সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
আজ অবরোধ

কর্মসূচি ঘিরে বিএনপিতে অস্থিরতা

গুরুত্ব পাচ্ছে ভোট পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে ভোটের দিনেও
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপিকে সব অস্ত্রই ব্যবহার করতে হচ্ছে। সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান, হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ, ঘেরাও, গণকারফিউসহ অসংখ্য পরিকল্পনা নিয়েও কোনোটিতে স্থির থাকতে পারছে না দলটি। এদিকে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কোনো কর্মসূচিই কার্যকরী ভূমিকাও রাখতে পারছে না। আসলে বিএনপি কী করতে চায় এ প্রশ্ন এখন দলটির নেতাকর্মীদেরই।

গত ২৮ অক্টোবরে মহাসমাবেশ পন্ডের পর গত দেড় মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো। চার দফায় ৫ দিন হরতাল ও ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ কর্মসূচি করে। এছাড়া তারা তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ৭ জানুয়ারি ভোট প্রতিহতের হুঙ্কার দিয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধের কথা না বললেও 'প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষের' প্রতি ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ রোববার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি রয়েছে বিএনপি ও সমমনাদের।

বিএনপির উচ্চপর্যাযের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের ট্রেন থামানো আর সম্ভব নয়, এই বিষয়টি তারা উপলব্ধি করছে। এজন্য নির্বাচনের পরেই কার্যকরী আন্দোলন চালাতে চায়। তবে নির্বাচনের আগে রাজপথ ছাড়বে না। কারণ বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সব মিলে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরে আন্দোলনের একটি ছক তৈরি করেছে বিএনপি। নির্বাচনের আগে অসহযোগ, গণসংযোগ বা যে কোনো নামে কর্মসূচির মূল লক্ষ্য থাকবে- ভোটদানে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করা। এর মাধ্যমে একতরফা নির্বাচন প্রমাণ করতে লিফলেট বিলি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণামূলক বার্তা, পথসভা, উঠান বৈঠকসহ আসনভিত্তিক আন্দোলন জোরদারের পরিকল্পনা আছে। এছাড়া অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি 'হরতাল-অবরোধ-গণকারফিউ' দেওয়ার চিন্তাও রয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ পাঁচটি দফা পালনের যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। আসলে সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পরামর্শে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে- যা বিএনপির জন্য অস্বস্তিকর। তবে এর ইতিবাচক দিকও আছে। সেগুলো হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে মিত্র দলগুলোর কার্যক্রম সামনে আসবে, প্রশাসনে কট্টরদের

বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে, দলের সুবিধাবাদী নেতাকর্মীরা চাপে পড়বে। আর নির্বাচনের সব ধরনের কর্মসূচি দিয়ে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যাবে।

অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও আশাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ নাগরিক অধিকার রক্ষার চলমান সংগ্রামে গণমানুষকে সম্পৃক্ত করে বর্তমান একদলীয় সরকারকে অকার্যকর করাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে ভোট বর্জনসহ ঘোষিত ৫টি বিষয়ে সরকারকে অসহযোগিতা করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছে। জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে চলমান সংগ্রাম সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে। জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়েই এ 'অসহযোগ আন্দোলন' সফলতা অর্জন করবে।

নির্বাচন পরবর্তী ভাবনার বিষয়ে সূত্রের মত হচ্ছে, ভোটের আগে দাবি আদায় হবে না, এমন ভাবনা থেকে আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পরও চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ভোট পরবর্তী কর্মসূচিতে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও করা হতে পারে। আওয়ামী লীগ এবং বিরোধীদলগুলো যেভাবে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নিচ্ছে- তাতে এই নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সম্প্র্রতি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে বৈঠকেও এ বিষয়টি বিদেশিরাই আলোচনায় এনেছেন। এই প্রেক্ষাপটে ভোটের পর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতির প্রয়োগসহ নানা বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। ভোটের পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে তখন কর্মসূচি জোরদার করা হবে। এর মাধ্যমে নির্বাচন পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা থাকবে। সেজন্য কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ অবস্থায় আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চেয়েছে গণতান্ত্রিক বিশ্ব। বিএনপি, বাম ও ইসলামপন্থি অন্তত ৬৩ দল নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে এবারের নির্বাচনও দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। এটি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সরকারকে ব্যাপকভাবে কূটনৈতিক চাপে ফেলবে। পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক সংকটও রয়েছে। এরপরও বিরোধী নেতাকর্মী ও সমর্থক যারা প্রবাসে থাকে তারা যদি আন্দোলনকে সমর্থন করে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রাখে, তাহলে চলমান ডলার সংকট আরও বাড়বে। এছাড়া নির্বাচনের আগেই পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হয়েছে- যা ক্ষমতাসীনদের সবচেয়ে বেশি বেকাদায় ফেলতে পারে। সব মিলে নির্বাচন করে ফেললেও গত দুই বারের মতো এবারেও পুরো মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।

আজ অবরোধ

সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনের চলমান কর্মসূচিতে আজ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। গত বুধবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে 'একতরফা' নির্বাচনে ভোট বর্জনসহ সরকারের বিরুদ্ধে 'সর্বাত্মক অসহযোগ' আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয় ওই সময়ে। এই দাবির স্বপক্ষে জনমত গঠনে গণসংযোগে ৩ দিন লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করে দলটির নেতাকর্মীরা, যা শনিবার শেষ হয়েছে। একই দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে সমমনা দল ও জোট। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা জামায়াতে ইসলামী ও এবি পার্টিও একই কর্মসূচি পালন করছে।

সূত্রমতে, আজ অবরোধ কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচিতে ফের অবরোধ আসতে পারে। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল অথবা অবরোধ ও গণসংযোগের কর্মসূচি পালনের বিষয়ে দল জোটের ফোরামে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ভোটের দিন ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত 'গণকারফিউ' দেওয়ার কথাও ভাবনায় আছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়ে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জামায়াতে ইসলামী মাঠে থাকবে বলে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে