বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুলস্নাহ আল নোমান মারা গেছেন (ইন্নালিলস্নাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে ঢাকায় তার মৃতু্য হয় বলে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন। ৮০ বছর বয়সী নোমান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।
তার ব্যক্তিগত সহকারী নুরুল আজিম হিরু জানান, ভোরে ধানমন্ডির বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন নোমান। দ্রম্নত স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নোমানের মৃতু্যর খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকে তার ধানমন্ডির বাসায় ছুটে যান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও সেখানে যান।
মঙ্গলবার বাদ আসর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আবদুলস্নাহ আল নোমানের জানাজা হয়। হ জানাজার ছবি পৃষ্ঠা ১৬
বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে তাতে অংশ নেন। বেলা আড়াইটায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ পস্নাজায় আরেক দফা জানাজা হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুলস্নাহ আল নোমান চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও দলটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে জন্ম নেওয়া নোমান একসময় বাম রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ষাটের দশকের শুরুতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। মেননপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
ছাত্রজীবন শেষে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে নোমান যোগ দেন শ্রমিক রাজনীতিতে। পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। গোপনে ভাসানীপন্থি ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত হন। ১৯৭০ সালে ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৭১ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে ন্যাপের রাজনীতিতে তার পথ চলা। এরপর ১৯৮১ সালে যোগ দেন বিএনপিতে।
১৯৯১ ও ২০০১ সালে চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নোমান। খালেদা জিয়ার দুই সরকারের আমলে মৎস্য ও পশু সম্পদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, বন ও পরিবেশ এবং খাদ্য মন্ত্রণায়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব তিনি পালন করেন।
এই প্রয়াত নেতার মৃতু্যতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন। সদ্য পদত্যাগকারী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের মৃতু্যতে শোক প্রকাশ করেছেন।
চট্টগ্রামে শোকের ছায়া
চট্টগ্রাম বু্যরো জানিয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুলস্নাহ আল নোমানের মৃতু্যর খবরে রাজনৈতিক অঙ্গণসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে একজন স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার মৃতু্যতে স্থগিত করা হয়েছে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সমাবেশ। সেখানে প্রধান বক্তা হিসেবে আব্দুলস্নাহ আল নোমানের থাকার কথা ছিল। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি দোয়া মাহফিল ও তিনদিনব্যাপী শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
চট্টগ্রামে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা নগরের জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বাদ আসর রাউজান গহিরা মাঠে আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুলস্নাহ আল নোমানের মৃতু্যতে শোক জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উলস্নাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
শোকবার্তায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আবদুলস্নাহ আল নোমানের মৃতু্যর সংবাদ ছিল আমার জন্য ভীষণ কষ্টের। তার হাত ধরেই আমরা রাজনীতি শুরু করেছি। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন নেতাদের নেতা। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবেন।
এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুলস্নাহ আল নোমানের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগর আমীর, সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন।
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুলস্নাহ আল নোমানের মৃতু্যতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দোয়া মাহফিল ও তিনদিনব্যাপী শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। শোক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বাদ জোহর চট্টগ্রামের নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন মসজিদে এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে মরহুম আব্দুলস্নাহ আল নোমানের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উলস্নাহ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শামসুল আলম, সাবেক নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল উদ্দিন, হারুন জামান, শওকত আজম খাজা, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, আহমেদুল আলম রাসেল, শিহাব উদ্দিন মোবিন, নগর বিএনপির সদস্য আবুল হাসান, কামরুল ইসলাম, এম এ হান্নান, আবু মুসাসহ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।