শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মহাসংকটে মধ্যবিত্তরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

নতুনধারা
  ২৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

ঘরে খাবার নেই, চক্ষুলজ্জায় হাতও পাততে পারছেন না। অন্যদিকে ভাড়া পরিশোধের জন্য বাড়ির মালিকের চাপ ও জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের। এমন খবর যখন সামনে আসছে, তখন তার ভয়াবহতা কীরূপ বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। কার্যত পৃথিবীর মানুষ হয়ে পড়েছে বন্দি। এমন অবস্থায় দেশেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে হুহু করে। ফলে মধ্যবিত্তের সংকটও আলোচনায় আসছে। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের অনেকে বেতন পাচ্ছেন না। সঞ্চিত অর্থ শেষের পথে, আছেন চাকরি হারানোর শঙ্কায়। এছাড়া সরকারের কোনো প্রণোদনার মধ্যেও নেই তারা। ফলে চলমান লকডাউনের মধ্যে মহাসংকটে পড়েছেন বাংলাদেশে গৃহবন্দি কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব পরিবারের অনেকেই এখন নিম্নবিত্তের স্তরে নেমে আসছেন।

আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের তথা সরকারের ভাবনার অবকাশ রাখে। আমলে নেওয়া সমীচীন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একজন ফেলো বলেছেন, 'বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের চার কোটি পরিবার আছে। এর মধ্যে নিম্নবিত্ত ২০ ভাগ আর উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ। মাঝের যে ৬০ ভাগ তারা নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্ত। এই সংখ্যা আড়াই কোটি পরিবার হবে। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী, মাল্টিন্যাশনাল ও বড় কোম্পানিতে কাজ করা কিছু মানুষ বাদে অন্যরা সবাই সংকটে আছেন। এদের মধ্য বড় একটা অংশ চাকরি-ঝুঁকিতে আছেন। অনেকেরই বেতন হয়নি, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে তারা বেতন তো পাননি, উল্টো চাকরি-ঝুঁঁকিতে আছেন। এসব মানুষ সরকারি কোনো কর্মসূচির মধ্যেও নেই।' আমরা মনে করি বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। যদিও সরকার এসএমই ঋণ দিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে এই সংখ্যাও খুব বেশি নয়। বিপুল জনগোষ্ঠী এখনো সহায়তার বাইরে এমনটিও জানা গেছে।

উলেস্নখ্য, পৃথিবী দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। এখন যখন চলমান লকডাউনের মধ্য মহাসংকটে পড়েছেন বাংলাদেশে গৃহবন্দি কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত, তখন এই বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমলে নেওয়া দরকার, অনেকেই টাকা ধার করেছেন। অনেকে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেননি। মালিকের চাপ। অথচ এই অবস্থা আরও দীর্ঘ হলে অনেককেই পথে নামতে হবে এমন আশঙ্কাও উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে কীভাবে চলছেন দেশের কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত? পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক বলেছেন 'মধ্যবিত্তের কিছু সঞ্চয় থাকে। গেল এক মাসের লকডাউনে তার সেই সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এভাবে আরেক মাস চললে তাদের সেই সঞ্চয়ও শেষ হয়ে যাবে। তখন কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? আলোচনায় আসছে, এতে বিপুলসংখ্যক মধ্যবিত্ত এই পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্তে পরিণত হবেন। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় সংকট হবে যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে। কেননা তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি হারাবেন। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। কেননা উপযুক্ত পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারা বিশ্বে ২৯ লাখ ৭২ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২ লাখের বেশি মানুষ। বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ থেমে নেই। ১৫২ জন ইতোমধ্যে মারা গেছে। আক্রান্ত ৬ হাজারের কাছাকাছি। সঙ্গত কারণেই সার্বিক প্রেক্ষাপট কতটা ভয়ঙ্কর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্য নিদের্শনা মানা জরুরি। একই সঙ্গে যেভাবে চলমান লকডাউনের মধ্যে মহাসংকটে পড়েছেন বাংলাদেশে গৃহবন্দি কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত- তা আমলে নেওয়াসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংকট মোকাবিলয়া সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<97649 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1