সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অল্প বৃষ্টিতেই সড়ক জলাবদ্ধ!

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টিতে জলযটের অস্বস্তি
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০
সোমবার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে যান চলাচলসহ ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ছবিটি মুগদা কবরস্থান রোড থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

'...বাড়ি তো নয় পাখির বাসা- ভেন্না পাতার ছানি/একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।' পলস্নী কবি জসীমউদ্‌দীন-এর আসমানী কবিতায় বর্ণিত সেই রসুলপুরের আসমানীদের মতো বাড়ি এখন খুঁজে পাওয়া না গেলেও বৃষ্টি হলেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বর্ষা মৌসুমেই এই ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয় নগরবাসীকে।

সপ্তাহখানেক ধরে তীব্র তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের জীবনযাত্রা। গত দুই দিন ধরে তাপমাত্রা কমে যায় এবং কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়। অবশ্য, এক দিন বাদেই প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন ঘটবে- যার আবহ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। কিন্তু বৃষ্টি বেশিক্ষণ না হলেও রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়ক ও অলি-গলিতে পানি জমে যায়। এরপর জলাবদ্ধ সড়কে যখন যানবাহন চলছিল, তখন নদীর ঢেউয়ের মতো দৃশ্য দেখা যায়। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে ফুটপাতেও। যাতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। সরেজমিন দেখা যায়, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর- ১০ ও ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থামার পর দুপুরে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় এই জলাবদ্ধতা। কর্মজীবী, শ্রমজীবী মানুষ বৃষ্টি আর পায়ে শহরের জলাবদ্ধতা ঠেলে পৌঁছায় যার যার গন্তব্যে।

বিশেষ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর ও এর আশপাশের এলাকায় বড় ধরনের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় বৃষ্টির পানি জমে থাকার পর মেট্রোরেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ড্রেন লাইন পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মিরপুর প্যারিস রোড, মিরপুর অরিজিনাল-১০ এ দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকতে দেখা যায়।

পথচারীরা জানান, একটু বৃষ্টি এলেই মিরপুর ১০ এলাকায় দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকে। ভারী বৃষ্টিতে প্রায় হাঁটু পানি জমে যায়।

কাজি হাসেম নামে এক পথচারী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মেট্রো থেকে নেমেছি, যাব মিরপুর-১৪। কিন্তু বাসে ওঠার মতো উপায় নেই। রাস্তায় পানি। অপেক্ষায় আছি কোনো বাস কাছে ঘেঁষলে উঠব।'

বেসরকারি চাকরিজীবী খাদেমুল ইসলাম। তিনি জলাবদ্ধ সড়কে রিকশাযোগে গুলশান দিয়ে তার গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'অফিসের কাজে বাইরে বের হয়ে বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কবলে পড়লাম। এই সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে এর ওপর দিয়ে যখন যানবাহন যাচ্ছে তখন সৃষ্ট ঢেউ গায়ে এসে পড়ে জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে গেল।'

একই সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় জলাবদ্ধতার কারণে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায় এরশাদ আলীর সিএনজির। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'সিএনজির জন্য জলাবদ্ধতা খুব ভয়ের, কারণ যে কোনো সময় স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। আমার আজ তাই হয়েছে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে গেছে ইঞ্জিন। পেছনে লেগে গেছে যানজট। উপায় না দেখে ঠেলেই নিয়ে যেতে হচ্ছে গাড়ি।'

মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'সামান্য বৃষ্টিতে মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি সড়ক, লিংক রোড সংলগ্ন আদর্শ নগরের সড়ক জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ডিআইটি সড়ক পার হয়ে মূল রাস্তায় আসতে হলো।'

পুরান ঢাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বংশাল রোড, নাজিমুদ্দিন রোডে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা হয়েছে।

একই অবস্থা দেখা যায় আগারগাঁও থেকে মহাখালী আসার নতুন রাস্তা, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় সড়কে, ধানমন্ডির সড়ক, পান্থপথ, নিউ মার্কেট ও শুক্রাবাদ সড়কে।

এদিকে সোমবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, আগামী দুই দিনে আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এ ছাড়া আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দেশের অবশিষ্টাংশে বিস্তার লাভ করতে পারে।

এর আগে রোববার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যশোরে এবং ঢাকায় সর্বোচ্চ ছিল ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দেশে সর্বোচ্চ ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকুন্ডে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে