সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
কাউন্সিলর কার্যালয়ে পরাজিত প্রার্থীর হামলা

রাজশাহীর ৩০ ওয়ার্ডের ২২টিতে আ'লীগের জয়, ৫টিতে বিএনপি

রাজশাহী অফিস
  ২৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডের ২৩টিতেই পুরনো কাউন্সিলররা জয়ী হয়েছেন। জয়ী কাউন্সিলরদের মধ্যে ২২ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে জয়ী হয়েছেন একজন ও বিএনপির পাঁচজন।

এ ছাড়াও দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন। তাদের একজন বিএনপি পরিবারের সদস্য ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান। তিনি দলে সক্রিয় নন। আরেকজন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য শহিদুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে চলাফেরা করেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে বিএনপি থেকে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেই তালিকায় শহিদুল ইসলামের নাম ছিল না।

অপরদিকে, বিএনপির বহিষ্কৃত ১১ নেতাকর্মীর মধ্যেও পাঁচজন কাউন্সিলর পদে জিতেছেন। তবে জামায়াতে ইসলামীর সাতজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সবাই হেরে গেছেন। বুধবার রাতে শিল্পকলা একাডেমি থেকে রিটার্নিং অফিসার বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।

এবার নতুন যে সাতজন কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন, তারা হলেন- চার নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বাবু, বোয়ালিয়া থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আলিফ আল মাহমুদ ওরফে লুকেন। তিনি তার চাচা টানা চারবারের বর্তমান কাউন্সিলর তরিকুল আলমকে হারিয়েছেন।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন নগরের মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন। তিনি আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলরকে পরাজিত করেছেন। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহের হোসেন সুজা, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ কর্মী মনিরুজ্জামান, আট নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা জানে আলম ওরফে জনী ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা আবু বক্কর ওরফে কিনু।

এবার নির্বাচনে দুটি ওয়ার্ড আলোচিত ছিল। এর একটি ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শাহ মখদুম থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক ওরফে সুমন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন। এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ছুরিকাঘাতের ঘটনা, মোটর সাইকেল ও কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়। এরপর থেকে ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন ছিল।

আলোচিত অন্যটি হচ্ছে সাত নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের প্রার্থী ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব মৈত্রীর নেতা মতিউর রহমান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থক জহিরুল ইসলাম। এই জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মতিউর রহমান আচরণবিধি ভঙ্গের একাধিক অভিযোগ করেছেন। নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছিলেন। এরপরও মতিউর রহমানের মিছিলে ককটেল হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাল্টা অভিযোগ এনে জহিরুল ইসলাম থানা ঘেরাও করেছিলেন। এ নিয়ে ওই ওয়ার্ডে ব্যাপক উত্তেজনা ছিল। তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর যারা পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন, তারা হলেন এক নম্বর ওয়ার্ডে রজব আলী, দুই নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম, তিন নম্বর ওয়ার্ডে কামাল হোসেন, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে কামরুজ্জামান, ছয় নম্বর ওয়ার্ডে নূরুজ্জামান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রাসেল জামান, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আব্বাস আলী সরদার, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সরিফুল ইসলাম, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল মমিন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনার, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে শাহাদাত আলী, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রবিউল ইসলাম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত), ২১ নম্বর ওয়ার্ডে নিযাম উল আযীম, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল হামিদ সরকার, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাহতাব হোসেন চৌধুরী ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের আরমান আলী।

বিএনপির ওয়ার্ড কাউন্সিলর যারা পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন, তারা হলেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির নেতা আবদুস সোবহান ওরফে লিটন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক যুবদল নেতা বেলাল আহম্মেদ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা আশরাফুল হোসেন ওরফে বাচ্চু।

কাউন্সিলরের কার্যালয়ে পরাজিত প্রার্থীর হামলা

এদিকে রাসিক নির্বাচনে পরাজিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিজয়ী প্রার্থীর দুই সমর্থকের বাড়িতে হামলা, সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী ওয়ার্ড কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিজয়ী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর ও বিএনপির সাবেক নেতা।

বিজয়ী প্রার্থীর নাম আবদুস সোবহান লিটন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিটন শাহ মখদুম থানা বিএনপির সাবেক সহ সম্পাদক। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে অংশ নেওয়ায় সম্প্রতি তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

অভিযুক্ত পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম মোস্তাফিজুর রহমান পরশ। তিনি নগরের বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে এই তান্ডব চালানো হয়।

বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আবদুস সোবহান টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে দুই হাজার ২৫৮ ভোট পেয়ে আবারও কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজুর রহমান পরশ ঠেলাগাড়ি প্রতীকে পেয়েছেন দুই হাজার ১৩৮ ভোট। ১২০ ভোটে তিনি পরাজিত হন।

আবদুস সোবহান বলেন, 'কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল দেখে মোস্তাফিজুর দুই ঘণ্টা ফলাফল আটকে রাখেন। তিনি ফল পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। না পেরে কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে মোস্তাফিজুর তার কর্মীদের নিয়ে প্রথমে উজ্জ্বল নামের এক সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালান। ওই বাড়িতে হামলার পর নগরের দড়িখড়বোনা মোড়ে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী ওয়ার্ড কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর দড়িখড়বোনা এলাকায় এনামুল হক নামের আরেক সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।'

পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান পরশকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে