সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ে রোধ করতে হবে

নতুনধারা
  ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

বাল্যবিয়ে নির্মূলের ক্ষেত্রে ধীরগতি সবচেয়ে বেশি সাব-সাহারান আফ্রিকায়। ওই অঞ্চলে বাল্যবিয়ের অবসানে ২০০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে। অগ্রগতি সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো প্রতি চারজন তরুণীর মধ্যে একজনের বিয়ে হচ্ছে তার ১৮তম জন্মদিনের আগেই। ইউনিসেফের নতুন এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত এক দশকে বাল্যবিয়ে ধারাবাহিকভাবে কমার পরও সংঘাত, জলবায়ুজনিত অভিঘাত ও কোভিড-১৯-এর বিরূপ প্রভাবসহ একাধিক সংকট এ ক্ষেত্রে কষ্টার্জিত অর্জনগুলো নস্যাৎ করে দেওয়ার হুমকি তৈরি করেছে।

এটা সত্য- বিশ্ব একের পর এক সংকটে জর্জরিত, যা ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের আশা ও স্বপ্নকে চুরমার করে দিচ্ছে, বিশেষ করে মেয়েদের, যাদের বিয়ের কনে হিসেবে নয় বরং শিক্ষার্থী হিসেবে থাকা উচিত। বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত সর্বশেষ বৈশ্বিক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী আজ জীবিত প্রায় ৬৪ কোটি মেয়ে ও নারীর বিয়ে হয়েছে তাদের ছোটবেলায়, প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ের বিয়ে হয় তাদের ছোটবেলায়। ২০১৯ সালের বাংলাদেশ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের তথ্য ব্যবহার করে তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ তরুণীর বিয়ে হয়েছিল তাদের শৈশবে। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের প্রচলন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং বিশ্বের মধ্যে অষ্টম সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৪৫ লাখ নারীর বিয়ে হয়েছে তাদের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে এবং ১ কোটি ৩ লাখ নারীর বিয়ে হয়েছে তাদের বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগে। বাংলাদেশের নানা দিক থেকে অগ্রগতি সত্ত্বেও শিশুবধূর সংখ্যা বিস্ময়কর। লাখ লাখ মেয়ের শৈশব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মেয়েরা যাতে স্কুলে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে এবং তারা যাতে পরিপূর্ণভাবে নিজের মধ্যে থাকা সম্ভাবনা অনুযায়ী বেড়ে উঠতে পারে সে সুযোগ দিতে জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে উদ্বেগজনকহারে। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও বলছে, বাল্যবিয়ের তথ্য নিয়মিতই তাদের কাছে আসছে। আর তা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর বিপরীতে বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতা কমে আসার তথ্য দিয়ে নারী অধিকার কর্মীরা বলেছেন, এ পরিস্থিতি চললে তা উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে।

করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক-সামাজিক সংকটে কন্যাশিশু ও কিশোরীদের বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়ার কারণে বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে বেড়ে গেছে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে যে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে, তা পিছিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে। যা আমাদের জন্য এক অশুভ বার্তা। মনে রাখতে হবে বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। এর ফলে দেশের কন্যাশিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গিয়ে মৃতু্য ডেকে আনে। অনেকেই অত্যাচার-নির্যাতনে মারা যায় কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও কাজীরাও আগে বাল্যবিয়ে বন্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এখন সেটা কমে এসেছে।

আমরা মনে করি, বাল্যবিয়ে রোধে সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেলে জাতীয় উন্নয়নে এর বড় প্রভাব পড়বে। সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াই সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে