সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
কারামুক্তি দিবসে আ'লীগের শুভেচ্ছা

কারও কাছে মাথা নোয়াব না

অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের 'উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ জুন ২০২৩, ০০:০০
কারামুক্তি দিবস (১১ জুন) উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান দলীয় নেতারা -ফোকাস বাংলা

'যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে সরাবো জঞ্জাল, এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার'- কবি সুকান্ত ভট্টচার্যের 'ছাড়পত্র' কবিতার এই অংশ আওড়িয়ে 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, কারও কাছে মাথা নত করব না। যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ জঞ্জাল সরাতে কাজ করে যাবো।'

মাধ্যমিক থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে 'উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম' উদ্বোধন; 'বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩'র সেরা মেধাবী পুরস্কার ও 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড-২০২২' প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রোববার তার কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। আত্মমর্যাদা নিয়ে, আত্মসম্মান নিয়ে চলবে। কারও কাছে মাথা নোয়াব না। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা।'

অনুষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ছোট্ট সোনামণিদের কাছে আমার পরামর্শ সব সময় মাথায় রাখতে হবে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলি না। মাথা উঁচু করে আমরা চলি, মাথা উঁচু করে চলবো। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল, কাজেই আমরাও পথ দেখাতে পারি। আমাদের মেধাবী ছেলেমেয়েরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।'

এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন, পারবে না? শিক্ষার্থীরা সমস্বরে 'পারব' বলে নিজেদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।

আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে জাতির হাল ধরবে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশের মানুষকে ভুলবে না। মানুষের জন্য কিন্তু সব। জাতির পিতা বলেছিলেন- শিক্ষিত ভাইয়েরা, আপনাদের লেখাপড়ার যে খরচ জনগণ দিয়েছে তা শুধু আপনাদের সংসার দেখবার জন্য নয়। দিয়েছে এই জন্য যে তাদের জন্য আপনারা কাজ করবেন, তাদের সেবা করবেন। তাই জনগণের সেবা করতে হবে। জনসেবার চেয়ে আর কোনো কিছু বড় না।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে শিক্ষিত জাতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা একটা কথা বলতেন; দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য শিক্ষাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। জাতির পিতা বলেছেন, শিক্ষায় যত অর্থই ব্যয় হোক এটা হচ্ছে বিনিয়োগ। শিক্ষিত জাতি ছাড়া দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না। তার জন্যই আজকে আমাদের সব উদ্যোগ এই শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা নিয়ে যাচ্ছি।'

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এ সময়। তিনি বলেন, 'বিশ্ব পরিবর্তনশীল, এই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। আজকে প্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের যুগ, গবেষণার যুগ।'

তিনি বলেন, '২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ করব বলে ঘোষণা দেই, তারপর থেকে আমরা উদ্যোগ নেই। আজকে আমরা সফল হয়েছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানের সঙ্গে যদি আমরা তাল মিলিয়ে না চলতে পারি তাহলে সামনের দিকে এগোবো কীভাবে? আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম বলে করোনা মোকাবিলা আমাদের জন্য সহজ হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সবদিক থেকে এগিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য খাতের গবেষণায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে এখন আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা কৃষিতে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা এতটা করতে পারছি না। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি প্রথমে সরকারে এসে দেখি এখানে গবেষণার জন্য কোনো ফান্ড নেই। কোনো টাকা নেই, গবেষণার দিকে কারও দৃষ্টি নেই। এমনকি বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী পাওয়া যায় না, এমন একটা অবস্থা ছিল। আমাদের প্রায়োরিটি ছিল কৃষি, খাদ্য নিশ্চিত করা। কৃষি গবেষণায় আমরা সফল হলাম। তিন-চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হলাম। বাংলাদেশের গবেষকরা সব উৎপাদন করতে পারে। আমাদের ছেলেমেয়েদের যে মেধা, সেই মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে এই দেশ আর কখনো পেছাতে পারবে না। এগিয়ে যাবো এটাই আমাদের বাস্তবতা।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার পথ চলা এত সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত, গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলা, অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। তারপরও আমি হাল ছাড়িনি। যার ফলে আজকে বলতে পারি বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'বিশ্ব পরিবর্তনশীল, এই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আজকে প্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের যুগ, গবেষণার যুগ। আমি ২১ বছর পর যখন ক্ষমতা পেলাম, তখন আমি শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিলাম। একটা প্রজেক্ট নিয়েছিলাম নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। শিক্ষার্থীরাই শুধু শিক্ষা পাবে তা না, বয়স্করাও যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, এক একটা জেলাকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা দিয়ে অনেকটা সফল হয়েছিলাম। পাঁচ বছর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ প্রকল্প বাদ করে দেয়।'

বিগত সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সরকারের অগ্রগতি ও সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বাংলাদেশে। এই প্রথম, ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। আর সেটা আছে বলেই আজকে আমাদের দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।'

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এর আগে, স্বাগত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্মৃতি কর্মকার। তিনি জানান, মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের প্রায় ৫৩ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তি ও টিউশন ফি হিসেবে মোট ১২০০ কোটি টাকা পাচ্ছে। এই উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ করা হবে মোবাইল ফাইন্যান্স সেবার মাধ্যমে।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ এ ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ১৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থী পুরস্কার পেয়েছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২২ পেয়েছেন ২২ জন শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত ৫ শিক্ষার্থী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।

কারামুক্তি দিবসে আ'লীগের শুভেচ্ছা

এদিকে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপস্নব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে