রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি সংকটে আশার আলো ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র

নতুনধারা
  ২৮ মে ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ যখন জ্বালানি সংকটে হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তে দেশের দ্বীপজেলা ভোলায় জ্বলে উঠেছে আশার আলো। ভোলার ইলিশা-১ কূপটি দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ গ্যাসক্ষেত্রে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

সোমবার রাজধানীর বারিধারার বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মজুত গ্যাসের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। আমদানিকৃত এলএনজির দাম বিবেচনায় ২৬ হাজার কোটি টাকার। ভোলায় সব মিলিয়ে প্রায় তিন টিসিএফ গ্যাস মতুত আছে বলে অনুমান করা হয়। প্রায় ২৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত এই গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এ মুহূর্তে সরকারের হাতে একটি প্রসেস পস্ন্যান্ট রয়েছে। আরও একটি আনার কাজ শুরু হয়েছে। দু-তিন বছরের মধ্যে পাইপলাইনে দেওয়া সম্ভব হবে ভোলার গ্যাস। ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যাবে একটি পাইপলাইন। এ জন্য সমীক্ষার কাজ চলছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে টগবী-১, ভোলা নর্থ-২ ও ইলিশা-২ কূপ খনন করা হয়। এতে প্রতিটি কূপ থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের নয়টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। এগুলো হলো- বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ, সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ভোলা নর্থের দুটি ও সবশেষ ইলিশা ক্ষেত্রের ইলিশা-১ কূপ।

বাপেক্স সূত্র জানায়, শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে ইলিশার দূরত্ব ৩৫-৩৮ কিলোমিটার। আর ভোলা নর্থ থেকে এটি ৬ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। গত ৯ মার্চ ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের মালের হাটসংলগ্ন এলাকায় ইলিশা-১ কূপটির খননকাজ শুরু হয়ে ১৪ এপ্রিল ৩ হাজার ৪৭৫ মিটার গভীরতায় খনন সম্পন্ন হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম বাপেক্সের হয়ে কূপটি খনন করে। ২০ এপ্রিল এর পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়ে ১৬ মে শেষ হয়। কূপটির তিনটি স্তরে তিনটি পৃথক ড্রিল স্টিম টেস্টের (ডিএসটি) মধ্যে সর্বশেষ তৃতীয় টেস্ট গত ১৫ মে সম্পন্ন হয়। এই পরীক্ষায় কূপের ৩ হাজার ২৫০ থেকে ৩ হাজার ২৫৪ মিটার গভীরতায় ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস ফ্লো পাওয়া যায়।

ভোলায় আগে দুটি গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়। ইলিশা নিয়ে এখন গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা দাঁড়াল তিনে। শাহবাজপুর, ভোলা নর্থ ও ইলিশা- ভোলার এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে এখন ২ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন (২ লাখ ২৩ হাজার কোটি) ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে। এগুলো থেকে দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের ৯টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। এগুলো হলো- বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ, সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ভোলা নর্থের দুটি ও সর্বশেষ ইলিশা ক্ষেত্রের ইলিশা-১ কূপ।

সিলেটের পর ভোলাই একমাত্র জেলা যেখানে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ভোলা থেকে প্রায় ২৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাবে। সেখানে আমাদের একটি প্রসেস পস্ন্যান্ট রয়েছে। আরও একটি আনার কাজ শুরু হয়েছে। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে দেওয়া সম্ভব হবে। ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যাবে একটি পাইপলাইন। এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এ ছাড়া সিএনজি আকারে গ্যাস এনে তিতাস গ্যাস কোম্পানির এলাকার শিল্প-কারখানাগুলোতে সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশের স্থলভাগে নতুন করে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। জ্বালানি সংকট থেকে রেহাই পেতে দেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নজর দিতে হবে। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সামর্থ্যের অভাব থাকায় এ বিষয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দর কষাকষির মাধ্যমে চুক্তিতে উপনীত হওয়ার বিষয়টি ভাবা যেতে পারে।

আর কে চৌধুরী

মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে