রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আপসের কথা বলে মিথ্যাচার করছে সরকার :ফখরুল

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
বুধবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক পেশাজীবী কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -যাযাদি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আন্দোলনে ভীত হয়ে সরকার 'আপসের কথা বলে মিথ্যাচার করছে। তাদের মতো মিথ্যা কথা পৃথিবীতে আর কেউ বলে না। এবার গোটা জাতি দেশে এবং বিদেশে সবাই ঐক্যবদ্ধ। তারা দেশে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দেখতে চায়।

বুধবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক পেশাজীবী কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদ আয়োজনে এই কনভেনশনে সারা দেশ থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার দেড় সহস্রাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ভয় নাই ভয় নাই, তলে তলে আপস হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলে স্বীকার করলেন- তারা ভয়ে ছিলেন।' সেই ভয় কাটানোর জন্য এখন মিথ্যা বলছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বললেন, 'দিলিস্ন আছে, আমরাও আছি, আমরা আছি, দিলিস্ন আছে।' বাহ ! এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কি বলতে চেয়েছেন। দিলিস্ন কি আপনাদের অপকর্মগুলোতে ইতোমধ্যে সমর্থন দিয়েছে? আপনাদের জানিয়ে দিয়েছে যে, এবারও একতরফা নির্বাচন করতে থাকো ? দিলিস্ন কি বলেছে যে, বাংলাদেশে জোর করে নির্বাচন ঘোষণা কর ? যদি বলে থাকে তাহলে সেটাও পরিষ্কার করে বলেন।

নির্বাচন নিয়ে সরকারের তৎপরতার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, এর মানে এই নয় যে, আঘাত করলে প্রত্যাঘাত করব না। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের সংসদ তৈরি করতে হবে। তাই আর কালবিলম্ব না করে এখনই রাস্তায় নেমে আসতে হবে, রাজপথে আসতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে, পরাজিত করতে হবে ফ্যাসিস্টকে।

খালেদা জিয়ার বার্তা ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বার্তা পাঠিয়েছেন। গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই, কোনো শর্ত মেনে তিনি কোথাও যাবেন না। খালেদা জিয়া তাদের অনুপ্রেরণা, তাদের বাতিঘর। আজকে তিনি লড়াই করছেন মৃতু্যর সঙ্গে। ওয়ান ইলেভেনেও বলা হয়েছিলো, বিদেশে চলে যাও। তিনি বলেছেন, এই দেশ ছাড়া কোথাও তার জায়গা নেই। তখন কিন্তু অন্যরা (শেখ হাসিনা) বিদেশে চলে গিয়েছিলেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ৪০১ ধারায় বলা আছে, সরকারের ক্ষমতা আছে সাময়িকভাবে স্থগিত করার, দন্ডকে মাফ করে বিদেশে পাঠানোর। অথচ সরকার বেমালুম বলে যাচ্ছে- কোনো সুযোগ নাই। তাকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এ ধরনের কথা-বার্তা বলার মানে হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চান। সে জন্য আজকে এ ধরনের কথা বলছেন।

লন্ডনে এক নাগরিক সভায় খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তার ওই বক্তব্যকে 'জনগণ নিকৃষ্টতম ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছে। তিনি তার বক্তব্যে কয়েকটি সত্য কথা বলে দিয়েছেন। তা হলো- এ দেশে যা কিছু ঘটে, তা শেখ হাসিনার ইঙ্গিতে ঘটে। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার স্বীকারোক্তিতে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে, এ দেশে বিচার বিভাগের কোনো প্রয়োজন নাই। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই হলো সিদ্ধান্ত। এখন শেখ হাসিনা নিজেকে নিজে সম্রাট ঘোষণা দিলেই পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের গতিপথ চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে। সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে দেশকে উদ্ধার করতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে এবার কেউ এগিয়ে আসবে না। এমনকি ভারতও তাদের পাশে নাই। এবার সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হবে। এই অক্টোবরে সেটা করা হবে।

বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, এতে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। প্রধান বিচারপতি তার ওই পদকে কচি-কাঁচার পদ বানিয়েছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতিও আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য দিচ্ছেন। এসব খেলা বন্ধ করুন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার দিগদ্বিগ ছোটাছুটি করছে। টিকে থাকার জন্য দেশের ৭৫ ভাগ রপ্তানি বাজারকে হুমকিতে ফেলছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাবেক এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী, আইনজীবী ফোরামের কামরুল ইসলাম সজল, শামীমুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উলস্নাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আবদুল হালিম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, ইউনাইটেড ল'ইয়ার্স ফ্রন্টের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে