শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সংকট এক ব্যর্থতার খতিয়ান

নতুনধারা
  ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

রোহিঙ্গা সংকটের এক বছরেও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কূটনীতি সাফল্যর মুখ দেখেনি বরং দেখেছে ব্যর্থতার খতিয়ান! বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। এর একটি বড় অংশ এ দেশে প্রবেশ করে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। সেদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা এ দেশে আসতে থাকে। মাত্র এক সপ্তাহে এ দেশে ২৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কিন্তু তার একমাসের ব্যবধানে ৫ লাখে ছাড়িয়ে যায়। লাখ লাখ রোহিঙ্গা যেভাবে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে তাতে তাদের আটকে রাখাও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। রোহিঙ্গা সংকট যে দ্রম্নততার সঙ্গে বিস্তৃত হয়েছিল তা দেখে এ দেশের সরকারও অনেকটা বিস্মিত হয়েছিল। সীমান্তে অবস্থানরত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে এ দেশে আশ্রয় দেবে কী দেবে না তা নিয়েও ছিল সরকারের মনে সংশয়। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর একমাসের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে সংকট সমাধানে ৫টি সুপারিশ তুলে ধরেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের কূটনীতিকদের বড় প্রচেষ্টা ছিল মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করা। সংকট সমাধানের জন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টা করে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্তে আলোচনায় বসেছিল। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। রোহিঙ্গা সংকটের তিনমাসের মধ্যে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরকালের এক সপ্তাহের মধ্যেই মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। তবু নয় মাসেও রোহিঙ্গা সংকটের কোনো অগ্রগতি হয়নি। রোহিঙ্গারা তখন ৮ দফা দাবি তুলেছিল প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসেবে। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়িঘর, হারানো জমি-জমা ফিরে পাওয়ার মতো শর্তগুলো নিয়ে তখন বিক্ষোভ করেছিল 'আরাকান রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইট অ্যান্ড পিস সোসাইটি' নামের একটি সংগঠন। এবছর আবারও প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য তারিখ মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রকাশের পর বাংলাদেশের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বিবিসিকে জানিয়েছেন তারাও প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর কাজ করছেন। অর্থাৎ ২২ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গার নাম প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচিত করে বাংলাদেশকে একটি তালিকা পাঠিয়েছেন। তালিকা পাওয়ার পর এসব রোহিঙ্গাদের মতামত যাচাই করার জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে অনুরোধ করে এবং সংস্থার কর্মীরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন বলে জানা যায়। কিন্তু প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচিত জায়গা এবং যেখান থেকে বিদায় দেওয়া হবে সেসব জায়গাগুলোতে অবকাঠামোগত প্রস্তুতি আগেই নেওয়া শুরু হয়েছে বলে প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার নিশ্চিত করেছেন। এদিকে রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন প্রত্যাবাসনের জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট নীতি ও দাবি আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন না করলে প্রত্যাবাসনে কেউ রাজি হবেন না। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সমঝোতা চুক্তিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে তারা প্রত্যাবাসিত হবেন নিজগ্রামে, সম্ভব হলে নিজগৃহে, কিংবা কোনো কারণে যদি তা নাও হয় তবে এমন কোনো স্থানে তাদের নেওয়া হবে যে তা তাদের গ্রামের নিকটবর্তী। কিন্তু মিয়ানমার শুধু মোটাদাগে দুটি অভ্যর্থনা ক্যাম্প এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করেছে। অন্যদিকে প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি সিঙ্গাপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন মিয়ানমার শরণার্থীদের নিতে প্রস্তুত, তাদের জন্য জায়গাও ঠিক করা হয়েছে, কিন্তু তাদের পাঠানোর দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের। অং সান সু চির এমন বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য বিস্ময়কর, হতাশাজনক এবং দুর্ভাগ্যজনকও বটে! নভেম্বরে সই হওয়া চুক্তি ১০ মাসে এসেও যখন বাস্তবায়ন হয়নি, তারপরও অং সান সু চির দায়হীন বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য চরম আশঙ্কাজনক! এখন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে চরম সংকটে আছে বাংলাদেশ! এদিকে প্রত্যাবাসনের জন্য ৫টি দাবি সংবলিত একটি লিফলেট গত দুদিন ধরে ক্যাম্পগুলোতে প্রচার করছে 'ভয়েস অব রোহিঙ্গা' নামের একটি সংগঠন। রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশেই নয়- দেশের বাইরেও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে ভয়ঙ্করভাবে। বরিশাল সফরে এসে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারসন ডিকসন বলেছেন রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশে নয়- সারা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য এটি হুমকিস্বরূপ।বিশ্বে অনেক সমস্যা আছে তবে রোহিঙ্গা সংকট একটি অন্যতম সমস্যা। রবার্ট চ্যাটারসন ডিকসন বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও আলোচনা করা হয়েছে। এখন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বিশ্বের সব দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। তা ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে! ক্রমবর্ধমান স্থানসংকট ও পরিবেশগত অবক্ষয়ের ফলে সেই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘ কতটুকু কার্যকর ভূমিকা নেবেন তার জন্য অপেক্ষা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর। রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজন এখনো যারা মিয়ানমারে আছেন তাদের ও রোহিঙ্গাদের ভাষ্যমতে 'মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিলেও তাদের তাদের জমিজমা, ঘরবাড়ি ফিরিয়ে দেবে না, তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাখা হবে'। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতেও রাজি নন। তারা মর্যাদার সঙ্গে সব অধিকার ফিরে পেতে চায়। রোহিঙ্গারা যাতে সব অধিকার নিয়ে নিজের দেশে ফিরে যেতে পারেন এ কামনা বাংলাদেশসহ সব দেশের। আর রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তাদের এ নিশ্চয়তা মিয়ানমারকেই দিতে হবে।

\হ

মাহফুজা অনন্যা

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<82914 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1