শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আমাদের করণীয়

হাঁচি-কাশির এই শিষ্টাচার কেবল করোনাভাইরাসের সংক্রমণই নয়, বেশির ভাগ ফ্লু (সর্দি-ঠান্ডার কারণ) ছড়ানো ঠেকাতে সক্ষম। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কাশি শিষ্টাচারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
নিগার সুলতানা সুপ্তি
  ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব- অর্থাৎ আশরাফুল মাখলুকাত। মহান আলস্নাহ প্রদত্ত মেধা, মানবিকতা, সৃষ্টিশীলতা মানুষকে এই পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীদের থেকে উন্নত ও পৃথক করেছে। মানুষের কিছু পরিশীলিত আচরণ যা আমরা প্রতিনিয়ত পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিখি- সভ্য সমাজে চলার জন্য যে আচরণগুলো খুবই প্রয়োজনীয় এবং সামাজিক জীবনযাপনকে সহনীয়, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তুলতে ভূমিকা রাখে- সেই আচরণ সমষ্টিকেই বলা হয় শিষ্টাচার। করোনাকাল আমাদের সমাজ জীবনে মানুষের আচরণে বিদ্যমান ত্রম্নটিগুলো নতুন করে চোখের সামনে নিয়ে এসেছে। এই মহামারির সময়ে কীভাবে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায় সে বিষয়ে অনেক আলোচনা চারদিকে হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিং ও স্বাস্থ্যবিধি প্রচারণায় বারবার বলা হচ্ছে, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করতে হয়, একুশ শতকে যখন শিক্ষা, সভ্যতা ও প্রযুক্তির সুবিধা ঘরে ঘরে সে সময়েও কেন মৃতু্যর এই ভয়াল থাবার মুখোমুখি হয়ে আমাদের শিখতে হচ্ছে- 'হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার'?

পৃথিবীজুড়ে এখন এক নতুন আতঙ্কের নাম এই করোনাভাইরাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা। এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো ব্যক্তিগত সচেতনতা। একইসঙ্গে তারা বলছেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জনগণের অংশগ্রহণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যদি সচেতন না হয় তাহলে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। মূলত কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। তাই হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিসু্য বা কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাশি শিষ্টাচারকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। পত্রপত্রিকা, মিডিয়া টক শো সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে এ বিষয় নিয়ে। যদিও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হবেই তার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তবে সবাই আশঙ্কা করছেন, শীতকালে করোনার সংক্রমণ বাড়বে। এর একটি কারণ চীনে যখন করোনা ছড়াতে শুরু করে তখন সেখানে শীতকাল ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে যেসব দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে সেসব দেশও শীতপ্রধান দেশ ছিল। ফলে সবাই বলতে লাগল শীতে করোনা ছড়ায়। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে করোনা ছড়ায় না। ফলে বাংলাদেশে করোনা তেমনভাবে সংক্রমিত হবে না। কিন্তু আমরা পরে গ্রীষ্মপ্রধান দেশসহ নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া রয়েছে এমন দেশেও করোনার সংক্রমিত হয়েছে। তবে এসব কোনো কিছুরই কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।

তবে হঁ্যা, শীতের সময় যেহেতু ঘরের দরজা জানালা বন্ধ থাকে। ঘর থাকে বদ্ধ। বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে। ফলে, করোনাভাইরাস দ্রম্নত ছড়ানোর সম্ভাবনাও বেশি। তাছাড়া শীতের সময় অন্যান্য ভাইরাসের প্রকোপও বাড়ে। আবার শীতকালে ঠান্ডা সমস্যা থাকার কারণে অনেকের হাঁচি-কাশি, গলাব্যথা হয়ে থাকে যেগুলো আবার করোনার উপসর্গের মধ্যেও লক্ষণীয়। শীতকালে যাদের এ রকম সমস্যা রয়েছে তাদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। এসব থেকে ধারণা করা হচ্ছে শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যদি আসেই তখন আমাদের সাবধানতা অবলম্বন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আসলেই কোনো বিকল্প নেই। এখনই রাস্তাঘাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখা যাচ্ছে। গ্রামেগঞ্জে অনেকেই করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু করোনাকে হালকাভাবে নেওয়ার মতো সময় এখনো আসেনি। আমাদের কঠোরভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শীতকালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের যে কথা বলা হচ্ছে, তা আমাদের এই অসচেতনভাবে চলাফেরা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। জনসাধারণকেও এই সংক্রমণ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। হাঁচি-কাশির সমস্যা থাকলে জনসমাগম বা পাবলিক পেস্নসে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেখানে সেখানে কফ/থুথু//পানের পিক ফেলার বদ অভ্যাস পরিহার করতে হবে। অর্থাৎ কাশি শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। মাস্ক, সাবান আর স্যানিটাইজার- এই তিন অস্ত্রেই যেন সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে মহামারি কোভিড-১৯ কে ঘায়েল করার। এর সঙ্গে বলা হচ্ছে শারীরিক দূরত্ব আর হাঁচি-কাশি শিষ্টাচারের কথা। অনেকেই বলছেন, সবচেয়ে বেশি দরকার লাইফ স্টাইল বা জীবনাচরণ পরিবর্তনের। অর্থাৎ হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় হাত, টিসু্য বা রুমাল দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিসু্য ব্যবহার করলে তা সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত স্থানে ফেলতে হবে। আর রুমাল ব্যবহার করলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।

হাঁচি-কাশির এই শিষ্টাচার কেবল করোনাভাইরাসের সংক্রমণই নয়, বেশির ভাগ ফ্লু (সর্দি-ঠান্ডার কারণ) ছড়ানো ঠেকাতে সক্ষম। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কাশি শিষ্টাচারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

নিগার সুলতানা সুপ্তি : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116132 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1