সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
মতবিনিময় সভায় শেখ হাসিনা

অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে

'ভায়েরা আমার' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার তার কার্যালয়ে 'ভায়েরা আমার' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন -ফোকাস বাংলা

আওয়ামী লীগ বাদে অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন এবং দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। সে জন্য দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।' তিনি বলেছেন, 'দেশবিরোধী, খুনি, মৌলবাদী চক্র, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।'

সোমবার দুপুরে গণভবনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে বিজয়ী করতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়, জনগণের জীবনমান উন্নত হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান বেড়েছে অনেক। ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হয়েছে, আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতা আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমরা মানুষের মন জয় করেই ক্ষমতায় এসেছি। আর ক্ষমতায় এসে ধারাবাহিক উন্নয়ন করে যাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর '৭৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়েছে আমরা তার প্রতিশোধ নেই নাই। আমরা অন্যায়ের জবাব দিচ্ছি উন্নয়ন করে। আমাদের সরকার প্রতিটি জেলায় পরিকল্পিত উন্নয়ন করেছে। ফলে আজ গ্রামে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একেবারে নাই বললেই চলে। সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলে গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে আমরা যে উন্নয়ন করেছি, তার সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।'

আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেগুলো বেশি করে প্রচার করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, 'একইসঙ্গে উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে এবং আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনা দরকার সেটাও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের আস্থা-বিশ্বাসও অর্জন করতে হবে।'

সামনের জাতীয় নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং মন্তব্য করে শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দলকে আরও শক্তিশালী, সুসংগঠিত করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তিনি দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা যেন অবহেলিত না হয় সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে নেতাদের নির্দেশ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'দুঃসময়ের নেতাকর্মীরাই দলের দুঃসময়ে এবং যে কোনো

প্রয়োজনে পাশে থাকবে। আমার একমাত্র শক্তি আমার সংগঠন। সাংগঠনিক শক্তি না থাকলে বড় কোনো অর্জন সম্ভব হয় না। তাই দলকে সুসংগঠিত করতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে থেকে।'

বাংলাদেশকে নিয়ে নানা চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অনেকেই চায় না আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। সেজন্য নানা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হচ্ছে। যাদের উসকানিতে বিএনপি আজ লাফাচ্ছে, তারা কিন্তু তাদের ক্ষমতায় বসাবে না। তারা শুধু তাদের ব্যবহার করবে।'

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টা কখনোই সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ আজ মানুষের মন জয় করে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করা দরকার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাবা-মা-ভাই সবাইকে হারানোর পর আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। বাংলাদেশের জনগণ আমার সব শক্তি। তারাই আমার একমাত্র ভরসা। তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। করোনা মহামারির মধ্যে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যারা সবচেয়ে বেশি মানুষের পাশে থেকে অবদান রেখেছে।'

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, 'আরাফাতকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে, ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে কাজ করবেন।'

ঢাকা-১৭ আসনের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অনেকেই যোগ্য আছেন, একজনকে তো দিতে হবে। সব হিসাবনিকাশ মিলিয়ে আমরা একজনকে মনোনয়ন দিয়েছি। যাদের মনোনয়ন দিতে পারিনি তাদের হয়তো কষ্ট লাগবে, কারণ তারাও যোগ্য। আমরা অবশ্যই সামনের দিনে তাদের দেখব। নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সবাই ভালো থাকবেন। ক্ষমতায় না এলে সবার কষ্ট হবে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নির্বাচন মানে ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা। আওয়ামী লীগ কখনো ভোটারবিহীন নির্বাচন করেনি। ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য কর্নেল ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপস্নব বড়ুয়া, ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সভাপতিসহ বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

বৈঠকে ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ২২ জনের মধ্যে ১৮ জন উপস্থিত ছিলেন।

'ভায়েরা আমার' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

এদিকে প্রধানমন্ত্রী 'ভায়েরা আমার' শিরোনামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২০০টি ভাষণ সম্বলিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন।

সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের শুরুতেই এই মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি। বইয়ের নামটি প্রধানমন্ত্রীর নিজের দেওয়া। এছাড়া বইটির ভূমিকাও লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। ভাষণসমগ্রটির সংগ্রহ, সংকলন ও সম্পাদনা করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম। বইটি প্রকাশ করে জিনিয়াস পাবলিকেশন।

বইটির দুইশ' ভাষণের মধ্যে বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভস থেকে প্রাপ্ত টেপ/সিডি হতে একশটিরও বেশি ভাষণ সংগ্রহ করা হয়। যা শ্রম্নতিলিখনের মাধ্যমে বইটিতে সংযোজন করা হয়েছে। প্রতিটি ভাষণের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা যথাযথভাবে যাচাই করা হয়েছে। বইটিতে প্রতিটি ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাইলাইট করে আলাদাভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া সূচিতে ভাষণের বিষয়বস্তু, সাল ও তারিখ উলেস্নখ করা হয়েছে।

ভাষণসমগ্রটি রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে মর্মে মন্তব্য করেন এর সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে