সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শঙ্কা থাকলে বিশ্বনেতারা বিশেষজ্ঞ পাঠাতে পারেন

ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের
যাযাদি রিপোর্ট
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আজকের ছাত্র সমাবেশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের -ফোকাস বাংলা

শান্তিতে নোবেলজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কেউ শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করলে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হবে। এখানে হস্তক্ষেপের কিছু নেই। মামলা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকলে তা যাচাই করতে বিশ্বনেতারা বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ পাঠাতে পারেন।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ছাত্রলীগের সমাবেশস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে এ কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা আওয়ামী লীগ করেনি। বঞ্চিত শ্রমিকরা এখানে মামলা করেছে। কেউ ট্যাক্স ফাঁকি দিলে, গরিবের অর্থ আত্মসাৎ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে না?

তিনি আরও বলেন, আজকে দেশের বৈধ সরকারকে হটাতে ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদি, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির যে চক্রান্ত চলছে ছাত্রলীগের সমাবেশ থেকে তার প্রতিবাদ করা হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নৌকার অভিযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে তরুণ প্রজন্ম। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত

থাকবেন। এই সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরুণদের দিকনির্দেশনা দেবেন।

সমাবেশস্থল পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ অন্যান্য নেতারা।

গুম-অপহরণ নিয়ে বক্তব্য অসত্য

এদিকে এদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, গুম ও অপহরণ নিয়ে বিএনপি নেতাদের দেওয়া বক্তব্য অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট। বিদেশি বন্ধু ও প্রতিনিধিদের করুণা লাভের আশায় তারা ধারাবাহিকভাবে গুম-খুন নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের ফলে যেসব গুম ও খুনের ঘটনা ঘটেছে, সেটার দায় সরকারের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর দায় চাপানো হয়েছিল সরকারের ওপর। কিন্তু পরে দেখা যায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জামাল উদ্দিন নিজ দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা গুমের শিকার হন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। একইভাবে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার পরও সরকারের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। পরবর্তীকালে দেখা যায় তিনি ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন। এমনকি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনায় দলটির এক সিনিয়র নেতা তার বক্তব্যে বলেছেন, ইলিয়াস আলীকে বিএনপির লোকজনই গুম করেছে, যা পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গুম নিয়ে বিএনপি মিথ্যা বয়ান তৈরির মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। অথচ তাদের গুমের নাটকের নেপথ্যের আখ্যান আজ দেশবাসীর অজানা নয়।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, এদেশে হত্যা-কু্য-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। জিয়াউর রহমানই এদেশে গুমের রাজনীতির সূচনা করে। তার শাসনামলে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ বাবুকে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে গুম করে হত্যা করা হয়। তার মরদেহটাও পরিবারের সদস্যরা খুঁজে পায়নি। চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা মৌলভী সৈয়দকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জিয়া নিজের অবৈধ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে তথাকথিত বিদ্রোহের অভিযোগে সেনা ও বিমান বাহিনীর শত শত মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সহস্রাধিক সৈনিককে হত্যা করেছিল। এমনকি সেসব সেনা অফিসার ও জোয়ানদের অনেকেরই মরদেহ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবারের সদস্যরা এখনো জানেন না তাদের কোথায় দাফন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেসব ঘটনায় হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর শেষ চিহ্নটুকু পাওয়ার জন্য তাদের পরিবারের সদস্যরা আজও তীর্থের কাকের ন্যায় অপেক্ষা করে যাচ্ছে। নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের শিকার সেসব সেনা অফিসার ও জোয়ানদের পরিবারের সদস্যরা সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া 'অপারেশন ক্লিন হার্ট'র নামে আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল এবং এই বেআইনি হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিতে ইনডেমনিটি আইন করা হয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে আওয়ামী লীগের ২৪ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। এমনকি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সরাসারি তত্ত্বাবধানে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হাওয়া ভবনের নির্দেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে গণহত্যা সংঘটিত করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হত্যা-খুন-গুমের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বরং আওয়ামী লীগই বার বার হত্যা-কু্য-খুন-গুম ও ষড়যন্ত্রের অপরাজনীতির নির্মম শিকার হয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সীমাহীন ত্যাগ ও সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে পাহাড় সমান প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর। যেখানে সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত ও সুসংহত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে