শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
হবিগঞ্জ

৫৫১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

মো. নুরুল হক কবির
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার -যাযাদি

১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নতি হয় হবিগঞ্জ। মাঝখানে কেটে গেছে প্রায় ৩৭ বছর। এই ৩৭ বছরের নির্মাণ হয়নি হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ চলছে। জেলা কালেক্টরেট ভবনসংলগ্ন দক্ষিণ প্রান্তে এ মিনারটি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে। নবনির্মিত শহীদ মিনারেই এবারের একুশে ফেব্রম্নয়ারি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এর শুভ উদ্বোধন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।

এছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলোও প্রায় সারাবছরই পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়। ফেব্রম্নয়ারি মাস এলেই শুরু হয় রং ও পরিচ্ছন্নতা অর্থাৎ ধোয়ামোছার কাজ।

হবিগঞ্জ জেলায় ১০৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬৫টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এছাড়া কলেজ, হাইস্কুল ও মাদ্রাসা মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১০টি। তার মধ্যে ৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৫৩টি, শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে ৫৮৮টি। সব মিলিয়ে জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো নির্মাণ হয়নি শহীদ মিনার। জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের যেসব উচ্চবিদ্যালয় বা কলেজ আছে তার মধ্যে অধিকাংশ মাদ্রাসাগুলোতে নেই শহীদ মিনার। তবে মাদ্রাসা প্রধানরা জানিয়েছেন, শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শহীদ মিনার না থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মহান ভাষা দিবসের দিন অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা শহীদ মিনারে অথবা পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ না করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শুধু তাই নয়, জেলা শহরে এখনো তৈরি হয়নি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এ অবস্থায় ভাষা দিবসে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়ে থাকে। শায়েস্তাগঞ্জ মডেল কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সাহাব উদ্দিন বলেন, এ মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই। তবে ভাষা দিবস গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়ে থাকে। আর শহীদ মিনার নির্মাণের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। একই কথা জানান, শহীদ মিনার নেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। ১৯২৪ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় জে কে অ্যান্ড এইচ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২২২৫ জন। জেলার সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এই স্কুলে পড়ালেখা করে। ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলে নেই শহীদ মিনার। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই বাঁশের তৈরি শহীদ মিনার স্থাপন করে পালন করা হয় অমর একুশে। প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সরকারিভাবে মাপ নিয়ে গেছে, যদি এ বছরের মধ্যে সরকারি অর্থায়নে না হয় তাহলে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে শহীদ মিনার স্থাপন করা হবে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও সেক্টর কমান্ডার ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায় অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান।

জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রুহুলস্নাহ বলেন, বরাদ্দক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সদর ও জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ১৪৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একযোগে শহীদ মিনার উদ্বোধন করা হয়েছে।

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির তার নির্বাচনী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে তিনি অনেক প্রতিষ্ঠানকে নিজে অনুদান প্রদান করেন। এবং তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসন, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে এগিয়ে আসেন।

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, 'ভাষা আন্দোলন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলভিত্তি। এই ভাষাভিত্তিক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়েই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই নতুন প্রজন্মকে আমাদের শিকড়ের কাছে নিয়ে যেতে শহীদ মিনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।'

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, 'হবিগঞ্জ জেলা সদরে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জেলা সদরে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিই।' জেলা প্রশাসক আরও জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের সূচনালগ্ন থেকে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি ২০২১ সালের ভেতরে শত ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারের কাজ শেষ হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে