সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট নিরসনে সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

তিন দিন বন্ধ থাকার পর রমজানের প্রথম কর্মদিবসে তীব্র যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাড়ির জট লেগেই ছিল। রোজা রেখে যানজটে গাড়িতে বসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অফিসগামী মানুষকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে শহরে যানজটের পরিমাণও বেড়ে যায়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি আটকে থাকে। রাজধানীর বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, বাড্ডা, মহাখালী, হাতিরঝিল, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী ও কালশী এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির চাপও বাড়ছে থাকে।

এটা সত্য, সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় এবং যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন রাজধানীতে যানজটের মাত্রা বেড়েই চলেছে। রাজধানী ও রাজধানীতে প্রবেশের সড়কগুলো দীর্ঘদিন খানাখন্দে পরিণত হলেও এসব সড়ক মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে রাজধানীতে আসা যানবাহনের ধীরগতির কারণে যানজটের সুরাহা হচ্ছে না। যানজটের কারণে প্রতিদিন শত শত কর্মঘণ্টা নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতি হলেও এ ব্যাপারে যেন নজর দেওয়ার কেউ নেই। রাজধানীতে যানজটের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে অনেক দিন থেকেই।

এ পরিস্থিতি থেকে যেন নগরবাসীর মুক্তি নেই। রাজধানী ঢাকার নাগরিকদের সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা ও বিরক্তির কারণ যানজট। একদিকে উন্নয়নের কাজ চলছে, অন্যদিকে রাস্তায় চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এই দুয়ে মিলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাদ দিয়ে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ঢাকার যানজটে। এ ক্ষতি দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের সমান।

ঢাকা শহরে যানজটের কারণে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে মাইনাস ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অতিমাত্রার যানজটের পেছনে অনিয়ন্ত্রিত ছোট ছোট যানকেও দায়ী করা যায়। সড়কের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন আপদ হিসেবে দাঁড়িয়েছে মোটর সাইকেল। ২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানবাহনের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে পিক টাইমে চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। সম্প্রতি এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০-২৯ বছর বয়সি মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সি মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮২ কিলোমিটার। এসব বয়সি মানুষের হাঁটার গড় গতি দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। যেটি বর্তমানে পিক টাইমে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি। এমন পরিস্থিতি সত্যিই দুঃখজনক।

আমরা মনে করি, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে না এলে কোনোভাবেই যানজট নিরসন করা যাবে না। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে, বাড়াতে হবে গণপরিবহণের সংখ্যা। যে সব সড়ক অপ্রশস্ত, সে সব কীভাবে কম সময়ে প্রশস্ত করা যায়, ভাবতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করাই সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে