পঞ্চমবারের মতো কলকাতায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। ৪ দিনব্যাপী এই উৎসবের আসর বসছে আজ। এই উৎসব চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। বাংলাদেশের তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার উদ্যোগ নিয়েছে উৎসবের। বৃহস্পতিবার বিকালে দক্ষিণ কলকাতার নন্দন ১ চলচ্চিত্র কেন্দ্রে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই। তবে বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর যৌথভাবে ভারত-বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তৈরির কাজ হচ্ছে; যা আগে ছিল না। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যা কিছুই ঘটুক না কেন সংস্কৃতির মধ্যে কোনো বিভেদ করতে পারে না। আমাদের আসল পরিচয় আমরা বাঙালি। আমাদের মধ্যে আরও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। এতে দুই বাংলার নৈকট্য আরও বাড়বে।'
উদ্বোধনী উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ।
জানা গেছে, কলকাতার নন্দন ১ ও ২ হলে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশের ৪৫টি সিনেমা। এর মধ্যে পাঁচটি প্রামাণ্য চিত্র এবং দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও রয়েছে। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের তালিকার মধ্যে রয়েছে কোরবানির ঈদের মুক্তি পাওয়া শাকিব খান-ইধিকা পাল অভিনীত 'প্রিয়তমা'। রোমান্টিক-অ্যাকশনধর্মী এ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ। এতে আরও অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, এলিনা শাম্মী, ডন, লুৎফুর রহমান খান সীমান্ত ও লুৎফর রহমান জর্জ। রয়েছে আফরান নিশো-তমা মির্জার 'সুড়ঙ্গ'। ঈদের এ ছবিটি পরিচালনা করেছেন রায়হান রাফী। এর মধ্যদিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে নিশোর। এ ছাড়া ঈদে মুক্তি পাওয়া অপু বিশ্বাস-সাইমন সাদিকের 'লাল শাড়ি'। বাংলাদেশের ঐহিত্য তাঁতশিল্প নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন বন্ধন বিশ্বাস। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত মাহফুজ আহমেদ-শবনম বুবলী অভিনীত 'প্রহেলিকা' ছবিটিও রয়েছে ৪৫ ছবির তালিকায়। এ ছাড়া গত বছরের প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের জোয়ার তোলা সিনেমা চঞ্চল চৌধুরী-তুষী অভিনীত 'হাওয়া' ও বিদ্যা সিনহা মীম-শরিফুল রাজ-সিয়াম আহমেদের 'পরাণ' দেখানো হবে উৎসবে। প্রাথমিক তালিকায় আরও রাখা হয়েছে 'রিকশা গার্ল', 'জেকে ১৯৭১', 'বীরকন্যা প্রীতিলতা', 'রেডিও', '১৯৭১ সেই সব দিন', 'নকশিকাঁথার জমিন', 'শ্যামা কাব্য', 'দুঃসাহসী খোকা', 'শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়', 'গুণীন', 'বিউটি সার্কাস', 'দামাল', 'পায়ের তলায় মাটি নাই', 'পাপপুণ্য', 'সাঁতাও', 'মা', 'দেশান্তর', 'স্ফুলিঙ্গ', 'চিরঞ্জীব মুজিব', 'বিক্ষোভ', 'রেহানা মরিয়ম নূর', 'নোনা জলের কাব্য', 'মৃধা বনাম মৃধা', 'কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া', 'গলুই', 'গন্ডি', 'ন ডরাই', 'আলফা', 'পুত্র', 'আয়নাবাজি', 'দেবী' ও 'গেরিলা'। প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে রয়েছে 'হাসিনা এ ডটারস টেল', 'অবিনশ্বর', 'একটি দেশের জন্য', 'চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু', 'কাঙ্গাল হরিনাথ'। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে রয়েছে 'ওমর ফারুকের মা' ও 'ধড়'। '৫ম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব'-এর পাশাপাশি থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের একঝাঁক তারকাশিল্পীও উৎসবে থাকছেন। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন চলচ্চিত্র তারকা ফেরদৌস, পূর্ণিমা, অরুণা বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, মামুনুজ্জামান, গৌতম সাহা প্রমুখ।
এর আগে মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে বিস্তারিত জানান বাংলাদেশের উপ-হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং প্রথম সচিব রঞ্জন সেন। উৎসবের প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দেখা যাবে সিনেমা। তবে ছবি দেখার জন্য টিকিটের কোনো বিক্রয়মূল্য নেই। নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে টিকিট সংগ্রহ করলেই বিনামূল্যে ছবি দেখা যাবে।
এ উৎসবের চতুর্থ আসর বসেছিল গত বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই চলচ্চিত্র উৎসব। মহামারি করোনার মধ্যেও থেমে ছিল না এই আয়োজন। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি উদ্বোধন হয়েছিল প্রথম আসরের। ৪ দিনব্যাপী এ উৎসবে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হয় ২০১৫ সালের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি 'বাপজানের বাইস্কোপ'। ছবিটি পরিচালনা করেন রিয়াজুল রিজু। এ ছাড়া গেরিলা, আমার বন্ধু রাশেদ, অনিল বাগচীর একদিন, চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু, টেলিভিশন, গাড়িওয়ালা, জন্মসাথী, শোভনের স্বাধীনতাসহ আর বেশকিছু ছবি দেখানো হয়।