সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে নির্দেশনা পোশাক কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

নতুনধারা
  ৩০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা কতটা ভয়াবহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে, তখন তা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনার হাত থেকে শ্রমিক-কর্মচারী হতাহতের অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে পোশাক কারখানার মালিকদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি সাতটি নির্দেশনা দিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। গত মঙ্গলবার সংগঠনের সভাপতির স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন সময়ে ভয়ানক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে পোশাক কারখানাও আছে। ভয়াবহ আগুনে ঝরে গেছে তরতাজা প্রাণ। ফলে অগ্নিকান্ডের মতো ভয়ানক দুর্ঘটনা এড়াতে যখন বিজিএমইএ নিদের্শনা দিল, তখন সেটি আশাপ্রদ- যা আমলে নিয়ে নিদের্শনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য যে, বিজিএমইএর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় আবহাওয়ার উষ্ণতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য কারণে বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বৈদু্যতিক গোলযোগ থেকে এ দুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। বিশেষ করে বৈদু্যতিক শর্ট সার্কিট গ্রীষ্ম মৌসুমে অগ্নিদুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

অগ্নিকান্ডের বিষয়ে মালিকদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি সাতটি নির্দেশনা পরিপালনের কথা বলা হয়েছে। যেগুলো হলো, কারখানার সব বৈদু্যতিক তার, ওয়্যারিং এবং অন্যান্য বৈদু্যতিক সরঞ্জামাদি যেমন সাব-স্টেশন, জেনারেটর, মেইন সুইচ বোর্ড, সাব-মেইন সুইচ বোর্ড, ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড, জাংশন বোর্ড ও কারখানায় ব্যবহৃত সব ধরনের বৈদু্যতিক মেশিনারিজ বিষয়ে দক্ষ একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বা কমপক্ষে ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা নিয়মিত পরীক্ষা করানো। বৈদু্যতিক ভোল্টেজ এবং তারসহ সব বৈদু্যতিক যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরিমাপ করা। সব বৈদু্যতিক যন্ত্রসমূহের জন্য ব্যবহৃত লোড অনুযায়ী সঠিক তার ব্যবহার করা। উপযুক্ত আর্থিং সংযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং মাসে অন্তত একবার সব বৈদু্যতিক তারের ইন্সুলেশন পরীক্ষা করা। অবিলম্বে কারখানায় দীর্ঘদিন ব্যবহৃত ক্ষতিগ্রস্ত বৈদু্যতিক যন্ত্রপাতি, ওয়ারিং, সার্কিট ব্রেকার, ভাঙা পস্নাগ ও সকেট, পাওয়ার কার্ড ইত্যাদি পরিবর্তন করা। কারখানার বৈদু্যতিক স্থাপনার ও চ্যানেলসমূহে থাকা ডাস্ট নিয়মিত পরিষ্কার করা। যে কোনো বৈদু্যতিক স্থাপনার কমপক্ষে তিন ফুটের মধ্যে কোনো মালামাল বা দাহ্য পদার্থ না রাখা এবং কারখানার সব বৈদু্যতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সার্টিফিকেটধারী দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান নিযুক্ত রাখা।

আমরা মনে করি, এসব নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নে সুষ্ঠু মনিটরিং নিশ্চিত করা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। একইসঙ্গে এটাও সামনে আসছে যে, বিজিএমইএ মনে করে, কারখানায় বৈদু্যতিক দুর্ঘটনার বিষয়ে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে বৈদু্যতিক বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। পাশাপাশি শ্রমিক কর্মচারী হতাহতের অপ্রত্যাশিত ঘটনাও এড়ানো যাবে। ফলে এই নির্দেশনার বাস্তবায়নে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি কারখানা ও শ্রমিকদের জীবন সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমলে নেওয়া দরকার, বিভিন্ন সময়ে তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদি একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে থাকে তবে তা কতটা ভয়ানক ও আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা বলাই বাহুল্য। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অনেক মানুষ চলে গেছে না ফেরার দেশে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নানা কারণেই বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আর শুধু পোশাক করাখানাই নয়, অন্যান্য কারখানা, বস্তি, শপিংমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও সতর্ক না হওয়ায় অগ্নিদুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে। করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, পোশাক কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিন। অগ্নিকান্ডের মতো ভয়ানক দুর্ঘটনা রোধে সতর্ক থাকতে হবে। এবারে যে নির্দেশনার বিষয়গুলো সামনে এলো তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যে কোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অগ্নিকান্ডের মতো ভয়ানক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে