সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
মিয়ানমারে সংঘাত

ফের এপারে পালিয়ে এলেন বিজিপির ১৭৯ সদস্য

মংডুর কাছে রাতভর গোলাগুলি-বিস্ফোরণ সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
আবদুল হামিদ. নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান)
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে দেশটির সীমান্ত পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৭৯ সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। সোমবার রাত আটটা পর্যন্ত তিন দফায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে সীমান্তবর্তী কালাদান পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া বিজিপির আরও সদস্য স্থলপথে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে অনুপ্রেবেশ রোধে সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডু টাউনশিপের কাছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে সোমবার রাতে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গত তিন দিন ধরে সরকারি বাহিনীর স্থাপনার ওপর হামলা বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি। এতে সরকারি বাহিনীর অনেক সদস্য মংডুর পেছনে থাকা কালাদান পাহাড়ে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেও আরাকান আর্মির হামলা অব্যাহত রয়েছে।

প্রশাসন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপির মোট ১৭৯ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে এসে আশ্রয় নেন। বিজিপি সদস্যদেরকে নিরস্ত্র করে রাতেই নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। তবে এসব আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্যদের পরবর্তীতে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে এ বিষয়ে এখনো জানা যায়নি। আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্যের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ ও একজন আহত রয়েছেন। তাদের বিজিবির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্যদের খাদ্যসহ সহায়তা দিচ্ছে বিজিবি।

স্থানীয়রা জানান, সীমান্তের ৪৫ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকার জামছড়ি দিয়ে সকালে ২৯ জন বিজিপি সদস্য প্রবেশ করে। তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছিল। পরে রাতে নতুন করে আরও ১৫০ জন সদস্য প্রবেশ করে। এদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ ও একজন আহত রয়েছেন।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলমান সংঘর্ষের জেরে নাইক্ষ্যংছড়ির ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত নতুন করে মিয়ানমারের ১৭৯ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, 'বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৭৯ বিজিপি সদস্যকে নিরস্ত্র করে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।'

শিক্ষার যেন ব্যাঘাত না ঘটে এজন্য তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দিয়েছেন উলেস্নখ করে জানান, আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত ২ ফেব্রম্নয়ারি থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ৪ থেকে ৭ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপির ৩০২ জন সদস্যসহ ৩৩০ জন। ১৫ ফেব্রম্নয়ারি তাদের সবাইকে ফেরত পাঠানো হয়।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, 'টানা ১০-১২ দিন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাননি এপারের লোকজন। তবে দুই দিন ধরে গোলাগুলির শব্দ কানে এলেও তা ছিল অনেক দূরে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের কাছে। গতকাল তিন দফায় ১৭৯ জন বিজিপি সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।'

টানা ১২ দিন ধরে মংডুর উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি গ্রামে গুলি, শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটছে। তাতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে মংডু টাউনশিপসহ উত্তর দিকের কুমিরখালী, বলিবাজার, নাকফুরা, নাইচাডং, কোয়াচিডং, কেয়ারিপ্রাং ও পেরাংপ্রম্নসহ কয়েকটি গ্রাম।

টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, 'জ্বালানি তেলের সংকটে ভুগছে সেখানকার সরকারি বাহিনী। এ কারণে বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি নিয়ে নিয়মিত টহলে যেতে পারছেন না। আকাশ থেকেও আরাকান আর্মির অবস্থানে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপ কমিয়ে আনা হয়েছে। সঙ্গে ভোগাচ্ছে খাদ্যসংকট।'

টেকনাফের হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, 'কয়েক দিন ধরে মংডু টাউনশিপের চারদিক ঘিরে সরকারি অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। টিকতে না পেরে সরকারি বাহিনীর অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর আসছে। এতে এপারের লোকজন আতঙ্কিত।'

এদিকে সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার সাবের আহামেদের কোমরে এসে বিঁধে যাওয়া গুলি কক্সবাজার সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রপাচারের (অপারেশন) মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।

রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত কঠোর নজরদারিতে আছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে