সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক দফা আন্দোলনের ধরন ভিন্নরকম হবে : ফখরুল

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ধরন 'ভিন্ন রকম' হবে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে সরকার বাধ্য হবে নতি স্বীকার ও পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে।

শনিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে চলমান আন্দোলন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, তারুণ্যের সমাবেশ হচ্ছে, সামনে পদযাত্রার কর্মসূচি শুরু হবে। এক দফাতে আন্দোলনও শুরু করা হবে। সেটা নিঃসন্দেহে গত আন্দোলনগুলোর চেয়ে ধরন হবে একটু ভিন্ন এবং জনগণের সম্পৃক্ততাও বাড়বে।

এক দফার আন্দোলনের ধরন কেমন হবে, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থাকবে কি-না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আগেই বলেছি, হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি

সচেতনভাবে চাচ্ছি না। ভায়োলেন্সে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তবে সরকার যদি কোনোভাবে ওইসব দিকে ঠেলে দেয় তা সরকারের দায়। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে চাই।

সরকারের উন্নয়ন 'বিভ্রম' উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ যে, জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা। কয়েকটা বইও বেরিয়েছে যে, বাংলাদেশের উন্নয়নের যে একটা ব্যাপার বার বার বলা হচ্ছে, এটা আসলে উন্নয়ন 'বিভ্রম'। এটা মানুষকে বোকা বানানো হয়, প্রতারণা করা হয়। যা পরিসংখ্যানের তথ্যের মধ্যে অনেক কিছু সরবরাহ করা হয় যে তথ্যগুলো সঠিক নয়। এটা আজ থেকে নয়, এই সরকার আসার পর থেকেই।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এতই যদি উন্নয়ন হয়ে থাকে, কৃষি ক্ষেত্রে যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে প্রতি বছর কেন প্রায় ৫৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়? মরিচের দাম বেড়েছে, আদার দাম তো একদিনে ২শ' টাকা কেজিতে বেড়ে গেছে। এ রকম প্রক্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। দেশটাকে তারা মূলত আমদানিনির্ভর করে ফেলেছে। এর কারণটা হচ্ছে একটাই, আমদানি করতে গেলে যে কমিশন পাওয়া যায়, যে লাভটা হয়- এটাই হচ্ছে প্রধান বিষয়। এই সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লুট করা।

নির্দলীয় সরকারের বিষয়টি সংবিধানে সংযোজন 'সরকারের দায়িত্ব' উলেস্নখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। সরকারের জনগণের প্রতি যদি ভালোবাসা থেকে থাকে, দেশের প্রতি যদি কোনো প্রেম থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে যে, এই রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য তাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আলোচনা করেই তারা একটা পথ বের করতে পারে। এটা অতীতে বাংলাদেশে হয়েছে। এটা খুব কঠিন কাজ না। প্রয়োজনীয় সংশোধনী করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে তাহলে একটা পথ তৈরি হবে।

জামায়াতে ইসলাম বিএনপির বি-টিম আওয়ামী লীগের বক্তব্য নাচক করে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলো বাজে কথা। তারা ইচ্ছা করে এসব কথা বলে। তাই এসব কথার উত্তর দিতে চাই না। জনগণই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের কথাগুলোর উত্তর দিয়ে দেবে।

জামায়াতে ইসলাম নিয়ে দলের অবস্থান কি জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জামায়াত একটা রাজনৈতিক দল, অনেক দিন ধরে রাজনীতি করছে, জাতীয় পার্টিও রাজনৈতিক দল। এখন সরকারের বিরুদ্ধে যারাই আন্দোলন করবে তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। এখন যুগপৎভাবে আন্দোলন করছি, জোটবদ্ধ আন্দোলন করছি না। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল যারা মনে করে যে, জামায়াতে ইসলাম তারা নিজস্ব জায়গা থেকে আন্দোলন করছে।

জাতিসংঘের শান্তি মিশনের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সমস্ত কথা বলে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা, রাজনৈতিক সংকট থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে লাভ হবে না। এবার আমাদের লক্ষ্য স্থির, জনগণের লক্ষ্য স্থির- এটাই আন্দোলন এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।

এ সময় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সদস্য শায়রুল কবির খান এবং সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের কালীবাড়িস্থ নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মুখে মুখে জামায়াত বিরোধিতার ধুয়া তুললেও সরকারের সঙ্গে জামায়তের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারকে তারা দেখতে চায় না। সরকার নিজেরাই রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে রেখেছে। এক দলীয় শাসনব্যাস্থা কায়েমের জন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে