সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

নতুনধারা
  ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। আর এই জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা দেশের সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নে জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সদ্যসমাপ্ত মার্চে প্রবাসীরা ২০১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন- যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। উলেস্নখ্য, এর আগে সর্বশেষ ২ বিলিয়ন বা দুইশ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল গত বছরের আগস্টে। ওই মাসে আসে ২০৩ কোটি (২.০৩ বিলিয়ন) ডলার।

রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, পুরো মার্চ মাসে বৈধপথে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্সের এই পরিমাণ আগের মাসের চেয়ে ৪৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার বেশি হলেও, এটা আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে সর্বশেষ ২ বিলিয়ন বা দুইশ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল গত বছরের আগস্টে। ফলে রেমিট্যান্সের গতি প্রকৃতি আমলে নিতে হবে। অন্যদিকে, এটাও উলেস্নখ্য, বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির ধীরগতি ও মূল্যস্ফীতির মধ্যেও সর্বশেষ চার মাসে বাংলাদেশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছিল। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত মার্চে তা আর হয়ে ওঠেনি; আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে মোট রপ্তানি আয়। আমরা মনে করি, এই বিষয়টিও আমলে নিতে হবে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বৈদেশিক আয় দেশের অগ্রগতির প্রশ্নে জরুরি। ফলে রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। জানা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত) ৯ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৬৩০ কোটি মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৫২৯ কোটি ডলার। আলোচ্য সময় গত বছরের তুলনায় ৭৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ধারা অব্যাহত রাখতে উদ্যোগী হতে হবে।

আমলে নেওয়া দরকার, সম্প্রতি, প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নতুন দেশে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে। বিদেশে গমনেচ্ছুদের এমন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে- যা একটি দেশের প্রয়োজন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন যে, 'সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি নতুন দেশে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে। আমাদের দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে এবং সে জন্য আমরা কর্মীদের বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। যদি আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে।' আমরা মনে করি, সার্বিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

এটা মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের অথর্নীতি যে কয়টি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্য রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উলেস্নখযোগ্য। ফলে এই খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া এটা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না যে, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি করা যায়। ফলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি দেশকে আরও অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে দক্ষ জনশক্তির বিষয়টি আমলে নিয়েও এ ব্যাপারেও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। মনে রাখা দরকার, দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি যত বেশি বাড়বে, ততই নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হবে। আর এর ফলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, তেমনিভাবে কর্মসংস্থানের প্রশ্নেও তা হবে আশাব্যঞ্জক।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও। এছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে