শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে ৩০% রোহিঙ্গা তরুণ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১৫-২৪ বছর বয়সি রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই শিক্ষামূলক কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামের (সিসিএনএফ) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

প্রায় তিন বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকা এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে জানিয়ে কক্সবাজারে উন্নয়ন ও মানবাধিকার বিকাশে সক্রিয় ৫০টি স্থানীয় এনজিও ও সুশীল সমাজ সংগঠনের এই নেটওয়ার্ক রোহিঙ্গা তরুণদের জন্য শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। রোববার আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সিসিএনএফ।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে ৬-১৪ বছর বয়সি রোহিঙ্গা শিশুদেরকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হলেও ১৫-২৪ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতীদের ৮৩ শতাংশই শিক্ষামূলক কর্মসূচির বাইরে।

সিসিএনএফ জানায়, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব ও স্কুলগুলোতে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে রোহিঙ্গাদের আগমনে ভেঙে পড়েছে কক্সবাজারের শিক্ষা কার্যক্রম।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৭ সালে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমন শুরু হলে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি স্কুলকে সেনা সদস্যদের অস্থায়ী ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে অনেক রোহিঙ্গাও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবনে আশ্রয় নেয়। এতে করে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক মাস শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখে।

আরও জানা গেছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এবং ত্রাণ কর্মসূচিতে ব্যবহৃত যানবাহনের ব্যাপক ভিড়ের কারণে অনেক

শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এছাড়া অনেক কলেজছাত্র

এবং শিক্ষক অধিকতর আয়ের সুযোগ পেয়ে ত্রাণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদান করেন। একটি বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষকের মধ্যে সাতজনই শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য চাকরিতে যোগ দেন। এতে করে ওই এলাকার পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে।

রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে শিক্ষা এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক কম গুরুত্ব পাচ্ছে বলে উলেস্নখ করে জানানো হয়, বৈশ্বিক জরুরি ত্রাণ কর্মসূচির মাত্র ২.৬ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে শিক্ষা খাতে।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর প্রায় ছয় হাজার শিক্ষা কেন্দ্রে তিন লাখেরও বেশি শিশু-কিশোরের জন্য লেভেল ১-৪ পর্যন্ত শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। ১৫ বছর বেশি বয়সিদের শিক্ষার সুযোগ না থাকা এবং মিয়ানমার পাঠ্যক্রমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে।

রোহিঙ্গারা নিজের দেশে ফিরে যেতে চায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার আগ্রহও যথেষ্ট। কিন্তু গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়মিত পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন। ফিরে গেলে তাদের শিক্ষাজীবন একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে বলেই তাদের আশঙ্কা।

এসব সমস্যা দূরীকরণে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা নিশ্চিত করতে দাতা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা, পাঠ্যক্রমে কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা, মিয়ানমারের ভাষায় গৃহীত পাঠ্যক্রম এবং এই শিক্ষা কার্যক্রমকে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক স্বীকৃত করার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার আহ্বান জানায় সিসিএনএফ।

এছাড়া মিয়ানমার পাঠ্যক্রমে পাঠদানে সক্ষম পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা, নতুন ও কার্যকর একটি পাঠ্যক্রম তৈরি এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে দেশি-বিদেশি শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে