শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানি জঙ্গিদের কৌশল অবলম্বন

১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমনভাবে এরা বিরোধিতা করেছে, ঠিক একই কায়দায় এদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর জন্য মেতে উঠেছে। সম্প্রতি পুনরায় কাদিয়ানি ইসু্য সামনে এনে এরা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
আবু আফিয়া আহমদ
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা যায় বাংলাদেশের খতমে নবুওয়ত সংগঠনের নেতা মুফতি মুহাম্মদ শুয়ায়েব স্পষ্টভাবে স্বীকার করলেন যে, তিনি পাকিস্তানের মুলতানে মাওলানা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি প্রতিষ্ঠিত খতমে নবুয়ত সংগঠনের অবিকল (তার ভাষায় 'ফটোকপি') সংগঠন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এবার আমাদেরকে খতিয়ে দেখতে হবে মাওলানা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটির পরিচয় এবং তার উদ্দেশ্য কী ছিল? মাওলানা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তা থেকে দেখা যায়, তিনি ছিলেন পাকিস্তানি একজন জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোকারী নেতা। মঞ্জুর চিনিউটি সম্বন্ধে পাকিস্তানি পত্রিকার মন্তব্য : 'মিথ্যার ওপরই তার মিশন, ধোঁকা তার পেশা, খতমে নবুওয়তের নামে চাঁদা আদায় করে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে' (দৈনিক হায়দার ১/১১/৮৮)। উলেস্নখ্য, চিনিউটবাসীরা মঞ্জুর চিনিউটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। (ইমরুজ ৭/৭/৮৯)। বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর প্রচেষ্টারত পাকিস্তানের কুখ্যাত এই জঙ্গি মৌলবাদী নেতা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সফর করে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দৈনিক ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, সংবাদ ইত্যাদি পত্রিকায় তার সাক্ষ্য হয়ে আছে। জামায়াতে ইসলামির মৌলবাদীদের দ্বারা প্রফেসর হুমায়ুন আজাদ যখন আক্রমণের শিকার হন এর পরপরই মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি আবার গোপনে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি ঢাকায় এসেই খতিব উবায়দুল হক, মুফতি আমিনী ও শায়খুল হাদীস এবং জামায়াতে ইসলামি গংদের সাথে বিভিন্ন স্থানে গোপনে বৈঠকও করেছেন। যদিও এই জঙ্গি নেতা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তার পরেও এদেশে এসে তার কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। তার সম্পর্কে সে সময়ে দেশের পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে।

মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি যে একজন জঙ্গি নেতা ছিলেন তা খোদ পাকিস্তানেরই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা তার সাক্ষ্য। পাকিস্তানের একটি দৈনিকে বলা হয়, 'মঞ্জুর চিনিউটি নিজ এলাকায় ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার বিষ তৈরি করে পরিবেশকে দূষিত করেছে' (দৈনিক মসাওয়াত, ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৮)। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে উলেস্নখ ছিল, 'মাওলানা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি ধর্মের নামে মানুষকে প্রতারণা করেছে, সে একজন ফতোয়াবাজ হিসেবে চিহ্নিত' (দৈনিক দিনকাল, ১ এপ্রিল ১৯৯৪)। কুখ্যাত এই জঙ্গি নেতার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বিবিসিতে প্রচারিত উর্দু সংবাদে বলা হয় ৪৫০ জন ধর্মীয় নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা। পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার মহররম মাসে ৪৫০ জন বিভিন্ন ধর্মীয় নেতার ওপর বিভিন্ন স্থানে সফরের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হলো, তারা যেন এমন বক্তৃতা না করতে পারে যার দ্বারা শান্তি শৃঙ্খলা ও জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এই নেতাদের মধ্যে মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি অন্যতম। এ বিষয়ে পাকিস্তানের দৈনিক জং পত্রিকায় উলেস্নখ করা হয় যে, 'হাফেযাবাদ জেলার মুহাররামুল হারামে ৩৩ জন আলেম ও যাকেরিনদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা। মহররম মাসে শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের ৩৩ জন আলেম ও যাকেরিনদের ওপর হাফেযাবাদ জেলায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আলেমদের মধ্যে রয়েছেন মিলস্নাতে ইসলামিয়া পাকিস্তানের সভাপতি আলস্নামা আলি শের হায়দারি (সিন্ধু), কেন্দ্রীয় সভাপতি আলস্নামা মুহাম্মদ আহমদ লুধিয়ানভি, মৌলানা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি (সাবেক এমপি চিনিউট) প্রমুখ' (দৈনিক জং, ৮ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৪)

তার বিষয়ে ইসলামি বিপস্নবী জোটের বিবৃতি হলো- 'মাওলানা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের মোহে আক্রান্ত' (দৈনিক জং, লাহোর, ৬ জুন ১৯৮৬)। জঙ্গি নেতা চিনিউটি সম্পর্কে আহরারি মসজিদের খতিব মাওলানা আলস্নাহ ইয়ার আরশাদ এবং কারি মুহাম্মদ আমিন গওহর প্রাদেশিক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী চিনিউটে একটি নির্বাচনী সভায় বক্তৃতাকালে বলেন যে, মাওলানা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি খতমে নবুওয়তের নাম বিক্রি করে জনগণের কাছে ভোট লাভ করেন এবং পাঞ্জাব অ্যাসেম্বিলিতে গিয়ে যে দুঃখজনক ভূমিকা পালন করেন তা গোটা মুসলমান জাতির জন্য অপমানজনক। তিনি বলেন, এই ব্যক্তি ধর্মের নামে মানুষকে ধোঁকা দেয়, ফতোয়াবাজি তার একমাত্র উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, জাতির সাথে এই ধোঁকাবাজি আমরা কখনো চলতে দিতে পারি না। মাওলানা আলস্নাহ ইয়ার আরশাদ বলেন, মিথ্যা তার জীবনের মূল লক্ষ্য, ধোঁকা দেয়া তার পেশা এবং প্রাদেশিক সংসদে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে খতমে নবুওয়তের অনুসারীদের মাথা হেট করেছে। তিনি আরও বলেন, খতমে নবুওয়তের নাম ভাঙিয়ে তিনি (মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি) জাতির কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে ব্যক্তিগত ধনসম্পদ এবং জমিদারি ক্রয় করেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় মাওলানা চিনিউটিকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক ফতোয়াবাজি বন্ধ কর, নইলে তোমার সব কার্যকলাপ এবং তোমার অংশীদার জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে' (দৈনিক হায়দার, রাওয়ালপিন্ডি, ১ নভেম্বর ১৯৮৮)।

পাকিস্তান থেকে যেভাবে নিয়মিত জঙ্গি মৌলবাদী নেতারা এদেশে এসে তথাকথিত জিহাদি বক্তৃতা মাঠ গরম করত, ঠিক তেমনি এদেশের জামায়াতে ইসলামির নেতারা পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে আসত। যেমন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সালের দি ডেইলি পাকিস্তান, লাহোর পত্রিকার একটি খবর ছিল- মজলিসে তাহাফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের আমির মাওলানা উবায়দুল হক করাচি পৌঁছে গেছেন। তিনি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক খতমে নবওয়ত সম্মেলনের প্রস্তুতি বিষয়ে নেতৃবর্গের সাথে পরামর্শ করেন। এছাড়া নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানি মৌলবিরা বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন মাদ্রাসায় 'খতমে নবুওয়ত প্রশিক্ষণ কোর্স' পরিচালনা করত, যার বিজ্ঞাপন তৎকালীন পত্রিকায় বিদ্যমান। যেমন 'জামেয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদের উদ্যোগে ১০ দিনব্যাপী খতমে নবুওয়ত প্রশিক্ষণ কোর্স' শিরোনামে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। এতে উলেস্নখ করা হয়- ''আগামী ১ জানুয়ারি '৯৪ থেকে আরম্ভ। স্থান : জামেয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ, মিরপুর, ঢাকা। প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন : কাদিয়ানিদের আস্তানা 'রাবওয়া' বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুনাজেরে ইসলাম আলস্নামা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি" (দৈনিক ইনকিলাব, ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৩)।

আসলে এদেশকে তারা পুনরায় পাকিস্তানের রূপে দেখতে চান। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও কম হয়নি। ২০ জানুয়ারি ১৯৯৪ সালে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়- 'মৌলবাদীরা একটা ইসু্য চাচ্ছিল- রক্তপাত ঘটাবার, নৈরাজ্য সৃষ্টির, সংঘর্ষ বাধাবার মতো ইসু্য। ঠিক যেমনটি করেছিল তাদের গুরু মওদূদি। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে কাদিয়ানি-অকাদিয়ানি দাঙ্গা বাধিয়ে হাজার হাজার নরনারী, শিশু-বৃদ্ধের প্রাণহানি ঘটিয়ে। এখানে তারা ব্যাপারটা ঘটাতে চাচ্ছে হাক্কানি আলেম বলে পরিচিত কিছু ব্যক্তিকে সামনে রেখে, যারা সচেতন বা অসচেতনভাবে এতে শামিল হয়েছেন। এ কাজে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য নিয়ে আসা হয় কয়েকজন পাকিস্তানি আলেম নামধারী ব্যক্তিকে। এদেরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত সভা সমাবেশে। এদের মধ্যে মশহুর একজন হলেন মাওলানা মঞ্জর আহমদ চিনিউটি। একটি জাতীয় দৈনিকে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখলাম, চিনিউটি সাহেব এখন এদেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তার চিনিহীন রসনা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও উসকানির বিষ ছড়াচ্ছে। উক্ত প্রতিবেদনে আরও দেখলাম, চিনিউটি সাহেব পাকিস্তানে একজন অর্থবাজ আর 'দাঙ্গাবাজ' মাওলানা হিসেবে চিহ্নিত। লাহোরের দৈনিক 'আকাক' পত্রিকার সম্পাদক শওকত হোসেন শওকত সম্প্রতি তার সম্পর্কে লিখেছেন, 'মঞ্জুর অত্যন্ত স্বার্থপর, মিথ্যাবাদী ও বস্ন্যাকমেলার মাওলানা। তার সাতটি পাজেরো গাড়ি রয়েছে। ব্যাংকে আছে কোটি কোটি টাকা। পাজেরো গাড়ি পাকিস্তানে সাধারণত মাদকদ্রব্য পাচারকারী ও গুন্ডাদের অন্যতম বাহন। মঞ্জুর চিনিউটি জেনারেল মরহুম জিয়াউল হকের একজন সমর্থক।' অধমের প্রশ্ন হচ্ছে, এই চিনিউটি সাহেবদের মতো রত্নদের এ দেশী ধর্মপ্রাণ সরল মানুষদেরকে হেদায়াত করার জন্য যারা নিয়ে এসেছেন তারা কোন রত্ন, কী ধরনের রত্ন? কেমন করে এরা অবাধে ঘুরে ঘুরে এদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন। বায়তুল মোকাররমের খতিব সাহেবের এক ভক্ত মাওলানা সেদিন বললেন, পাকিস্তানি ভূত ছাড়াতে পাকিস্তানি ওঝা এসেছে, এতে দোষ কী? পাকিস্তানি ভূত বলতে তিনি কাদিয়ানিদের বুঝিয়েছেন। কিন্তু ওঝা হিসেবে যাদের আনা হলো আমার তো তাদেরকেই মনে হচ্ছে আরও বড় ভূত। প্রমাণ চিনিউটি সাহেব নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, '৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা ইসলামের স্বার্থেই বাংলাদেশে লড়াই করেছে। এ ধরনের উক্তি যিনি করতে পারেন তার ইসলাম কোন ইসলাম এবং তিনি কেমন মুসলমান তা বুঝতে কারও অসুবিধা হবার কথা নয়। এরা ইয়াজিদের মতো, সিমারের মতো মুসলমান (দৈনিক জনকণ্ঠ, ২০ জানুয়ারি ১৯৯৪)।

এই খতমে নবুওয়তিদের পূর্বসূরিরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে 'ঢাকা পরাজয় দিবস' হিসেবে উদযাপন করে থাকে। যেমন এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় যে, 'পাকিস্তান তাহাফফুজের ঢাকা পরাজয় দিবস পালন। পাকিস্তানভিত্তিক আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত সংগঠন ১৬ ডিসেম্বরকে 'ঢাকা পরাজয় দিবস' হিসেবে পালন করেছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। গত ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের উর্দু দৈনিক জং পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, তাহরিকে খতমে নবুওয়ত (আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত) ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে ঢাকা পরাজয় দিবস পালন করবে। এজন্য বিভিন্ন শহরে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, ''উগ্র সাম্প্রদায়িক তৎপরতার জন্য তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত নামের সংগঠনটি পরিচিতি অর্জন করে। বাংলাদেশেও এরা তৎপর রয়েছে। এ রকম একটি ধর্মীয় সংগঠন ১৬ ডিসেম্বরকে 'ঢাকা পরাজয় দিবস' হিসাবে পালনের কর্মসূচি নেয়ায় রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পাকিস্তানের এই উগ্র ধর্মীয় সংগঠনটি যে এখনও মেনে নেয়নি 'ঢাকা পরাজয় দিবস' পালন তারই প্রমাণ বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে" (দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৪)।

১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমনভাবে এরা বিরোধিতা করেছে, ঠিক একই কায়দায় এদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর জন্য মেতে উঠেছে। সম্প্রতি পুনরায় কাদিয়ানি ইসু্য সামনে এনে এরা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

\হআসলে আহমদিয়া বা কাদিয়ানিবিরোধী খতমে নবুওয়ত আন্দোলন মূলত একটি পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি-মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্যই এরা এই অপচেষ্টায় লিপ্ত। এছাড়া বাংলাদেশের খতমে নবুওয়ত সংগঠন যেহেতু পাকিস্তানি জঙ্গিদের ফটোকপি তাই পাকিস্তানি জঙ্গিদের কৌশলই এরা অবলম্বন করছে। মূলত এরা এদেশের জনগণের আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আধুনিকতার সব চেতনা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সব আদর্শ ও মূল্যবোধ, সব অর্জন, অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা সবই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য। তারা গিলে ফেলতে চান পবিত্র শহীদ মিনার, গুঁড়িয়ে দিতে চান মহান বিজয় স্তম্ভ, নিভিয়ে দিতে চান শিখা অনির্বাণ। তারা ছিঁড়ে ফেলতে চান আমাদের গর্বের ধন জাতীয় পতাকা, বন্ধ করে দিতে চান কোটি কোটি জননন্দিত মহান জাতীয় সঙ্গীত। তারা যে কোনো উপায়ে, যে কোনো উছিলায়, যে কোনো সুযোগে চান দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে। মানুষকে বিভক্ত করতে। সংঘাত বাধাতে, দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় অন্তত কয়েক যুগ পিছনে, সাধের পাকিস্তানি আমলে, মোলস্নাতন্ত্র-ফতোয়াতন্ত্র আর ইসলামের নামে রাজনৈতিক ধোঁকাবাজির হুকুমতে। সরকারের কাছে সচেতন মহলের আবেদন থাকবে যত দ্রত সম্ভব এদেশে তথাকথিত খতমে নবুওয়ত নামে পাকিস্তানপন্থি ইসলামি সংগঠনগুলোর সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। এদের বিরুদ্ধে সরকারকে যেমন আরো কঠোর হতে হবে, তেমনি সমগ্র দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

আবু আফিয়া আহমদ: কলাম লেখক

ধনঁ.ধভরধ২০১৬@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<87894 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1