সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইসের বড় চালান জব্দ

মাদকের আগ্রাসন রোধে পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মাদক সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে- বিভিন্ন সময়েই পত্রপত্রিকায় এমন খবর প্রকাশিত হয়। এছাড়া মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে- এই বিষয়টিও বহুল আলোচিত। এছাড়া লক্ষণীয়, শুধু শহর নয়, গ্রাম পর্যায়েও ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেডিনসহ নানা নেশাজাতীয় দ্রব্য ছড়িয়ে পড়েছে- এমন বিষয়ও বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে- যা সামগ্রিক অর্থেই উদ্বেগজনক। আর ক্রিস্টাল মেথ বা ভয়ংকর মাদক আইসের বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ঢাকায় ক্রিস্টাল মেথ বা ভয়ংকর মাদক আইসের বড় চালান ধরা পড়েছে। জব্দ হয়েছে প্রায় দুই কেজি আইস। যার বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আইস ব্যবসার অন্যতম হোতা মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ দুই মাদক কারবারিকে। বুধবার দুপুরে ঢাকার গেন্ডারিয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দক্ষিণ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক।

আমরা বলতে চাই, যখন ক্রিস্টাল মেথ বা ভয়ংকর মাদক আইসের বড় চালান ধরা পড়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার কর হয়েছে- তখন এটি আমলে নেওয়া জরুরি। এটা মনে রাখতে হবে, মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এবং এর নেতিবাচক দিকগুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। মাদকের জন্য সমাজ ও পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসা, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে। সঙ্গত কারণেই, আমরা মনে করি, এবারে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং যারাই আইসসহ নানা ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

এবারের ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি বিকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী থানাধীন উত্তর সায়েদাবাদ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সায়েদাবাদের হাজি বোরহান উদ্দিন টাওয়ার সংলগ্ন আলকারিম হাসপাতালের সামনে থেকে জাহাঙ্গীর ও তার সহকারী মো. মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় প্রায় দুই কেজি আইস। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলছেন, গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর টেকনাফে মাদক ব্যবসায় জড়িত একটি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাদকগুলো সংগ্রহ করেছিল। সেগুলো ঢাকায় এনে হস্তান্তর করার কথা ছিল। জাহাঙ্গীর আইস পাচারকারী চক্রের অন্যতম মূল হোতা বলেও জানান। আমরা মনে করি, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করার পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে মাদকের বিস্তার রোধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, নানা শ্রেণি পেশার মানুষ অবলীলায় জড়িয়ে পড়ছে মাদকের সঙ্গে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যেমন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি, তেমনি ধনী-দরিদ্র উভয় পরিবারের কিশোর-কিশোরী, বিশেষ করে তরুণসমাজ বিপথগামী হচ্ছে- এই বিষয়গুলো খবরে উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে- যা সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, মাদক নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগের অভাব পরিলক্ষিত হলে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবাই- যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এছাড়া, 'মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কর্তৃপক্ষ যত কঠোর অবস্থানেই থাকুক না কেন, জনগণ নিজে থেকে মাদক নিরাময়ে পদক্ষেপ না নিলে এ সমস্যা পুরোপুরি কখনোই সমাধান করা সম্ভব নয়'- এমন বিষয়ও এর আগে আলোচনায় এসেছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িদের চিহ্নিত করে যেমন আইনের আওতায় আনতে হবে, তেমনিভাবে মাদকের বিস্তার রোধে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের ঘটনাটি আমলে নেওয়া এবং এর পাশাপাশি সব ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে হবে। মাদকের কারণে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, নষ্ট হয়ে যায় ভবিষ্যৎ, খুন থেকে শুরু করে নানারকম অপরাধপ্রবণতা তৈরি হয়- এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, মাদকের আগ্রাসন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে