আজকের যায়যায়দিন

"আম্মুকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে রাজশাহীতে যাওয়ার আগে আব্বু আমাকে বলেছিল, 'আম্মু নুসরাত, আমরা সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়িতে চলে আসব। বাড়িতে ফিরতে তোমার জন্য অনেক খাবার আনবোনি আম্মু, তুমি স্কুলে যাও।'' কিন্তু আব্বু, আম্মু আর ছোট কেউ ফিরে আসলো না সুস্থভাবে। সবাই মারা গেল, আমার আর কেউ রইলো না।'

এভাবেই মা, বাবা ও আদরের ছোট বোনকে হারিয়ে কান্না বিজরিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিল ১৩ বছরের নুসরাত আক্তার। গত রোববার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকায় আমান মসজিদের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের বাড়িই নওগাঁ জেলায়। এদের মধ্যে একই পরিবারের আছে তিনজন। তারা হলেন- নুসরাতের বাবা নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছোট ছেলে আক্তার হোসেন (৩৫), নুসরাতের মা বিথি খাতুন (৩২) এবং ৪ বছরের ছোট বোন মরিয়ম জান্নাত (৪)। অন্য আরেক নিহত হলেন মান্দা উপজেলার ছোট বেলালদহ এলাকার ময়েজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে আব্দুল মান্নান (৪৮)।

গত সোমবার বিকেলে জানাজা শেষে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নুসরাতের বাবা, মা ও ছোট বোনকে। একসঙ্গে পাশাপাশি কবরে শুয়ে আছেন একই পরিবারের তিনজন। স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝেও ঘটনাটি গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

নুসরাতের বড় চাচা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'ছোট ভাই, তার স্ত্রী ও ৪ বছরের মেয়ে মারা গেল। এমন আঘাত কীভাবে সইবো আমরা। ভাতিজিটা এতিম হয়ে গেল।'

প্রখর রোদে কাজের পর 'কৃষক সেডেই' শান্তি

স্থানীয় বামইন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে নুসরাত আক্তার। বাবা, মা ও বোনের জানাজা এবং দাফন শেষে নুসরাত বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছে। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবুও নুসরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চাওয়া হলো, শেষবারের মতো কী কথা হয়েছিল মা-বাবার সঙ্গে। এ সময় নুসরাত কাঁদতে-কাঁদতে জানায়, 'যখন সড়ক দুর্ঘটনা হয় তখন মা ও বোন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আব্বু বেঁচে ছিল। জানার পর মামা ও চাচ্চুদের সঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তখন আব্বু কপালে একটি চুমু দিলেন। সন্ধ্যার কিছু পর আব্বুও আমাকে ছেড়ে চলে গেল।'

নিয়ামতপুর ইউএনও আব্দুলস্নাহ আল মামুন বলেন, খুবই হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা। একসঙ্গে একই পরিবারের তিন প্রাণ ঝরে গেল। ওই পরিবারের নুসরাত নামের একটি মেয়ে রয়েছে। আমরা তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে যথাসাধ্য সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেব।