সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্মুখে ঘটিত অপরাধগুলোর সম্মিলিত প্রতিরোধ জরুরি

নতুনধারা
  ২৮ মে ২০২৩, ০০:০০

একদিকে প্রচুর নীতিবাক্য ছাড়তে পটু, অন্যদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখের সম্মুখে ঘটিত যে কোনো অপরাধের ব্যাপারে টুঁ শব্দটি না করা জাতি হিসেবে বোধহয় আমাদের জুড়িমেলা ভার। আমরা যখনই যে কোনো অন্যায়-অপকর্ম অবলোকন করি, যখন এর বিপরীতে পাঠার বলি হওয়া কেউ ধ্বংসের দারপ্রান্তে উপনীত হয়, তখন আমাদের অধিকাংশের আত্মকেন্দ্রিক মতবাদ পরিলক্ষিত হয়। যেমন- আমি তো ঠিক আছি, আমার সঙ্গে তো কিছু হয়নি, যে ঝামেলায় পড়েছে সে বুঝুক ইত্যাদি। আমাদের দেশের বিশেষ করে শহরাঞ্চলগুলোতে ছিনতাইকারীদের উৎপাতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আর ঢাকা শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনা তো আরও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। অলিগলিগুলো ছিনতাইয়ের জন্য সুবিধাজনক জায়গা হিসেবে বিবেচিত হলেও এর ব্যতিক্রম রূপ বর্তমানে পরিলক্ষিত। বিশ্বরোড কিংবা সর্বদা ব্যস্ত রাস্তার পাশে ঝকঝকে আলোতেও বর্তমানে ছিনতাইকারীর কবল থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া কঠিন। গত ০৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাসে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা দিয়ে যাচ্ছি। বিমানবন্দরের কাছাকাছি এসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ল রাস্তার পাশেই তিন জনের হালকা ধস্তাধস্তি, শুরুতে ভাবছিলাম হয়তো তিন বন্ধু মজা করছে। পরক্ষণেই আলো ঝলমলে রাস্তার পাশে বাকি দুইজনের সঙ্গে থাকা অস্ত্রের দাপটে ছেলেটাকে অসহায় বানিয়ে সব লুটে নেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ল। বাসে আরও দুই-একজন বিষয়টি অবলোকন করার পর ড্রাইভারেরও দৃষ্টিগোচর হয়। ড্রাইভার বাসটি অকস্মাৎ ব্রেক কষে দাঁড় করায় এবং কয়েকজনকে নেমে গিয়ে ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধ করতে বলে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, শুধু একজন মাত্র ব্যক্তি বাসের দরজায় গিয়ে বাস থেকে নামার প্রস্তুতি নিলেও বাকিরা নীরব ভূমিকা পালন করে। নিজের নামার ইচ্ছা থাকা সত্ত্ব্বেও বাকিদের কারও ভ্রূক্ষেপ লক্ষ্য না করায় সম্মুখে আগানোর ভরসা পাইনি। এমন অবস্থায় ছিনতাইকারী দুইজনের মধ্যে একজন তার সঙ্গে থাকা অস্ত্রটি, যা ছিল একটি ছুরি, সেটি উঁচু করে আমাদের বাসটি এগিয়ে নিতে ড্রাইভারকে হুমকি দেয়। কী আশ্চর্য! একটা ভর্তি বাসের এত সংখ্যক মানুষের বিপরীতে তার সাহস সত্যিই অবাক করার মতো। আর আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা মজ্জাগত থাকলে এটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। বাসভর্তি সব মানুষের কাপুরুষতার দরুন সেই ছেলেটি সর্বস্ব হারালো। পরক্ষণেই বাসের কিছু মানুষ অহেতুক চিৎকার করলেও, তার আগেই তারা তাদের লক্ষ্য সফল করে কেটে পড়ে। অনেক বেশি লজ্জিত হয়েছিলাম সেদিন, মনে হয়েছিল এর জন্য আমি দায়ী, আমরা দায়ী, একইসঙ্গে আমাদের সমাজও দায়ী। এভাবেই প্রতিনিয়ত চলছে এরকম ছিনতাইসহ আরও অন্যসব অপকর্ম, যেগুলো হয়তো প্রতিরোধ অনেক সহজভাবেই করা যায় সম্মিলিতভাবে। কিন্তু বিবেকের তাড়না না থাকায় আর সেই প্রতিরোধের উদ্যমের অভাবে তা করা হয়ে ওঠে না। ফলে সাধারণ মানুষের অবাধ চলাফেরায় ভীতির সঞ্চার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা অনেক বেশি পরিমাণে নীতিবাক্য আর অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করার তর্জন-গর্জন করলেও, নিত্য হার মেনেই চলেছি সব অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে। এর একমাত্র কারণ কি এটাই যে এতে নিজের অসুবিধায় পড়ার ঝুঁকি আছে কিংবা একটু হলেও জীবনের ঝুঁকি রয়েছে? একটা স্বাধীন দেশে যদি কেউ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না পারে তবে 'স্বাধীনতা' শব্দটা অনর্থক হিসেবে বিবেচিত হওয়া স্বাভাবিক। যেই স্বাধীনতা এসেছে এক নদী রক্ত পেরিয়ে, প্রয়োজন হলে নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে সেই স্বাধীনতা মজবুতে এগিয়ে আসা দেশপ্রেমের উত্তম বহিঃপ্রকাশ। শুধু কি ছিনতাই? ছিনতাইয়ের সঙ্গে ছিনতাই পরবর্তী হত্যার ঘটনা তো অহরহ। হয়তো আমরা বুঝতে পারি না যে একজন মানুষ একটা সামান্য অস্ত্রের সম্মুখে একাকী কতটা অসহায় হয়ে পড়ে, অনেক সময় জীবনটাও চলে যায়। কিন্তু যেদিন আমরা এটার মুখোমুখি হবো, সেদিনই আমাদের প্রকৃত বোধোদয় হবে। তাই আত্মকেন্দ্রিক সব ভাবনা থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে যেখানেই এসব অন্যায়-অপকর্ম বিরাজ করবে, সেখানেই সর্বজনীন প্রতিরোধের বিকল্প নেই। অন্যথায় ধীরে ধীরে সমাজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে উপনীত হবে। ফলে আগামী প্রজন্মকে একটা সুন্দর-সুশৃঙ্খল সমাজ তথা দেশ উপহার দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। সবাইকে যে কোনো পরিস্থিতিতে এসব অন্যায়-অপরাধ প্রতিরোধে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসা অতীব জরুরি। অন্যথায় আমাদেরও কোনোভাবেই এর দায়ভার এড়ানোর অবকাশ নেই। পাশাপাশি রাতের বেলায় শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো দিয়ে একাকী হেঁটে পথ না চলাই শ্রেয়। ছিনতাইসহ নৈশকালীন ঘটিত সব অপরাধের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি তৎপর হওয়া জরুরি। শহরের অলিগলির পাশাপাশি ব্যস্ততম রাস্তাগুলোর পাশেও আরও ব্যাপক নজরদারি বাড়ানো উচিত।

আবু কায়সার

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে