সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ ভোজ্যতেলের দাম

এবারও অজুহাত 'আগের কেনা'
সাখাওয়াত হোসেন
  ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

সরকার ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও এখনো তা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। দোকানিদের দাবি, তাদের কাছে থাকা সব মাল 'আগের কেনা' তাই নতুন দামে বিক্রির সুযোগ নেই। আগের কেনা মাল বিক্রি শেষ হলে এবং নতুন চালানে মাল পাওয়ার পর তা সরকার ঘোষিত দামে বিক্রি করতে পারবে। তবে 'আগের কেনা' ভোজ্যতেল কতদিনে বিক্রি শেষ হবে দোকানিরা সে দিনক্ষণ বেঁধে দিতে পারেননি।

দোকানিরা বলছেন, সরকার দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও তা কবে থেকে কার্যকর হবে তা নির্ধারণ করেনি। তাই নতুন দামে দোকানে তেল পেতে কয়েকদিন সময় লাগবে। আগের কেনা মাল লসে বিক্রি করা যাবে না এটাই স্বাভাবিক।

তবে মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের আমদানি মূল্য হ্রাস পাওয়ায় সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমিয়েছে দেশের পরিশোধন কোম্পানিগুলো। রোববার থেকেই বাজারে এই দাম কার্যকর হবে। তবে বাজারে বাড়তি দরে কেনা যে সয়াবিন আছে, তা কীভাবে বিক্রি হবে, সে ব্যাপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বিগত সময়ের বাজার চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিবার সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যেই দোকানিরা আগের দামে মাল বিক্রি বন্ধ করে দেন। এমনকি পণ্যের গায়ে পুরনো মূল্য লেখা থাকলেও তা নতুন দামে বিক্রি করা হয়। এ অপতৎপরতা বন্ধে ভোক্তা অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকে দোকানে থাকা পণ্য বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন গুদামে লুকিয়েও রাখা হয়। যার ছোট একটি অংশ বিভিন্ন অভিযানে জব্দ করা হয়েছে।

সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, রামপুরা, মগবাজার, শান্তিনগর ও মিরপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব দোকানেই আগের দামেই বোতলজাত ও খুচরা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ বাজারের মুদি দোকানি জহিরুল হক বলেন, 'এগুলো সব আগের দামে কেনা তেল। নতুন দামে এখনো তেল দোকানে আনা হয়নি। পাইকারি বাজারেও নতুন দামে তেল বিক্রি হচ্ছে এমন খবর এখনো পাইনি। তাই নতুন দরে বিক্রি করলে লিটারে ১০ টাকা লোকসান গুনতে হবে।'

রামপুরা মহানগরের সাশ্রয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক তৌহিদুল জানান, নতুন দামে তেল বিক্রির কোনো নির্দেশনা তারা এখনো পাননি। এজন্য আগের দরে তেল বিক্রি করছেন। তবে নির্দেশনা পেলেও দোকানের আগের কেনা মাল বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত নতুন দামে তেল বিক্রি সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন এই দোকানি।

শান্তিনগর বাজারের দোকানি মোহন লাল বলেন, আগের তেল বিক্রি শেষ করতে আরও অন্তত এক সপ্তাহ লাগবে। আগের কেনা মাল বিক্রি শেষ না করে কেউই নতুন দামে তেল বিক্রি করবেন না। এছাড়া নতুন দামের তেল এখনো সরবরাহ করা হয়নি। তবে কোম্পানির প্রতিনিধিরা নতুন দামে তেল দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

সরকার কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দোকানিরা দাম বাড়িয়ে দেন, তাহলে দাম কমলে আগের কেনা পণ্য শেষ হতে হবে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মোহন লাল বলেন, 'এটা সবখানেই হয়। এটা নতুন কিছু না। লাভ করার জন্যই সবাই ব্যবসা করেন, গচ্চা দেওয়ার জন্য না।'

নতুন দামে তেল বিক্রি না হওয়ায় ক্রেতাদের অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। মালিবাগ বাজারে তেল কিনতে আসা মোটর পার্টস ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, দাম কমেছে শুনে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু দোকানিরা আগের দামই চাইছে। এ নিয়ে এক দোকানির সঙ্গে তাকে বাগ্‌বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।

আনোয়ার হোসেন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, বাজারে দাম না কমলে এ ধরনের ঘোষণা দেওয়ার কোনো মানে নেই। দোকানিদের কথিত 'আগের কেনা' মাল বিক্রি শেষ হতে ঈদ ঘনিয়ে আসবে। অথচ এর আগেই সবাই পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেল কিনবেন।

এদিকে শুধু খুচরা বাজারই নয়, পাইকারি কারওয়ান বাজারের চিত্রও একই। এই বাজারে তেলের ডিলার জয়নাল আবেদীন বলেন, 'পাইকারি বাজারে এখন তেল সরবরাহে ঘাটতি নেই। চাহিদামতো তেল এখন পাওয়া যাচ্ছে। তবে তেলের নতুন দাম ঘোষণার পর এখনো তেল আসেনি। সাধারণত দাম নির্ধারণের তিন-চার দিন পর নতুন দামের তেল সরবরাহ শুরু করেন মিল মালিকরা। তখন নতুন দামে তেল বিক্রি করা যাবে।'

অন্যদিকে, সরকার নির্ধারিত দরে বাজারে তেল বিক্রি না হলেও এ নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারি কোনো সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়েনি। এমনকি বাজারে নতুন দরে তেল বিক্রি হচ্ছে কিনা তার খোঁজ-খবর নেওয়ারও কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত রোববার লিটার প্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৯৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৮৯ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সরকার। এছাড়া খোলা তেলের দাম কমিয়ে লিটার ১৬৭ টাকা করা হয়েছে। পাম তেলের দাম ২ টাকা কমিয়ে ১৩৩ টাকা করা হয়েছে।

এর আগে গত ৪ মে বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ সময় ৫ লিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৬০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৯ টাকা বাড়িয়ে ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি লিটার পামতেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৫ টাকা। দর বৃদ্ধির এ ঘোষণার পর বাজার চড়তে এক ঘণ্টাও সময় লাগেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে