সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
৯ মাসে ৫০১ জন আক্রান্ত পরামর্শ মানছেন না গেরস্তরা

গাংনীতে আশঙ্কাজনকহারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর বর্ডার পাড়ার হামিদুল। দিন পনের আগে বাজার থেকে একটি গরুর ভুড়ি কিনে আনেন। তার দুই ভাই আনারুল ও আলিমসহ তিনজনে ওই ভুড়ি ভাগ করে নেন। তারপর তা পরিষ্কার করে রান্না করেন স্ত্রী সাহারবানু, মেয়ে মরিয়ম, ভাবি রাহেলা ও চম্পা। এর দু'দিন পরই তাদের হাতে ও মুখে ফোঁড়া এবং পচন দেখা দেয়। স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে তিনি ও তার পরিবারের লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। ডাক্তার জানান, তারা সবাই অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত। শুধু হামিদুলের পরিবার নয়, গোটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গত ৭ মাসে ৪৫২ জন অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্র জানায়, ২০২১ সালে একই এলাকায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের শিকার হয় ৪১৭ জন। তাদের মধ্যে নারী ২২৯ জন এবং পুরুষ ১৮৮ জন। ২০২২ সালে ৫৫০ জন এবং চলতি বছরের গত ৭ মাসে ৪৫২ জন অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু থেকে তা ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে গবাদিপশুকে টিকার আওতায় আনতে পারলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্তরা জানান, মাংস খাওয়ার পরপরই মুখসহ বিভিন্ন অঙ্গে চুলকানি দেখা দেয়। তারপর ফুলে ও পানি ঝরে। পরে তারা জানতে পারেন এটি অ্যানথ্রাক্স রোগ। বাড়ির পাশের লোকজনের গরু-ছাগলের অসুখ হলে তারা গোপন রেখে নিজেরাই জবাই করে স্বল্পমূল্যে মাংস বিক্রি করেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা স্বল্পমূল্যে মাংস কিনে এনে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্থানীয় বামন্দী বাজারের কসাই ও ক্রেতা সাধারণের কাছ থেকে জানা গেছে, গত এক মাসেও কোনো লোক আসেনি গরু ছাগল পরীক্ষা করার জন্য। এজন্য দুয়েকটা অসুস্থ পশু জবাই করে বিক্রির সুযোগ নিতেও পারেন মাংস বিক্রেতারা। তাছাড়া অনেক গেরস্ত ও খামারি অসুস্থ পশু জবাই করে স্থানীয়ভাবে স্বল্পমূল্যে মাংস বিক্রি করেন। ফলে অসুস্থ পশুর মাংস খেয়ে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন অ্যানথ্রাক্স রোগে। গাংনী বাজারের মাংস ব্যবসায়ী সেকেন্দার কসাই জানান, এ বাজার পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে। এখানে কোনো অসুস্থ পশু জবাই করা হয় না। কিন্তু অন্যান্য হাট-বাজারে কোনো তদারকি নেই। ফলে রোগা ও অসুস্থ গরু জবাই করা সহজ। স্থানীয় লোকজনও রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সস্তায় কিনে খায়। ফলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের মেডিকেল অফিসার এমকে রেজা জানান, সম্প্রতি গাংনী পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অ্যানথ্রাক্স রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস কাটা, ছেঁড়া ও খাওয়ার কারণে সবাই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কেউ যাতে রোগাক্রান্ত গরু জবাই করতে না পারে সেজন্য নজরদারি প্রয়োজন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, সবখানেই আ্যানথ্রাক্স জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় আছে। ৪০ বছর পর্যন্ত এর জীবাণু বেঁচে থাকতে পারে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এ জীবাণু সক্রিয় হতে পারে। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ রোগের বিস্তার বেড়েছে। তাছাড়া লোকবলের অভাবে তেমন কোনো তদারকি করা সম্ভব হয় না। তবে যেসব এলাকায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে সেখানে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠক করেও সবাইকে সজাগ করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে