শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে-বাইরে সংকটপূর্ণ ভবিষ্যতের মুখে সৌদি যুবরাজ

নতুনধারা
  ১৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

২০১৭ সালে নাটকীয়ভাবে তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করেন সৌদি বাদশা সালমান। একই বছরের নভেম্বরে ২০০ জন প্রিন্স, ব্যবসায়ী এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ লোককে গ্রেফতার করা হয়। দুর্নীতিবিরোধী অভিযোগ দাবি করে আটকদের বলা হলো মুক্তি পেতে হলে তাদের শত শত কোটি রিয়ালের 'দুর্নীতিলব্ধ' অর্থ রাজকোষে দিতে হবে। বিশ্লেষকদের দাবি এটা ছিল মূলত নতুন যুবরাজকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে রাজপরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা।

ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমা মিডিয়া যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে এমবিএস উপাধি দিয়ে আধুনিক মনস্ক ও সংস্কারক তরুণ হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু দেশে ও বিদেশে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড ও কূটনৈতিক অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে এই উচ্চ বিলাসী তরুণ যুবরাজ। ২০১৮ সালে সৌদি আরবের ইস্তান্বুল দূতাবাসে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা সাংবাদিক জামাল খাসোগী হত্যাকান্ড ঘটে। এই হত্যাকান্ড যুবরাজ সালমানের নির্দেশে হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। ফলে মার্কিন সিনেটসহ পুরা বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে যুবরাজ ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে সৌদি আরব সফরে যান লেবাননের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। সেখানে তাকে চাপ দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় একটা সমঝোতা হলেও এই ঘটনা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে নিন্দা হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের কথা বলে ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে অভিযান পরিচালনা করছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। এই যুদ্ধে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই সৌদি জোটের জেতার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং হুতি বিদ্রোহীদের দ্বারা সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় তেল স্থাপনায় এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা হয়। ফলে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিন সালমান বা এমবিএসের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ রাজপরিবারে।

আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে সবচেয়ে উত্তেজনাকর সম্পর্ক যাচ্ছে সৌদি আরবের। এরই মধ্যে ২০১৭ সালের জুন মাসে সৌদি আরবসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং দেশটির ওপর কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ করে। একই বছরে রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব- ইসলামিক-মার্কিন সম্মেলনে প্রায় সব মুসলিম দেশকে দাওয়াত দেওয়া হলেও ডাকা হয়নি তুরস্ককে। ফলে কাতার সংকটের সময় তুরস্ক ও ইরান দৃঢ়ভাবে কাতারের পাশে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিনের মিত্র ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দেশ কাতার চলে গেল যায় শত্রম্ন বস্নকে। সিরিয়ায়ও ধরাশায়ী সৌদি বস্নক। এমবিএসের ভারসাম্যহীন কূটনীতির কারণে শত্রম্নদের মধ্যে একটি সৌদিবিরোধী ঐক্যও গড়ে ওঠে। চলমান ইয়েমেন যুদ্ধের কারণে সৌদি সীমান্তেই এখন শত্রম্নর বসবাস। কুয়ালালামপুর সাম্মিটের মাধ্যমে সৌদিবিরোধী মুসলিম দেশের ঐক্যের একটি পস্নাটফরম দাঁড়িয়ে গেছে। যার নেতৃত্বে রয়েছে তুরস্ক-ইরান-কাতার।

তবে আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ও সৌদি যুবরাজ মার্কিন ও ইসরাইল বস্নকের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করেছে। মূলত সৌদি ও আরব আমিরাতের অর্থায়নে ও ইসরাইলি পরিকল্পনায় মিশরে সরকার পরিবর্তন করা হয়। সুন্নি মুসলিম বিশ্বে যখন সৌদি আরবের একক নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে তখন ফের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের গুঞ্জন উঠেছে সৌদি রাজপরিবারে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, কথিত এক অভু্যত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত শুক্রবার বাদশা সালমানের ছোটভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ, সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে আটক করে সৌদি আরব। সৌদি রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান যুবরাজের পাশাপাশি পরবর্তী বাদশাহ হিসাবে বিকল্প হতে পারতেন নতুন আটক দুজনই। সাবেক যুবরাজ ও বিন সালমানের হাতে অপসারিত বিন নায়েফ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সৌদি আরবে আল কায়েদাকে পরাজিত করে বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন দেশ-বিদেশে।

সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক বাদশাহ কিং আব্দুল আজিজের ওরসজাত সন্তান প্রিন্স আহমেদ। আব্দুল আজিজের স্ত্রী হুসসা বিনতে আহমেদ আল-সুদাইরির সাত সন্তান ক্ষমতাধারী সুদাইরি সেভেন নামে পরিচিত। যার মধ্যে জীবিত আছেন সৌদির বর্তমান শাসক বাদশাহ সালমান ও আরেকজন হচ্ছেন ভাই প্রিন্স আহমেদ। ফলে আহমেদকে দেখা হয় ক্ষমতার পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে। কিন্তু ইয়েমেনে সৌদি জোটের হামলা, পরাজয় ও মানবিক সংকটের জন্য বর্তমান বাদশাহ ও যুবরাজ এমবিএস এবং রাষ্ট্রের আরও কিছু কর্মকর্তাদের দায়ী করেন প্রিন্স আহমেদ। গত শুক্রবার বাদশাহর বিশেষ তলবের কথা বলে গ্রেপ্তার হয় বাদশাহর একমাত্র জীবিত এই আপন ভাই।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের প্রতিবেদনে দাবি করছে আগামী নভেম্বরে আগে বাদশাহ সালমান জীবিত থাকতেই বাদশাহর দায়িত্ব পেতে চান সালমান। সে লক্ষ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী এই দুই প্রিন্সকে ধরপাকড়। তবে এভাবে বারবার ধরপাকড় করে নিজেকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছেন তরুণ এই যুবরাজ। করোনাভাইরাসের কারণে ১৯৯১ সালের পর তেলের দাম সবচেয়ে সর্বনিম্ন। কোনোভাবে সামনের মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায় এলে এমবিএসের ভবিষ্যৎ শঙ্কায় পড়বে। কারণ খাসোগী হত্যাকান্ড ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার অভিযোগে ডেমোক্রেট শিবিরের তীব্র সমালোচনা রয়েছে সৌদি যুবরাজের। ফলে ঘরে-বাইরে একটি সংকটপূর্ণ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে যুবরাজ বিন সালমানের জন্য।

শাহাদাত হোসাইন

গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<92586 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1