শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন

এ বর্বরতার শেষ কোথায়?
নতুনধারা
  ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা যেমন আমাদের সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে। সামাজিক অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি এবং শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণেই মূলত এমনটি হচ্ছে। রাষ্ট্রের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক, যার কারণে সামাজিক অবক্ষয় এত চরমে পৌঁছেছে।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে চুরি করার অপরাধে আদিবাসী মাকে সন্তানদের সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের মালিরচালা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামের আদিবাসী নারায়ণ বর্মণের স্ত্রী সন্ধ্যা রানীকে (৩৫) গাছে বেঁধে নির্যাতন করে প্রতিবেশী মনিরুল ইসলামসহ পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় রোববার পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর চেয়ে বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা আর কী হতে পারে।

যারা সমাজকে ও রাষ্ট্রকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। চারদিকে যে সামাজিক অবক্ষয় চলছে- এর কি কোনো প্রতিষেধক নেই?

আসলে আমরা আজ যে সমাজে বাস করছি সে সমাজ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, এমনকি যে রাষ্ট্রে বাস করছি সে রাষ্ট্রও নিরাপত্তাদানে অপারগ। আমরা নানা রকম সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। পা পিছলে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি। সমাজের একজন সুস্থ এবং বিবেকবান মানুষ হিসেবে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী তা নিধার্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কি সামাজিক ক্ষেত্রে, কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে- সবক্ষেত্রেই অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছি, যা একজন শান্তিকামী মানুষ হিসেবে আমরা স্বাধীন ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কল্পনা করতে পারছি না। এ অবক্ষয় ইদানীং আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে এবং সমাজ কাঠামোকে নড়বড়ে করে ফেলছে।

সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমত্বাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়। যা বতর্মান সমাজে প্রকট। সামাজিক নিরাপত্তা আজ ভূলুণ্ঠিত, এমনকি ব্যক্তি নিরাপত্তাও প্রশ্নের সম্মুখীন। দেশের সামগ্রিক যে অবক্ষয়ের চিত্র এর থেকে পরিত্রাণের কোনো পথই কি আমাদের খোলা নেই? আমাদের অতীত বিস্মৃতির অতল গহ্বরে নিমজ্জিত, বতর্মান অনিশ্চিত এবং নিরাপত্তাহীনতার দোলাচলে দুলছে এবং ভবিষ্যৎ মনে হচ্ছে যেন পুরোপুরি অন্ধকার।

আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ্য করে আসছি নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো বিপজ্জনক অপরাধমূলক প্রবণতা সমাজে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা প্রতিরোধের প্রয়োজন সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা। এই দায়িত্ব নিতে হবে পরিবার ও সমাজকেই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। সমাজের এক শ্রেণির বর্বর পাষন্ড মানুষের হাতে অনেকের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ছে, অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। এমনকি শিশুর জীবনও চলে যাচ্ছে আপনজনের হাতে। এ সব রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে