রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যস্ফীতি

পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ২৯ মে ২০২৩, ০০:০০

দেশে চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমেছে- আর এই হিসাব দেখিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস)। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে যে, এপ্রিল মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর মার্চে এর হার ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কিন্তু এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা মূল্যস্ফীতির এসব তথ্য উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন- এ হারের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাদের ভাষ্য, বাজারে পণ্যমূল্যের যে অবস্থা বিবিএসের তথ্যে তার প্রতিফলন ঘটেনি। এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়াটা দেশের বাস্তবতায় রীতিমতো বিস্ময়কর- এমনটিও উঠে আসছে।

আমরা বলতে চাই, সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। একদিকে বিবিএসের হিসাবে দেশে চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমেছে, অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকরা বলছেন, বাস্তবতার সঙ্গে এ হারের কোনো মিল নেই। ফলে এটি এড়ানো যাবে না। এছাড়া লক্ষণীয়, নিত্যপণ্যের বাজারের বাস্তবতা ও সরকারের নির্ধারিত হিসাবে বিস্তর অমিলের ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, পদ্ধতিগত ত্রম্নটির কারণে বরাবরই এমনটি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নির্ধারণে চালের মূল্য বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখলেও অন্য পণ্যের ব্যাপারে কোনো খেয়াল রাখে না। এতে দেখা যায়, অন্য সব পণ্যের দাম বাড়লেও চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ থাকায় মূল্যস্ফীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না- এই বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে। আর এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, বিবিএস যে হিসাব করে তা গড় মূল্যের ভিত্তিতে। ফলে একটি পণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি আরেকটি পণ্যের দাম কম থাকে। এই গড় মূল্য নির্ধারণের কারণে বিবিএসের হিসাবে বাজারের প্রকৃত চিত্রে প্রতিফলন হয় না। এতে দেখা যায়, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে; কিন্তু মূল্যস্ফীতি ততটা বাড়ছে না।

আমরা বলতে চাই, মূল্যস্ফীতির বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। একইসঙ্গে বাজার পরিস্থিতিও বিশ্লেষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির হার এবং বাজার পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছিল যে, নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। এছাড়া এটিও আলোচনায় এসেছিল, খাদ্যপণ্যের অতিরিক্ত মূল্যের চাপে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। কারণ, খাদ্যপণ্য কিনতেই তাদের মোট আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায়। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।

উলেস্নখ্য, গত ৩ মে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি মার্চের তুলনায় দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে। মার্চে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। যা থেকে কমে এপ্রিলে হয় ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের কাছাকাছি ছিল। মার্চের মতোই এপ্রিলেও এই মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ ছিল বলে বিবিএসের প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, ভোক্তারা বলছেন, সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতি কমলেও বাজারে জিনিসপত্রের দামে কোনো স্বস্তি নেই। বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এমনকি অনেক পণ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না এটাও সামনে আসছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিন। একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তবে সেই পরিস্থিতি শুধু ভোক্তাস্বার্থের হানি ঘটায় না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর আগে এমনও বিষয় আলোচনায় এসেছিল যে, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা যায়নি- যা মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। এখন যখন এটি সামনে আসছে- বাজারে পণ্য মূল্যের যে অবস্থা বিবিএসের তথ্যে তার প্রতিফলন ঘটেনি, তখন তা আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে