সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাহিদার তুলনায় ২০ হাজার পশু কম

১ হাজার কোটি টাকা বিক্রির আশাবাদ
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ২৭ জুন ২০২৩, ০০:০০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৩ হাজার ৮৯১টি খামারে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৬৬টি গবাদি পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে জেলায় কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার গবাদি পশু। চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন হয়েছে ২০ হাজার গবাদি পশু। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. কাজি নজরুল ইসলাম জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাকি ২০ হাজার গবাদি পশুর চাহিদা পূরণ করবেন। এছাড়া জেলায় বহু কৃষক পরিবার কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য দুই থেকে তিনটি করে গবাদি পশু লালন-পালন করছেন; যার জন্য জেলায় কোরবানির পশু নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার গবাদি পশু কেনাবেচা হবে। ইতোমধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোরবানির হাটে গবাদি পশু বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, জেলার সদর উপজেলায় ৪১০৬টি, সরাইল উপজেলায় ৯৬৬টি, আখাউড়া উপজেলায় ৬৭৪টি, কসবা উপজেলায় ২১৩৬টি, নাসিরনগর উপজেলায় ১৬০৭টি, নবীনগর উপজেলায় ১৫৯৫টি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ১২৫০টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় ৯৩৭টি ও বিজয়নগর উপজেলায় ৬২০টি খামার রয়েছে।

এসব খামারে ৫২০৭৭টি ষাঁড়, ১৯১৯৫টি বলদ, ১৭৬৮৪টি গাভী, ১২২১৩টি মহিষ, ১৩৫৮৮টি ছাগল, ৫৯০৭টি ভেড়া, অন্যান্য ৩২টি পশু লালন-পালন করা হয়েছে।

এছাড়াও অনেক কৃষক পরিবারেই কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য দুই থেকে তিনটি করে গবাদি পশু লালন-পালন করছেন।

এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন উপজেলায় কোরবানির হাট বসেছে ৭১টি। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় পৌরসভার একটিসহ মোট ৫টি, সরাইল উপজেলায় ৯টি, নাসিরনগর উপজেলায় ৯টি, আখাউড়া উপজেলায় ৫টি, কসবা উপজেলায় ১১টি, নবীনগর উপজেলায় ১৩টি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৫টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় ৬টি ও বিজয়নগর উপজেলায় বসবে ৮টি কোরবানির হাট।

এসব হাটে কাজ করবে ৫৩টি মেডিকেল টিম। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬টি, সরাইল উপজেলায় কাজ করবে ৪টি, নাসিরনগর উপজেলায় কাজ করবে ৯টি, আখাউড়া উপজেলায় কাজ করবে ৫টা, কসবা উপজেলায় কাজ করবে ৩টি, বাঞ্চারামপুর উপজেলা কাজ করবে ৫টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় কাজ করবে ৬টি, বিজয়নগর উপজেলায় কাজ করবে দু'টি টিম।

সরেজমিনে কয়েকটি খামারে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে খামারের  মালিক-কর্মচারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। খামারিরা রুটিন মাফিক গবাদি পশুর পরিচর্যা করছেন। প্রতিটি খামারেই কাজ করছেন ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক। গবাদি পশুকে গোসল করানো, খাবার দেওয়াসহ পশুর গোবর পরিষ্কার করেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের নয়নপুর এলাকার রূপচান্দ বিবি ডেইরি খামারে দেখা যায়, ওই খামারে কোরবানির জন্য শতাধিক দেশীয় গরু লালন-পালন করা হচ্ছে।

খামারের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'গত বছর আমরা দেড় শতাধিক গরু লালন-পালন করেছিলাম। ওই বছর ৩০টি গরু বিক্রি করতে পানিনি। সে সময়ের থাকা ৩০টি গরুসহ এই বছর শতাধিক গরু লালন-পালন করেছি। সবগুলোই দেশীয় জাতের। প্রতিদিন গরুগুলোকে দুই থেকে তিনবার করে মোটরের পানি দিয়ে গোসল করাই। গরুর যাতে গরম না লাগে সেজন্য ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়। বেশির ভাগ সময় দেওয়া হয় ঘাস।'

তিনি বলেন, 'এ বছর গুরুর খাবার ও ঔষধপত্রসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তাই গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি গরুতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি  খরচ হয়েছে। আশা করি, এই আমাদের সবগুলো গরু বিক্রি হবে, দামও ভালো পাব।' 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের গোকর্ণঘাটের নিউ প্রিন্স ডেইরি খামারে কোরবানির জন্য ২৬০টি গরু লালন-পালন করা হয়। ইতোমধ্যেই তারা ৩০টি গরু বিক্রি করে ফেলেছেন। এই খামারে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন্ন দেড় লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে।

খামারের মালিক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, '২৬০টি গরুর মধ্যে ৩০টি বিক্রি করে দিয়েছি। ঢাকা, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা খামারে এসে গরু কিনে নিয়ে গেছেন।' তিনি বলেন, 'খামারের বড় গরুটা ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। খামারে ১৮ জন শ্রমিক কাজ করে।' তিনি বলেন, 'এই বছর প্রতি গরু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। এছাড়াও এ বছর গবাদি পশুর খাবার ও ঔষধপত্রের দাম বেশি।'

এ ব্যাপারে খান অ্যাগ্রো ডেইরি ফার্মের কর্ণধার ও জেলা ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সাইফুদ্দিন খান শুভ্র জানান, জেলায় প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ খামারি রয়েছেন। গো-খাদ্যের দাম বাড়াতে গরুর মাংসের দাম বেড়ে গেছে। দানাদার খাবারের পরিবর্তে গো-খাদ্যের জন্য ঘাসের উৎপাদন বাড়াতে পারলে গরুর দাম অনেক কমে যাবে।'

তিনি বলেন, 'এ বছর বিক্রির জন্য ১০৭টি গরু প্রস্তুত করেছি। আমি খামার থেকেই গরু বিক্রি করি। ভারত থেকে চোরাইপথে গরু না আসলে স্থানীয় খামারিরা লাভবান হবে।'

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. কাজী নজরুল ইসলাম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাহিদার তুলনায় ২০ হাজার গবাদি পশু কম থাকলেও এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য জেলা থেকে গরু কিনে এনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্রি করবে। এতে জেলার চাহিদা পূরণ হবে। তিনি বলেন, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার গবাদি পশু বিক্রি করা হবে বলে আশা করছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে