সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনজীবন ও জ্বালানি সংকটের প্রভাব

নতুনধারা
  ০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সুবাদে জানা যায় বর্তমান সময়ের সব থেকে আলোচিত সংবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি সংকটের কারণে পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি পুরোপুরি বন্ধ এবং অন্যটি সক্ষমতা অর্ধেক। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুরোটাই বন্ধ থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টাকে সাধারণ মনে হলেও বিষয়টি মোটেও সাধারণ নয়। এই জ্বালানি সংকট দেশের অর্থনীতিতে আনবে ভয়াবহ পরিবর্তন। যার মূল্য দিতে হবে পুরো দেশবাসীকে।

মূলত পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রর বিদু্যৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পিছনে দায়ী কয়লা সংকট। বিবিসির দেওয়া তথ্য মতে, পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রটি চালানোর জন্য দৈনিক ১৩ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয় কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে মজুত আছে মাত্র ৫০ হাজার টন কয়লা। যা কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ডলার সংকটের কারণে কয়লা কিনতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় বিদু্যৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন প্রশ্ন হলো- এটা কি দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলবে? অবশ্যই, এটি দেশের অর্থনীতিতে চরম প্রভাব ফেলবে। একটু চিন্তা করলেই এর কারণটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জানা যায় পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রটি হলো দেশের সব থেকে বড় তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র। যেটি ২৪৮ কোটি ডলার ব্যয়ে ২০২০ সালের মে মাসে চালু করা হয়। দেশের দৈনিক উৎপাদিত ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যতের মধ্যে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হয় এই তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে (সূত্র: বিবিসি)। যা মোট বিদু্যতের অনেকটাই যোগান দেয়। এখন এই বিদু্যৎ কেন্দ্রটি যদি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় তবে দেশের মোট বিদু্যৎ ঘাটতির সঙ্গে আরও ১৩২০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ যুক্ত হবে। উলেস্নখ্য, বর্তমান বাংলাদেশে দৈনিক বিদু্যৎ প্রয়োজন সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু দেশে উৎপাদিত বিদু্যৎ ১২ হাজার মেগাওয়াট। যার কারণে দেশে ইতোমধ্যে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদু্যৎ ঘাটতি রয়েছে। এমন অবস্থায় পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র সম্পূর্ণ বন্ধ হলে এই ঘাটতি পৌঁছাবে দুই হাজারে। যার প্রভাবে দেশে সৃষ্টি হবে অতিমাত্রায় লোডশেডিং। এতে একদিকে যেমন দীর্ঘ লোডশেডিং-এর প্রভাবে ব্যাহত হবে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা অন্যদিকে, ডলার সংকট কমিয়ে কয়লা আমদানির জন্য বাড়বে বিদু্যতের দাম। বিদু্যৎ সংকটের কারণে শিল্পকারখানার উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যেই বস্তু খাতে উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে এবং হুমকির মুখে টেক্সটাইল খাতের ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ (সূত্র : ইত্তেফাক)। এতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা হবে আশঙ্কাজনক। যেখানে দেশে চলছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মহারম। তার ওপর বিদু্যৎ সংকট। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। আর এই দ্রব্যমূল্যের মহা ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাত্রার মান কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থায় পরিণত হবে। এ ছাড়া লোডশেডিং-এর প্রভাবে শহর ও গ্রামের জনজীবন হবে বিপর্যস্ত। এমন অবস্থায় জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখতে কর্তৃপক্ষের উচিত প্রয়োজনীয় জ্বালানি সংরক্ষণ করা এবং আমাদের উচিত বিদু্যৎ ব্যবহারের বিকল্প পথ অবলম্বন করা। যেমন বিদু্যতের বিকল্প হিসেবে আমরা সোলার সিস্টেম ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া বৈদু্যতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে পারি। এতে যে পরিমাণ বিদু্যৎ সাশ্রয় হবে তা বিদু্যৎ ঘাটতি কিছুটা হলেও কমিয়ে দেবে।

এ তো শুধু বিদু্যৎ উৎপাদনে কয়লা সংকটের প্রভাব। তবে জ্বালানি সংকটের মধ্যে দেশে যেমন আছে কয়লা সংকট তেমনি আছে গ্যাস সংকটও। বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পর্কিত সরকারি প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার মতে, দেশে প্রতি বছর গ্যাসের প্রয়োজন এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এই হিসাবে বাংলাদেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু দৈনিক উৎপাদন হয় ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকে যায়। আবার মোট উৎপাদিত গ্যাসের ৪০ শতাংশ যেহেতু ব্যবহার হয় বিদু্যৎ উৎপাদনে (সূত্র : বিবিসি)। যার ফলে অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি ইত্যাদি ক্ষেত্রে গ্যাসের সংকট দেখা দেবে প্রকটভাবে। এর ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম হবে লাগামহীন। জীবনযাত্রার মান হবে বিপর্যস্ত। এমন অবস্থায় প্রশাসনের উচিত প্রয়োজনীয় জ্বালানি গ্যাসের সরবরাহ করা এবং গ্যাস উত্তোলনে অন্য দেশের সাহায্য না নিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা (অন্য দেশের সাহায্যে গ্যাস উত্তোলন করলে তাদের গ্যাস শেয়ার দিতে হয়)। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের উচিত জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখতে জ্বালানি গ্যাসের সংকট কমানোর জন্য বায়োগ্যাস বা জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা। উপরের বিষয়গুলোর ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করলে তবেই জনজীবনের দুর্ভোগ কমবে এবং জীবনযাত্রায় আসবে স্বস্তি, অন্যথায় এই দুর্ভোগ পৌঁছাবে চরম পর্যায়ে।

মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ

শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে