রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

লকডাউন না করে দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবিলার চেষ্টায় সরকার

সবার মাস্ক পরা এবং পরস্পরের দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী কীভাবে কাজ করবে তারও পস্ন্যান করা হবে
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
লকডাউন না করে দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবিলার চেষ্টায় সরকার

দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবিলা করতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। সে কারণে আপাতত আর লকডাউন নয়, সবকিছু যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে করোনা মোকাবিলা করার চিন্তা সরকারের। এজন্য ব্যাপক প্রোমোশনাল ক্যাম্পেইন চালানো হবে। সবার মাস্ক পরা এবং পরস্পরের দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী কীভাবে কাজ করবে তারও পস্ন্যান করা হবে।

আসছে শীতে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের আশঙ্কায় নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ওইদিন বিকালে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবরা অংশ নেন। সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশে ব্যাপক লোকজন বাইরে থেকে আসছে ও যাচ্ছে। তাদের কীভাবে প্রিকোশনারিভাবে (সতর্কতা) ট্রিটমেন্ট করব যাতে বাইরে থেকে আর ভাইরাস না আসে। বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর বড় টিম আছে, তারা দেখাশোনা করছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা বসে সভা করে ওয়ার্কপস্ন্যান ঠিক করে ওপেন করে দেব।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা টোটাল প্রোগ্রামকে ভাগ করে নিলাম। ক্লিনিক্যাল সাইটটা এক্সপার্টরা রেডি করবেন। তারা দেখবেন রোগটা বিস্তার করলে কীভাবে ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান হবে। সাপিস্নমেন্টারি ক্লিনিক্যাল সাইট, যেহেতু শীতের সময় অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি থাকবে, সেটাকেও ইমিডিয়েটলি সবাইকে সচেতন করে দেওয়া এবং তারও একটা ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান রেডি করা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের অধিক্ষেত্রের অফিসগুলো কীভাবে চালাবে সেই ব্যবস্থা নেবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'পিআইডি, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদগুলোকে ব্যবহার করে মানুষকে আরও সচেতন করা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্মচারী আছে, তারা এ বিষয়ে কাজ করবেন। গণমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা আছে। সাত থেকে ১০ দিন সময় দিয়েছি এ সময়ে তারা কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করবে।'

বিদেশফেরত যাত্রীদের প্রবেশের বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এয়ারপোর্টে এবং বিভিন্ন এন্ট্রিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন থাকে। বিদেশফেরত অনেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন যে, তারা কোভিড ফ্রি। যারা নিয়ে আসেননি তারা কতদিন সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন, সেই একটা সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন। যাদের এ রকম কোনো সার্টিফিকেট নেই, কোনো কিছু নেই এবং যাদের সন্দেহ হয়, তাদের আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাই। ঢাকায় দিয়াবাড়ি ও হাজী ক্যাম্পে (কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা) আছে।

তিনি বলেন, করোনা যখন পিকে ছিল তখন সাড়ে ৩ হাজারের মতো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ক্যাপাসিটি (ধারণ ক্ষমতা) ছিল। সেখানে দেড় হাজারের ওপর ওঠেনি। এজন্য আমরা এটাকে (ধারণ ক্ষমতা) কমিয়ে ২ হাজারের মতো রেখেছি। এতে আমাদের সাশ্রয় হচ্ছে। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় তাহলে আমরা কোয়ারেন্টিন সুবিধা আবার সাড়ে ৩ হাজারে নিয়ে যাব।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণের পর ছয় মাসের মাথায় ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃতু্যর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০০৭ জনে। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৭৮ জন। সংক্রমণের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি (লকডাউন) শেষে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতায় ফিরতে শুরু করেছে জনজীবন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে