বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং জনজীবনে নাভিশ্বাস

চাহিদার তুলনায় বিদু্যৎ সরবরাহ অর্ধেক তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
  ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
টাঙ্গাইলে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং জনজীবনে নাভিশ্বাস

টাঙ্গাইলে বিদু্যতের ঘন ঘন আসা-যাওয়া ও মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ফলে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। গ্রাম কিংবা শহরে চাহিদার তুলনায় বিদু্যতের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় প্রচন্ড দাবদাহে সাধারণ মানুষ হাঁসফাঁস করছে। শিল্প-কারখানায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। চাষের জমিতে পানি দিতে না পারায় চিন্তিত কৃষক। ব্যবসায়ীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। ঈদ ও বৈশাখের আগে প্রচন্ড গরম ও দিনের বেশির ভাগ সময় বিদু্যৎ না থাকায় বিকিকিনিতে ধস নেমে এসেছে।

বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় আবাসিক ও শিল্প-কারখানাসহ প্রায় ১১ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের বিদু্যতের চাহিদা রয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে মাত্র ১৩০ থেকে ১৪০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে টাঙ্গাইল জোনে ৭টি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জোনে ৫টি উপজেলায় বিদু্যৎ সরবরাহ করে থাকে পলস্নী বিদু্যৎ সমিতি। টাঙ্গাইল জোনের জোনাল অফিসের আওতাধীন ৬ লাখের বেশি বিদু্যৎ গ্রাহক রয়েছে। জেলার ছোট বড় ৮ শতাধিক শিল্প-কারখানায়ও বিদু্যৎ সরবরাহ করে থাকে পলস্নী বিদু্যৎ সমিতি। এসব শিল্প-কারখায় পাঁচ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করে থাকেন। এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে টাঙ্গাইল জেলায় গত কয়েকদিন যাবৎ ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় ব্যাপক দাবদাহ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রচন্ড গরমের মধ্যে বিদু্যতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে। তীব্র দাবদাহে প্রাণিকুলের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। জমিন শীতল হওয়ার আশায় প্রকৃতির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে প্রাণিকুল। ঈদকে সামনে রেখে রোজার শেষ সময়ে সেহরি ও ইফতারের সময়ও লোডশেডিং হচ্ছে যথেচ্ছ। ইফতারের সময় এর মাত্রা কিছুটা কম হলেও সাহরির সময় প্রায় নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে।

তারা জানায়, প্রতিদিন সকাল ৭টার পর থেকে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। দুপুরে তীব্রতা আরও বেশি। রোজাদারের জন্য কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। এর মধ্যে শহর এলাকায় দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পালা করে এলাকা ভিত্তিক দফায় দফায় লোডশেডিং দেওয়া হয়। গ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানে প্রায় সময়ই বিদু্যৎ থাকে না। যদিও বা আসে কয়েক মিনিট পরেই চলে যায়। চলতি বোরো মৌসুমে চাষের জমিতে পানি সেচ দিতে না পারায় ফলন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। দাবদাহে খেটে খাওয়া মানুষগুলো সবচেয়ে বিপদে রয়েছেন।

জেলা শহরের রেজিস্ট্রি পাড়ার ইমাম হোসেন, আকুরটাকুর পাড়ার শহিদুল ইসলাম রুমি, বটতলার আনিড়ুর রহমান, তালতলার মঞ্জুরুল ইসলাম, আদি টাঙ্গাইলের গৃহবধূ রহিমা রহমান, থানাপাড়ার জোবায়ের হোসেন, আদালতপাড়ার শিবলীসহ অনেকেই জানান, প্রচন্ড দাবদাহে বাসায় থাকা যায় না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

শহরের হিরা মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মোসলেম উদ্দিন, শাহালম মিয়া, সিদ্দিকুর রহমান, জয়নাল আবেদীনসহ অনেকেই জানান, ক্রেতার চাপ থাকলেও প্রচন্ড গরমে দোকানে বসে থাকা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিং হলে এক থেকে দেড় ঘণ্টার আগে বিদু্যৎ আসে না। ফলে আইপিএস লাগিয়েও সমাধান পাওয়া যায় না। বিদু্যৎ না থাকায় আইপিএসও চার্জ হয় না।

টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান মিরন জানান, টাঙ্গাইল শহর এলাকায়ও প্রতিদিন ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিবার এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে বিদু্যৎ থাকছে না।

টাঙ্গাইল পলস্নী বিদু্যৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, টাঙ্গাইল জোনে পলস্নী বিদু্যতের গ্রাহক সংখ্যা ৬ লাখের বেশি। এ এলাকায় ছোট-বড় মিলে ৪৫০টি শিল্প-কারখানাসহ ও আবাসিক গ্রাহকের জন্য বিদু্যতের চাহিদা রয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ১০৫ মেগাওয়াট। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিং বেড়েছে।

পলস্নী বিদু্যৎ সমিতির ময়মনসিংহ জোনের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. শহীদ উদ্দিন জানান, প্রচন্ড দাবদাহে সারাদেশে লোড বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সর্বোচ্চ লোডশেডিং চলছে। এ জোনের আওতায় ৪ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। বিদু্যতের চাহিদা ৫৫ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট।

বিউবো টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার কামরুজ্জামান জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভায় ৪৭ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। বিদু্যতের চাহিদা ২০ মেগাওয়াট। গত সপ্তাহ পর্যন্ত গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিদু্যৎ সরবরাহ ঠিক ছিল। ৪-৫ দিন ধরে তারা ১২ মেগাওয়াট বিদু্যৎ সরবরাহ পাচ্ছেন। ৮ মেগাওয়াট বিদু্যতের ঘাটতি থাকছে। এই ৮ মেগাওয়াট বিদু্যৎ কেন কম পাওয়া যাচ্ছে তা তিনি জানেন না। ফলে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দিয়ে বিদু্যৎ সঞ্চালন অব্যাহত রাখা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে