বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ওমর সানী থেকেও নেই ঢাকাই চলচ্চিত্রে

মাতিয়ার রাফায়েল
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ওমর সানী থেকেও নেই ঢাকাই চলচ্চিত্রে

নব্বই দশকের একজন বহুল আলোচিত অভিনেতা ওমর সানী। প্রকৃত নাম মোহাম্মদ ওমর সানী। দর্শকের কাছে ওমর সানী নামেই খ্যাত। একদিকে তিনি যেমন অনেক ব্যবসাসফল সিনেমার অভিনেতা অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রির বাইরের আলোচনায়ও থাকতেন সরব। এরপর সেই চলচ্চিত্র জীবনের ওপরে যেন চিরকালের নীরবতার চাদর বিছিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তাই তো কিছুদিন আগে 'ডেড বডি' নামে নতুন একটি সিনেমার অভিনয়ে যুক্ত হয়ে তিনি একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, 'প্রায় দুই থেকে তিন হাজার বছর পর যেন একটা ছবি করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। ভালো লাগছে। আশা করছি সুন্দর কিছু হবে।'

১৯৯২ সালে নুর হোসেন বলাইর 'এই নিয়ে সংসার' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র শিল্পে অভিষেক ঘটে। ১৯৯৪ সালে দিলীপ বিশ্বাসের 'দোলা' চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। একদিকে জীবনের প্রথম সিনেমাটি করলেন 'এই নিয়ে সংসার' অন্যদিকে তার পরের সিনেমাটিই করলেন 'দোলা'। যে 'দোলা' প্রতিটি সংসার জীবনের জন্যই অপরিহার্য। কাকতালীয় হলেও সত্য যে, সানীর জীবনের প্রথম করা এই দুটো সিনেমায় তার ব্যক্তিজীবনেও দারুণ প্রভাব ফেলে। জীবনের এই দ্বিতীয় সিনেমাটিতেই জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন মৌসুমীর সঙ্গে সানী। 'এই নিয়ে সংসার' এবং 'দোলা' এই দুটো ঘটনা যেন রূপকের মতো হয়ে ধরা দিল সানীর জীবনে। ফলে ওই দুটো সিনেমার সমন্বয়ে যেন তাদের বাস্তবজীবনেও ধরা দিল 'এই নিয়ে সংসার' এবং 'দোলা'।

সেইসূত্রে সানী ব্যবসাসফল সিনেমার অভিনেতাই নন, পাশাপাশি একজন সফল অভিনেত্রী মৌসুমীর সঙ্গে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের অধিকারীও। মোহাম্মদ ওমর সানী এবং আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী নামের এই বৈবাহিক জুটি বলতে গেলে দেশের সিনেমায় প্রায় বিরলই। যদিও কিছুদিন আগে একটা অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে সম্পর্কটি টলমলায়মান হয়ে পড়েছিল। সফল দম্পতি বলেই তো এ নিয়ে তখন গোটা দেশে হালকা-মাঝারি ভূমিকম্প বয়ে যায়। কিন্তু সম্পর্কটি আগে থেকেই অত্যন্ত মজবুত ভিতের ওপর থাকায় সেটা আর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মোড় নেয়নি। দু'জনেই সংযত হওয়ায় আগের মতোই সুখের সংসার বিরাজ করছে।

ফলে একই পস্ন্যাটফর্মের তারকাদম্পতি হিসেবেও আদর্শ হয়ে থাকবেন তারা। ইতিপূর্বে একই পস্ন্যাটফর্মের হিসেবে যা আজিম (প্রয়াত)-সুজাতাকেও দেখা গেছে। শোবিজের বিভিন্ন পস্ন্যাটফর্মে কাজ করা অনেকই স্বামী-স্ত্রী দম্পতি আছে। কিন্তু নায়ক-নায়িকা হিসেবে একই পস্ন্যাটফর্মের জুটি হিসেবে স্বামী-স্ত্রী এ দেশে খুব বেশি নেই। রাজ-পরীমনির মতো আরও অনেকের হলেও তা ভেঙে গেছে। নাঈম-শাবনাজ হলেও তারা তো আর সিনেমাতেই থাকলেন না।

ওমর সানী ও মৌসুমী দম্পতি দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে 'এই নিয়ে সংসার' হিসেবে সুখী দাম্পত্য ধরে রেখেছেন। ধরে রেখেছেন সেই 'দোলা' ছবিরই স্মারক হিসেবে পাওয়া দুটো বড় সন্তান যেন এ নিয়ে বিব্রত না হয় বা অসম্মানিত না হয়, সেটারও সুরক্ষায়।

শুধু তাই নয়, যখন থেকে ওমর সানী প্রায় অর্ধ বেকার তখনও স্ত্রী মৌসুমীকে কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। সুখি বাবা হয়ে সন্তান কোলে নিয়ে তার পিছে পিছে ঘুরেছেন। এতে তার ওপর কোনো হীনমন্যতাও ভর করেনি। আজ ওমর সানীর চলচ্চিত্রে কাজ নেই। তারপরও তাদের সুখের সংসার আছে। শোবিজে এটাই বা কয়জনের থাকে? তাই তো ওমর সানী-মৌসুমী জুটি শুধু এ দেশের চলচ্চিত্রেই না- পরিবার, সমাজ, জীবন- সব ক্ষেত্রেই অনুকরণীয় মানুষ। অনেকেই বলেন, যদি এমন দাম্পত্য চলচ্চিত্রের বাকি সবাইর মাঝে থাকলে এই ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে বাইরের মানুষও এত স্ক্যান্ডাল ছড়াতো না। দেশের মানুষ তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকত।

নব্বই দশকের নায়কদের মধ্যে সবচেয়ে ডাকাবুকো ওমর সানী। তিনি যে 'ডাকাবুকো' তিনি নিজেই কথাটি বলেন এবং বেশ আত্মতৃপ্তির সঙ্গেই বলেন। তবে যখন নায়ক হিসেবে তার ডিমান্ড পড়ে যাচ্ছিল তখন তিনি কাজ করেন খলনায়ক হিসেবে। খলনায়ক হিসেবে 'ওরা দালাল', 'ক্ষমতার গরম', 'খালাস' ছবিগুলোতে ভালোই প্রশংসিত হয়েছেন। তবে যেখানে মিশা সওদাগর একচেটিয়া রাজত্ব করছেন সেখানে বছরে অল্প কিছু সিনেমার 'খলনায়ক' হওয়াটা যেন ডাকাবুকো সানীর জন্য সম্মানজনক হলো না।

ফলে খলনায়ক হওয়ার চিন্তাও বাদ দেন। তবে সর্বশেষ অভিনয় করা মো. ইকবাল পরিচালিত 'ডেড বডি' ছবিতেই ফিরতে পারেন নতুন করে। ছবিটি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। এতে এক আধ্যাত্মিক চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। দীর্ঘদিন পর আবার ছবিতে ফেরা প্রসঙ্গে ওমর সানী বলেন, 'অনেক দিন কাজ করি না। নায়ক থেকে ভিলেন চরিত্রে কাজ শুরু করেছিলাম। দর্শকের সাড়াও পেয়েছি। কিন্তু আমার মেয়ে চায়নি আমি খলনায়ক চরিত্রে কাজ করি। তাই মেয়ের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে এই চরিত্র থেকে সরে এসেছি। অনেক দিন সিনেমায় কাজ করা হয়নি। এই চরিত্র একটু অন্য রকমের, তাই কাজটি করছি।'

কিন্তু এক সময়ের তুমুল ব্যস্ত অভিনেতাকে কয়েক বছর পর পর অনিয়মিত ছবি করলে বাকি সময়টায় কী করেন? হাতে কাজ থাকে না বলে, সিনে সাংবাদিকদের ফোনও রিসিভ করেন না তিনি। কারণ, কী নিয়ে কথা বলবেন তিনি? ব্যক্তিগত, দিন-দুনিয়াসহ নানা বিষয় নিয়েও যদি কথা বলতে হয় সে তো তিনি এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছেনই তার প্রিয় পস্ন্যাটফর্ম ফেসবুকে। কথা বলতে চাইলে বলেন, 'আমি একেবারে নিজের মতো জীবন কাটাচ্ছি। কোথাও যেতে ভালো লাগে না। গতানুগতিকভাবে শুধু পর্দায় নয়, কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না। এমনকি আমি কারও আমন্ত্রণও নিই না, কাউকে আমন্ত্রণও করি না। চারপাশের যে অবস্থা!'

ফলে চলচ্চিত্রে তার বেকার সময় গেলেও ফেসবুকেই এখন সরব। ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে দেশের শোবিজ, ক্রীড়া, সমাজ, ধর্মসহ এমন কিছু নেই যা নিয়ে তিনি স্ট্যাটাস দেন না। বহু বিষয়েই স্ট্যাটাস দিয়ে সব সময়েই আলোচনায় থাকেন এখন ওমর সানী। কখনো কখনো তার এই স্ট্যাটাস নিয়ে তুমুল বিতর্কও হয়। এ জন্য তাকে অনেকে বলিউডের কঙ্গনা রানৌত বলে অভিহিত করে থাকেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে