শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
শ্বেতপত্র প্রকাশের পরিকল্পনা

তাপস-খোকন বিরোধ দুর্নীতির ইসু্যটি রাজনৈতিক কি না খতিয়ে দেখছে বিএনপি

হাসান মোলস্না
  ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

হঠাৎ করে সরকারের বিভিন্ন মহলের দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসার কারণ অনুসন্ধান করছে বিএনপি। এটি বড় কোনো ইসু্য চাপা দিতে ক্ষমতাসীন দলের নতুন কৌশল নাকি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলীয় নেতাদের পাল্টাপাল্টি দুর্নীতির অভিযোগ, তা খতিয়ে দেখছে বিএনপি। এ ব্যাপারে অতি উচ্ছ্বাস দেখিয়ে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফায়দা নেওয়ার সুযোগ দিতে চায় না তারা। এজন্য আপাতত এই ইসু্যতে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে সরব থাকবে বিএনপি।

আলাপকালে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, যেসব দেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, মূলত তারাই গণতন্ত্র নিয়ে সংকটে পড়েছে। বিশ্বের দুর্নীতিতে শীর্ষ দেশগুলোর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক অধিকার ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুর্নীতি গণতন্ত্রকে দূরে সরিয়ে রেখে একটি দুষ্টচক্র তৈরি করে। যেমন দুর্নীতির ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখন প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়। যেমনটি হচ্ছে বাংলাদেশে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারের অনেক কর্তা ব্যক্তিও অনেক সময় তা স্বীকার করছে। বিএনপিও এ ব্যাপারে ভাবছে এবং প্রতিবাদও করছে। দুর্নীতি এখন যে পর্যায়ে গেছে তাতে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে

প্রতিবাদ করা উচিত। কিন্তু বিএনপি এখনই

সেই পদক্ষেপ নিতে চায় না। কারণ এর আগেও ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় নিজস্ব লোকদের সামনে এনে রাজনীতি করছিল ক্ষমতাসীনরা। এবারও তেমনটি করছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে বিএনপি। যদি এটি সরকারের কৌশল না হয়ে থাকে তাহলে এমনিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সরকারের ভীত দুর্বল হয়ে পড়বে। একপর্যায়ে এই ইসু্য তাদের পতন ডেকে আনবে। ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে মাঠের আন্দোলনের প্রয়োজন হয় না, এমনিতেই পতন হয়। তখন লোক দেখানোর আন্দোলন হয় মাত্র। এজন্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই এই ইসু্যতে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। কোনো কর্মসূচি না দিলেও নেতারা বক্তব্য বিবৃতির মাধ্যমে সরব থাকবে।

ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান মেয়রের দুর্নীতির ইসু্যতে পাল্টাপাল্টি অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে আসায় বিএনপি উচ্ছ্বসিত কিনা- জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, বিএনপির তৃণমূলের অনেকে না বুঝে উচ্ছ্বসিত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে উচ্ছ্বাসের কারণ তখনই হতো, যদি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে সরকারে অভ্যন্তরের বিশৃঙ্খলার বিষযটি সামনে আসত এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত। এর আগে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি জি কে শামীম, পাপিয়াসহ অনেক বিষয় সামনে এসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে বড় কোনো ইসু্য আড়াল করতে সেটি ক্ষমতাসীনদের কৌশল ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতির বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে না গেলেও এই ইসু্যতে বসে থাকবে না বিএনপি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত যত দুর্নীতি হয়েছে তার দালিলিক প্রমাণসহ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, শেয়ারবাজার লুট, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি, ডিএসসিসি, টিকা, করোনার চাল চুরিসহ ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে যেসব দুর্নীতির খবর বের হয়েছে এসব কিছুর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। সরকারের কোনো মন্ত্রী-এমপি কিংবা মদদপুষ্ট কোন ব্যবসায়ী কত টাকার দুর্নীতি করেছেন এবং কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা কত টাকার দুর্নীতি করেছেন এর ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে বিএনপি। প্রয়োজন ও সময় অনুযায়ী তা কাজে লাগাতে চায় তারা। এছাড়া কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে এ সময়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের।

বর্তমানে সবেচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা দুর্নীতি ইসু্যতে বিএনপির করণীয় প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একটা লুটপাটের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিএনপি লুটপাটের অর্থনীতিটাকে পরিবর্তন করতে চায়। একদলীয় শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ লক্ষ্যে কাজ করছে বিএনপি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে