শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরিষা ফুল হলুদ রঙে সেজে প্রাণ ফিরে পেয়েছে নওগাঁর প্রকৃতি

রুহুল আমিন, নওগাঁ প্রতিনিধি
  ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:২৭

শস্যভাÐার খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় প্রতিটি ফসলের মাঠজুড়েই এখন সরিষা ফুলের ম-ম গন্ধে মুখরিত। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ণ প্রতিটি মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক স্বপ্নিল পৃথিবী। সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলে শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকিমিকি করছে। এ এক অপরূপ সৌন্দর্যে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি। যেদিকে তাকাই শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে শরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পণ এ অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মুহ‚র্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে।

এই মৌসুমে সরিষার ভালো ফলনের আশায় জেলার কৃষকরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় আমন ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে নওগাঁর কৃষক।

রবিশস্য মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দেওয়ায় ও আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় সরিষার পাশাপাশি আলু, গম ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন জেলা কৃষি অফিস ও কৃষকরা।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় ৩২ হাজার একশত হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার জেলায় ৩৩ হাজার ৬ শত ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে এক হাজার ৫ শত ৪০ হেক্টর বেশি।

শুরুতে সরিষা ক্ষেতে পোকামাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগবালাই মুক্ত হওয়ায় এ জেলায় বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।

জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক আজাদ সরদার বলেন, আমি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কিছু বীজ পেলেও আমি নিজে বাকিটা কিনে জমিতে বপন করেছি। সরিষা গাছে প্রচুর পরিমাণ ফুল ধরায় মনে হচ্ছে এবার সরিষার আশানুরূপ ফলন পাব। দাম ভালো হলে গত বারের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারব।

এই উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে প্রায় ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কোনো প্রকার দুর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি।’

মান্দা উপজেলার কশব মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক বয়েন উদ্দিন শাহ বলেন, ‘আমি সরিষার আবাদ করেছি এক বিঘা মাটিতে। আবহাওয়া ভালো দেখাচ্ছে, ভরসা করা যায় আল্লাহ দিলে আবাদ ভালো হবে। এখন বাজারে সরিষার দাম ভালো আছে। আশা করা যাচ্ছে এবার সরিষার আবাদ ভালো হবে আর বাজারে সরিষার দামও পাব ভালো।’

নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের হাঁড়িয়াগাছী গ্রামের কৃষানি জায়রা বেগম বলেন, ‘বাবা আমি মেয়ে মানুষ লোক লাগিয়ে এবার ১৫ কাঠা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। ফসল দেখে মনে হচ্ছে ভালো ফলন হবে। ’

নওগাঁ জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এবার জেলার ৩২ হাজার একশত হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে এক হাজার ৫ শত ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। যেহেতু তেলের দাম বেশি সরিষা চাষে কৃষকরা আগ্রহী। সরিষা সহজে হয়।’

এবারের আবহাওয়া ফেবারেবল, শেষের দিকে বৃষ্টি হয়নি, মাটির জোর তাড়াতাড়ি আসছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। যথাসময়ে জমি চাষযোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো প্রকার ক্ষতি না হলে এ জেলায় সরিষা আবাদে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা হবে বলে তিনি মনে করেন।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে