শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আল-আকসায় তান্ডব

মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ, উল্টো সুর পশ্চিমে

ম ফিলিস্তিনে বিমান হামলায় শিশুসহ মৃতু্য বেড়ে ২৫ ম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জাতিসংঘের
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ মে ২০২১, ০০:০০
আহত এক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে

জেরুজালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলের তান্ডবের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলমান বিশ্ব। মসজিদের ভেতর নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, বাংলাদেশসহ প্রায় সব মুসলিম দেশ। তবে এই ইসু্যতে অনেকটাই উল্টো সুর পশ্চিমাদের। ইসরাইলের তান্ডব নিয়ে কিছু না বললেও তারা সরব তেল আবিবের দিকে হামাসের রকেট ছোড়া নিয়ে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা

জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে জবরদস্তি চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। সোমবার ভোরে আল-আকসা মসজিদে ঢুকে তান্ডব চালানোর পর সন্ধ্যায় গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। এদিকে, মঙ্গলবারও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হামলা অব্যাহত ছিল। এতে প্রাণ হারিয়েছে ৯ শিশুসহ অন্তত ২৫ ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলের এই বর্বর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন। আল-আকসায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। মঙ্গলবার ভোরে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলিদের এই কর্মকান্ড গোটা মুসিলম বিশ্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দেশটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আল-আকসা মসজিদে মুসলিস্নদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষানীতি লঙ্ঘন করে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে সৌদি আরব। এই ঘটনার জন্য ইসরাইলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সমঝোতা লঙ্ঘন করে যে কোনো ধরনের সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধের উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

এদিকে, গাজায় ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান। হামলার পর তিনি ফিলিস্তিনি নেতাদের কাছে ফোন করে ইসরাইলের 'সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব' প্রতিরোধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার কাছে করা ফোনকলে তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য তুরস্কের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ইসরাইলের বিরুদ্ধে 'মানুষের ভূমি ও বাড়ি চুরি' এবং একটি 'বর্ণবাদী সরকার ব্যবস্থা' গড়ে তোলার অভিযোগ করেছেন। ইসরাইল অবৈধভাবে দখল করে রাখা এলাকার বাসিন্দাদের টিকা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে এবং আল-আকসা মসজিদের ভেতর নিরীহ মুসলিস্নদের ওপর গুলি চালিয়েছে বলেও উলেস্নখ করেছেন তিনি।

মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি বাহিনীর হামলার এর 'তীব্র নিন্দা' জানিয়েছে। দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজিহ আল-নাজারি সোমবার কায়রোতে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত আমিরা ওরনের সঙ্গে দেখা করে বলেন, তারা ইসরাইলের এই পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান ও এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়া হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উৎখাত বরদাশত করা হবে না। এক টুইটে ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদাদো বলেন, 'ইন্দোনেশিয়া ইসরাইলের এ ধরনের পদক্ষেপের নিন্দা এবং বারবার আইন লঙ্ঘন করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আহ্বান জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া সব সময় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকবে।'

এদিকে, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদ না জানিয়ে উল্টো সহিংসতা বৃদ্ধির জন্য ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইসরাইলে একঝাঁক রকেট হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি অগ্রহণযোগ্য উসকানি। তিনি বলেন, 'আমরা সব পক্ষ থেকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানাই। তবে ইসরাইলের নিজস্ব জনগণ ও ভূমি রক্ষার বৈধ অধিকারকেও স্বীকৃতি দিচ্ছি। ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিষয়ে প্রশ্ন করলে এ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, উভয় পক্ষের প্রাণহানিই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।'

যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যও সহিংসতার জন্য ফিলিস্তিনিদেরই দায়ী করেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, জেরুজালেমসহ ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ জায়গাগুলোতে হামাসের রকেট হামলার নিন্দা করছে যুক্তরাজ্য।

এছাড়া বিমান হামলায় গাজায় হতাহতের ঘটনার পর সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। অন্যদিকে, পূর্ব জেরুজালেমের সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর থেকে উৎখাত বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে