শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চালের বৈশ্বিক সরবরাহ সংকুচিত

বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও ভারতের বিভিন্ন ব্যবসায়ী বাসমতী বলে এসব চাল রপ্তানি করছিলেন। এটি বন্ধে দেশটির সরকার ২৭ আগস্ট বাসমতী চালের নূ্যনতম রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলার বেঁধে দেয়
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ। চলতি বছরের ২০ জুন দেশটি বাসমতী ছাড়া অন্যান্য সাদা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে চালের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে চালের বৈশ্বিক সরবরাহ। খবর রয়টার্স।

এদিকে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশও স্থানীয় সরবরাহ কমিয়ে আনতে পারে। যাতে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এমন বাস্তবতায় আমদানিকারকরা সরবরাহ নিশ্চিত করতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আতঙ্কজনিত অস্বাভাবিক ক্রয়প্রবণতা (প্যানিক বায়িং) তৈরি হয়েছে।

ভারত গত বছর ভাঙা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের চাল রপ্তানিতে আরোপ করা হয় শুল্ক। ফলে চালের বাজারে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বজায় থাকা স্থিতিশীলতার অবসান ঘটে। ভাঙা চাল রপ্তানি বন্ধের পরও বাজারে স্থিতি ফেরেনি। তার ওপর বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ২০ জুলাই হতে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ চালের বৈশ্বিক সরবরাহকে সংকুচিত করতে ভূমিকা রেখেছে।

স্থানীয় বাজারে সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে ২০ জুলাই ভারত সরকার বাসমতী ছাড়া সব ধরনের সাদা চাল রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এদিকে ভারতের এ ঘোষণার একদিন পরই দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম দেশটির ফুড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। একই দিন ভারতের রপ্তানিকারকরা নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় ২০ লাখ টনের মতো চাল রপ্তানি চুক্তি বাতিল করে দিতে বাধ্য হন।

ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে শুরু করে চালের বৈশ্বিক বাজার। ২৭ জুলাই ভিয়েতনাম ও থাই চালের দাম ১৫ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে আসে। একইদিন ভারত তেল নিষ্কাশিত চালের কুঁড়া রপ্তানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এটি গবাদি পশু খাদ্য শিল্পে এটি ব্যবহার হয়। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এর ওপর আরোপিত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। এদিন আরব আমিরাতও চার মাসের জন্য চাল রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে।

ফিলিপাইন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল আমদানিকারক। গত ২৯ জুলাই দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্ডিন্যান্ড মার্কোস জুনিয়র জানান, দেশটিতে চালের মজুদ বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য তিনি ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি আগ্রহও প্রকাশ করেন। এল নিনোর কারণে স্থানীয় উৎপাদন ও অন্য সরবরাহকারী দেশগুলো থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।

ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় সুযোগ নেয় অন্য রপ্তানিকারকরা। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। ৪ আগস্ট জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জুলাইয়ের খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে স্থানীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ২৫ আগস্ট সাময়িকভাবে চাল রফতানি বন্ধ রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করে মিয়ানমার। একই দিন ভারত সেদ্ধ চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। দেশটির মোট রপ্তানির ৩০ শতাংশই আসে সেদ্ধ চাল থেকে।

বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও ভারতের বিভিন্ন ব্যবসায়ী বাসমতী বলে এসব চাল রপ্তানি করছিলেন। এটি বন্ধে দেশটির সরকার ২৭ আগস্ট বাসমতী চালের নূ্যনতম রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলার বেঁধে দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে