শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
এ উদ্যোগ সময়োপযোগী

দিনে এক হাজার নমুনা পরীক্ষা

নতুনধারা
  ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃতু্যর ঘটনায় বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক বাড়ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রতিদিনই প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরছে। তবে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও শনাক্তের সংখ্যা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন ও কৌতূহলের পর এবার সরাসরি করোনাভাইরাসের পরীক্ষা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আইইডিসিআরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি উপজেলা থেকে অন্তত দুটো করে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানাচ্ছে, একদিনে এক হাজার নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং সেগুলো শুক্রবারের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে। এতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে আসছিল, তা কখনোই ২০০ অতিক্রম করেনি। ফলে প্রতিদিন এক হাজার নমুনা পরীক্ষার এই উদ্যোগ ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগ এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা কিট, চিকিৎসকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় ল্যাব না থাকায় নমুন পরীক্ষায় সংকট দেখা দেয়। কিন্তু সরকারের দ্রম্নত উদ্যোগের কারণে এ সমস্যা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। আগে শুধু আইইডিসিআর নমুনা পরীক্ষা করলেও এখন ঢাকায় ছয়টি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা হচ্ছে এবং ঢাকার বাইরে চারটি প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে পরীক্ষা করা শুরু করেছে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। সুরক্ষাসামগ্রী দেয়া হয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। ফলে করোনাভাইরাসের উপসর্গ যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে তাদের নমুনা পরীক্ষার এ উদ্যোগ করোনা সংক্রমণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই প্রতীয়মান হয়।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় মার্চ মাসের ৮ তারিখ। সেদিন থেকে নানা উপায়ে পরীক্ষার কথা বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর। কিন্তু উপকরণ সংকটের কারণেই যে নমুনা পরীক্ষা বিলম্বিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গের যে তালিকা তৈরি করেছে, যেটাকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার একটা মানদন্ড হিসেবে ধরে উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে বলে জানা গেছে। আমরা মনে করি, বিদেশ থেকে এসে যারা লাপাত্তা হয়েছেন তাদের খুঁজে বের করা, উপসর্গ থাকলে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও নমুনা সংগ্রহ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন, কারও নমুনা 'পজিটিভ' হলে তাকে দ্রম্নততার সঙ্গে পৃথক করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জানা যায়, এতদিন শুধু বিদেশ থেকে কেউ এলে বা তার সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদেরই পরীক্ষা করা হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসের এক তারিখ থেকে মার্চের ২২ তারিখ পর্যন্ত যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের তালিকা অনুযায়ী আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদের শনাক্ত করা অপরিহার্য। এখন যখন আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশঙ্কা করছে কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে, তখন এই নমুনা সংগ্রহ বিস্তীর্ণ করেও উপায় নেই। জানা গেছে, এখন শুষ্ক কাশি, ঠান্ডা জ্বর বা গলাব্যথা হলেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে, এর সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট থাকে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তি গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। করোনাভাইরাস সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই পদক্ষেপ জারি থাকবে বলেই আমরা মনে করি।

সর্বোপরি বলতে চাই, নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কার্যক্রমও অব্যাহত রাখতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষ যারা খাদ্যাভাবে পড়ছে তাদের প্রতিও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিকালে যারা জরুরি পরিসেবার আওতায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখা দরকার। আমরা জানি, সরকারের এ সংক্রান্ত কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। যখন এটাও জানা যাচ্ছে, করোনা মোকাবিলায় প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে সমন্বয়হীনতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখন এ বিষয়টিকেও গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95146 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1