শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে টিসিবির পণ্য কিনতে গাদাগাদি দেখার কেউ নেই

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। কিন্তু পণ্য কিনতে এসে নির্দিষ্ট ৩ ফুটের দূরত্ব মানছেন না ক্রেতারা। প্রয়োজনের তুলনায় পণ্য সরবরাহ কম ও নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে ট্রাক আসায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করায় ক্রেতারা হযরানির শিকার হচ্ছেন বলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

শনিবার রাজধানীর বাংলাবাজার ও ধোলাইখাল এলাকা ঘুরে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে।

এদিকে প্রশাসনের সহযোগিতায় টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম বা অবৈধ মজুদ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এছাড়া টিসিবির ন্যায্যমূল্যেও পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। এরপরও এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য টিসিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ধোলাইখাল নাসির উদ্দিন সরদার লেনের টিসিবির পণ্যবিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, আমরা গত এক তারিখ থেকে এখানে ও রায়সাহেব বাজারের সামনে পণ্য বিক্রি করছি। শনিবার একটু দেরিতে বসেছি। সকাল ৯টা থেকে বিক্রির কথা থাকলেও ১০টা থেকে বিক্রি শুরু করেছি। শনিবার আমরা মসুর ডাল, বুটের ডাল, তেল ও চিনি বিক্রি করছি। প্রতি লিটার তেল ৮০ টাকা, প্রতিকেজি ডাল ৫০ টাকা, প্রতিকেজি চিনি ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। প্রথম ঘণ্টায় মসুর ডাল শেষ হয়ে গেছে। এজন্য ক্রেতাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমাদের কি করার টিসিবি যে পরিমাণ পণ্য দেয় আমরা তাই বিক্রি করি। এখানে চুরির কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক না আসায় ক্রেতারা বিরক্ত হচ্ছেন বলেও যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে চিহ্ন দেওয়ার পরও সাধারণ মানুষ না মানলে কি করব। প্রশাসনের লোক এলে সবাই নিয়ম মেনে দূরত্ব বজায় রাখে। পরে তারা চলে যাওয়ার পর আর কেউ মানতে চায় না। আমরা পণ্য বিক্রি করব নাকি লাইন মেনটেন করব। আসলে মানুষ নিজ থেকে সচেতন না হলে বলে কয়ে জোর করে সচেতন করা যায় না।

নির্দিষ্ট দূরত্বে ক্রেতাদের পণ্য কেনার বিষয়ে কথা হলে মো. রাসেল বলেন, সকাল ৯টার আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ১০টার পর বিক্রি শুরু করছে। প্রথম দিকে প্রশাসনের লোক এসে লাইন ঠিক করে দিয়ে যায়। তারা চলে গেলে যে যার মতো করে লাইনে দাঁড়ায়। তখন আর ৩ ফিট দূরত্ব থাকে না, তখন এক ফিটে চলে আসে। নিজে থেকেই কয়েকজন বার বার দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলছেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। কতখানে পণ্য নিয়ে কে কার আগে বাড়ি যাবে সেই চিন্তা সবার মনে। তিনবার বললে একবার দূরে যায়। একটু পর আবার কাছে চলে আসে।

তিনি বলেন, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, এখন শুনি মসুর ডাল নেই। বলেন এত কষ্ট করে দাঁড়ানোর পরে যদি শুনি নেই তাহলে কেমন লাগে। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) আমি কোট কাচারির

\হসামনে থেকে পণ্য নিয়েছি। সেদিনও একই অবস্থা ছিল। শনিবার সেখানে গিয়ে দেখি ট্রাক নেই। পরে জানতে পারলাম আজ সেখানে ট্রাক যাবে না। শনিবার ধোলাইখালে ট্রাক আছে তাই এখানে এসে অনেক পেছনে লাইন ধরতে হয়েছে। আমাদের এভাবে হয়রানি না করে নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে দিলেই হয় বলে জানান তিনি।

বাংলাবাজারের জুবলি স্কুলের সামনে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন রহিম শেখ।

তিনি বলেন, ট্রাক দেরি করে এসেছে তাই লাইন বড় হয়ে গেছে। সাড়ে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনলাম। তারপর আবার মসুর ডাল শেষ হয়ে গেছে। পণ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে এজন্য কেউ আর ৩ ফুট দূরত্ব মেনে দাঁড়াতে পারছে না। টিসিবির লোক বার বার বলেও লাইন ঠিক করতে পারছে না।

সেখানে লাইনে দাঁড়ানো আরেক ক্রেতা সাহেদুর রহমানের কাছে দূরত্ব বজায় না রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত কিছু মেনে চলা যায় না। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। টিসিবিরতো ৯টা থেকে পণ্য বিক্রি শুরুর কথা ছিল। তারা তো নিয়ম মানতে পারছে না। তাহলে আমরাতো সাধারণ লোক। হঁ্যা নিরাপত্তার জন্য দরকার কিন্তু কি করব ভাই। এত ধৈর্য নেই। লোকজন বেশি সেজন্য চাইলেও দূরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় শুরু করেছে টিসিবি। শুক্রবার ব্যতীত আগামী ২০ মে পর্যন্ত পণ্য বিক্রি চলবে।

টিসিবির পণ্য দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে ঢাকা শহরের ৯০টি স্থানে, চট্টগ্রামে ৩০টি স্থানসহ দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৪০০ স্থানে ৩ হাজার ডিলারের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৮টি ভ্রাম্যমাণ মনিটরিং টিম কাজ করে যাচ্ছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব পণ্য দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রয়ের নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রাথমিকভাবে প্রতিজন ভোক্তা ৫০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৮০ টাকা প্রতি লিটার দরে সার্বোচ্চ ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল বিক্রি করা হবে। পরবর্তীতে ছোলা ও খেজুরও বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।

এদিকে টিসিবির পণ্য বিক্রয় নিয়ে যে কোনো অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গত ৭ এপ্রিল এ বিষয়ে টিসিবি থেকে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর,র্ যাব ও পুলিশ প্রশাসনকে সংঘটিত অনিয়মের যে কোনো অভিযোগ সুপারিশসহ টিসিবির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের গণমাধ্যমে কোনো অনিয়ম প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট ডিলার ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<96666 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1