সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন আজ

খুলছে স্বপ্নের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বীরেন মুখার্জী
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

যানজটের যন্ত্রণায় নাকাল রাজধানীবাসীর স্বস্তির দিন আজ। প্রায় এক দশক প্রতীক্ষার পর অবশেষে স্বপ্নের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে চালু হচ্ছে বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশ। এই অংশ এখন পাড়ি দেওয়া যাবে ১০ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বহুল প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ওপর দিয়ে যানবাহনগুলো দ্রম্নত আরেক প্রান্তে গিয়ে নামায় সেখানে যানজট তৈরি হতে পারে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টির্ যাম্প রয়েছে।র্ যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। পুরো প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের। এ অংশের দূরত্ব দৈর্ঘ্য ১১.৫ কিলোমিটার। আরর্ যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কিলোমিটার। কাওলা-ফার্মগেট অংশে ওঠানামার জন্য রয়েছে ১৫টির্ যাম্প। প্রথম ধাপে যানবাহন ওঠানামার জন্য ১৩টির্ যাম্প খুলে দেওয়া হবে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, 'শুরুতে আমরা এই পথে ৮০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু মানুষের যাতায়াতে অভ্যস্ত করার জন্য ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। মানুষ কিছু দিন ব্যবহারে অভ্যস্ত হলে আবার ৮০ কিলোমিটারে গতি ফিরিয়ে নেওয়া হবে।'

রাজধানীর যানজট কমাতে সরকার ২০১১ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রকল্প অনুযায়ী, এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক) গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সেতু কর্তৃপক্ষ সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পরই নগরবাসী নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। শুরু হয় পিপিপি প্রজেক্ট অর্থাৎ প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ প্রকল্পেও আওতায় ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পের কাজ। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য এটিই হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উলেস্নখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তা জিডিপিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনের টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেতু বিভাগ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী- প্রাইভেট গাড়ি, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) ও হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ভ্যাটসহ ৮০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের জন্য (৬ চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা। ৬ চাকার বেশি ট্রাক বা ট্রেইলরের জন্য ৪০০ টাকা। আর সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা তার বেশি) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ টাকা।

জানা গেছে, এই এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন, মোটর সাইকেল, তিন চাকার কোনো যানবাহন বা সিএনজি অটোরিকশা জাতীয় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। কেউ হেঁটেও এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করতে পারবে না।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজধানীতে চলাচলকারী ২০ লাখ যান্ত্রিক যানবাহনের মধ্যে ১০ লাখই মোটর সাইকেল। এছাড়া লক্ষাধিক সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে সুবিধার বাইরে রাখলে যানজট নিরসনের উদ্দেশ্য অনেকটাই অপূর্ণ থেকে যেতে পারে।

গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞদের মতে, যানজট নিরসনে অফ-পিক ও পিক-আওয়ার হিসাব করে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হয়। অফিসের সময় অনেক যানবাহনই হয়তো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে। কিন্তু রাত ১০টার পর যখন রাজপথ ফাঁকা হয়ে যাবে, তখন অনেকে নিচ দিয়েই চলাচল করবে। এ জন্য টোলের হার অফ-পিক ও পিক-আওয়ার হিসেবে নির্ধারণ করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। সিএনজি অটোরিকশা ও মোটর সাইকেলের বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরের কাওলায় থাকা দু'টির্ যাম্পের একটি দিয়ে নামা ও আরেকটি দিয়ে ওঠা যাবে। কুড়িলে ওঠানামার জন্য রয়েছে তিনটির্ যাম্প। এগুলোও প্রথম দিন থেকে উন্মুক্ত থাকবে। মহাখালীর দু'টির্ যাম্পের মধ্যে একটি দিয়ে মহাখালী বাস টার্মিনালের কাছে নামা যাবে। আরেকটি ওঠারর্ যাম্প চালু হবে কিছু দিন পর। এ ছাড়া শুরুতেই উন্মুক্ত থাকবে বিজয় সরণি ফ্লাইওভার থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার জন্য দু'টির্ যাম্প। সবশেষর্ যাম্পটি ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে গিয়ে নামবে।

প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার জানান, রাজধানীর যানজট নিরসনে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পটি থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রম্নপের ৩৪ শতাংশ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ অংশীদারিত্বে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। সরকার ভিজিএফ হিসেবে ব্যয়ের ২৭ শতাংশ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দিবে।

তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের জুন মাসে পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। তখন বিমানবন্দর থেকে উঠে সোজা কুতুবখালী গিয়ে নামতে পারবে যানবাহন। একইভাবে কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দরে গিয়ে নামতে পারবে। যেসব যানবাহন শহরের ব্যস্ত এলাকার ভেতর দিয়ে এতদিন বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করত, পুরো কাজ শেষ হলে সেগুলোকে আর শহরের যানজটে পড়তে হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে