাম, 'জি। এরপর নবী (স.) সূরা ফাতিহা ও ছোট একটি সূরা পাঠ করে প্রথম রাকাতে সেজদায় অবনত হয়ে অর্ধরাত অতিবাহিত করে দিলেন। দ্বিতীয় রাকাতে সেজদায় বাকি অর্ধরাতও কাটিয়ে দিলেন। তিনি এমনভাবে সেজদায় পড়ে রইলেন যে, আমার মনে হলো- আলস্নাহ তার পবিত্র আত্মা কবজ করে দিয়েছেন।

এ হাদিস থেকে একটি ব্যাপার স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, শবেবরাতে নামাজের রাকাত সংখ্যা বাড়ানোর মধ্যেই প্রকৃত পুণ্যতা নয়; বরং একাগ্রচিত্ত ও আন্তরিকতা সহকারে অল্পসংখ্যক নামাজই আলস্নাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যথেষ্ট। তা ছাড়া যে কোনো নামাজে সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কোনো সূরা নির্দিষ্ট নেই। যার কাছে যেভাবে সহজ মনে হবে, সেভাবেই নামাজ আদায় করে নেবে।

আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় লিখিত কোনো কোনো নামাজ শিক্ষা পুস্তকে শবেবরাতের নামাজের এমন কঠিন পদ্ধতি উলেস্নখ রয়েছে, যা পাঠ করে সাধারণ মানুষ একেবারে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। অথচ নফল নামাজের ক্ষেত্রে এমন ধরাবাধা কোনো নিয়ম নেই।

শবেবরাতে বর্জনীয় : বরকতময় এ রজনীতে তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আলস্নাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে নিমগ্ন থাকাই মুমিনের কর্তব্য। অথচ কিছুসংখ্যক লোক এ রাতে এমন কিছু কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যেগুলো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেমন- বোমা ফাটানো, পটকাবাজি, তারাবাজি, আতশবাজি, অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, পোলাও-বিরায়ানী ও হালুয়া-রুটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি। এগুলো নিছক কুসংস্কার বৈ কিছু নয়।

আতশবাজি একটি সামাজিক কুসংস্কার, অপচয় ও অপরাধের কাজ। ইয়াজুজ-মাজুজ আলস্নাহর দিকে তীর নিক্ষেপ করবে তাকে ঘায়েল করার জন্য। আতশবাজির মাধ্যমে অনেকাংশে সেটারই অনুকরণ হয় বলে এটি শরিয়তে নিষিদ্ধ। অন্যদিকে আলস্নাহ ও তার ফেরেশতাগণ এ রজনীতে দুনিয়াবাসীর প্রতি রহমত নাজিল করতে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন। বান্দাদের তার রহমত ও বরকত লাভ করার জন্য অবিরাম আহ্বান জানাতে থাকেন; ঊর্ধ্বমুখী আতশবাজির দ্বারা যেন প্রকারান্তরে তৎপ্রতিই বিদ্রূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে। আতশবাজি সামাজিকভাবেও দারুণ ক্ষতিকর। আতশবাজির ফলে নানা দুর্ঘটনার সংবাদ প্রতিবছরই পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়ে থাকে।

শবেবরাতে একটি উলেস্নখযোগ্য কুসংস্কার হলো, হালুয়া-রুটি না হলে যেন শবেবরাত পালনই অসম্পূর্ণই থেকে যায়। মূলত শরিয়তে এর কোনো নিয়ম নেই। কারণ, এদিন সূর্যাস্ত থেকেই আলস্নাহতায়ালা পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে এসে বান্দাকে ডাকতে থাকেন। তাই তার ডাকে সাড়া না দিয়ে এসব ভোজনে লিপ্ত থাকা একদিকে যেমন ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়, অন্যদিকে উদরপূর্তির দরুন এ মুক্তির রজনীতে ইবাদতে আলস্য চলে আসে। রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে অধিক পরিমাণ ইবাদত-বন্দেগি করার ইচ্ছা করলে হালকা-পাতলা খানা খাওয়া ভালো। অনেক স্থানে এ রাতে গরু-ছাগল-মুরগি জবাইয়ের ধুম লেগে যায়। এ সবই সুন্নত পরিপন্থি। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আগাছার মতো মুসলমানদের ভেতর অতি সংগোপনে এসব রুসুম ও কুসংস্কার অনুপ্রবেশ করিয়েছে।

অনেক স্থানে দেখা যায়, বরাত রজনীতে মুসলিস্নদের একত্রিত করে রাতব্যাপী ওয়াজ-নসিহতের আয়োজন করা হয়। যেহেতু এ রাতে নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দরুদ পাঠ, কবর জিয়ারতের মতো বিভিন্ন ইবাদত করতে নবী করিম (স.) হতে ইঙ্গিত এসেছে, তাই অন্যান্য ইবাদত ছাড়া শুধু ওয়াজ-নসিহত করে জাগরণ করা মাকরূহ হবে। তবে হঁ্যা, রাতের শুরুতে ইবাদতের নিয়ম-কানুন জানানোর উদ্দেশ্যে এ রাতের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য কিছু সময় আলোচনা করা যেতে পারে।

মুক্তির বারতা নিয়ে আসা পবিত্র শবেবরাতে প্রতিটি মুসলমানের উচিত এ রাতের যাবতীয় ফজিলত অর্জনের জন্য প্রয়াসী হওয়া। এ জন্য পূর্বদিনেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমিয়ে নেয়া প্রয়োজন। যাতে রাতের বেলা ঘুম আমাদের কাহিল করতে না পারে। কারণ, কোনো অংশে আলস্নাহর রহমতের দৃষ্টি বান্দার প্রতি নিবন্ধ হয়, তা-তো হলফ করে বলা যায় না। খোদ নবী করিম (স.) আলস্নাহর দরবারে আগ থেকেই দোয়া করতেন এ বলে, হে আলস্নাহ্‌ আমাকে রজব ও শাবান মাসের বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছাও। এতে এ রাতের যে কত গুরুত্ব, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

মাওলানা আনোয়ার-উল-করিম: আলোচক, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন

ধহধিৎঁষশধৎরস৭৩@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46194 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1