সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

হরিরামপুরে চুরির আশঙ্কায় পেঁয়াজ ক্ষেতে পাহারা

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পেঁয়াজ চুরির আশঙ্কায় ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষক -যাযাদি

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরির আশঙ্কায় দিনে-রাতে পেঁয়াজের ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষক। ক্ষেতের পাশে ছোট ছোট অস্থায়ী ঝুপড়ি নির্মাণ করে সেখানেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পালাক্রমে হাতে লাঠি নিয়ে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। এরই মধ্যে কয়েকজন কৃষকের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরির খবরও পাওয়া গেছে।

কৃষকরা জানান, কয়েকদিন আগে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাহিরচর এলাকার মো. হারুনুর রশিদ, আব্দুল মালেক অন্যান্যের জমি থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বিষয়টি জানালে তিনি কৃষকদের রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিতে বলেন।

তারা বলছেন, ভালো দামের আশায় পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়ে উঠবে। বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার ভালো হওয়ায় ক্ষেতে হানা দিতে শুরু করেছে চোরের দল। তাই চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন তারা। অনেকে চুরির ভয়ে আগেভাগেই পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। এতে ফলন অনেক কম পাওয়ায় লোকসানের শঙ্কায়।

বাহিরচর এলাকার আব্দুল মালেক বলেন, 'আমরা ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। আমাদের প্রায় ৪-৫ শতাংশ জমির পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে। এরপর থেকে আমরা রাত-দিন পাহারা দিচ্ছি। চোরের ভয়ে আমাদের পেঁয়াজ উঠিয়ে ফেলতে হচ্ছে। পেঁয়াজ তোলার উপযোগী না হলেও চুরির ভয়ে অপরিপক্ব অবস্থায় পেঁয়াজ তুলে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি।'

একই এলাকার কৃষক হারুনুর রশিদ বলেন, 'আমি এবার মোট ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। আমার ৪ শতাংশ একটি জমির এক শতাংশের পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। চোরের ভয়ে দ্রম্নত পেঁয়াজ তুলে ফেলতে হচ্ছে। পেঁয়াজ আরও কিছুদিন পরে তুলতে পারলে ভালো হতো।'

নিজের পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দেওয়া বাহিরচর গ্রামের কৃষক মঙ্গল মনি দাস বলেন, 'আমি এ বছর ৪২ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। কয়েকদিন আগে আমার পাশের ক্ষেত থেকে এক কৃষকের অনেক পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে। এরপর থেকেই আমরা রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছি। পেঁয়াজের আকার বড় হলেও এখনো তোলার উপযোগী হয়নি। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়ে উঠবে। কিন্তু চোরের ভয়ে এখনই পেঁয়াজ তুলে ফেলতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে তুলতে পারলে আমার এই জমিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণ পেয়াজ হতো। কিন্তু চুরির ভয়ে আগে ওঠানোর কারণে ৩৫ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ হবে।'

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য কুদ্দুস আলী বেপারী বলেন, 'আমি পেঁয়াজ চুরির ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকদের যার যার ক্ষেত পাহারা দিতে বলি। পাহারা চলমান রয়েছে। এখন আর চুরি হচ্ছে না।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, এ অঞ্চলের জমি পেঁয়াজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ বছর উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবেন।

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ্‌ নুর এ আলম জানান, ক্ষেতে পেঁয়াজ চুরি ঠেকাতে সম্মিলিত প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে