দক্ষিণ বাংলার মানুষের আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নের “পায়রা সেতু”র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১১ টা ৫ মিনিটে বঙ্গভবনের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুর উদ্বোধন ঘোষনা করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতুটি গাড়ি চালিয়ে পার হওয়ার আকাঙ্খার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি অারো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আছে বলেই আজ গনভবনে বসেও আপনাদের সাথে মিলিত হতে পারছি, কথা বলতে পারছি। তবে এটা ঠিক আমি নিজে উপস্থিত থেকে যদি পায়রা সেতুর ওপর দিয়ে একটু গাড়ি চালিয়ে যেতে পারতাম বা সেতুতে নেমে যদি একটু দাড়াতে পারতাম, ব্রীজের ওপর দিয়ে পায়রা নদীটা দেখতে পারতাম তাহলে সত্যিই খুব ভালো লাগতো। যে নদীটা আমি সবসময় স্পীড বোটে চড়েছি, সেখানে যদি ব্রীজের ওপর দিয়ে হাটতে পারতাম তাহলে ভালো লাগতো। কিন্তু করোনার কারনে বলতে গেলে একরকম বন্ধী জীবন, তাই সেটা আর হলো না। তবে আমার আকাঙ্খা আছে যে একদিন আমি গাড়ি চালিয়ে সেতুটা পার হবো। সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন সেতু তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে সেখানে অবশ্যই যাবো। আমি আসবো এটা হলো বাস্তব।
এরআগে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আশির দশকের একসময় আমার ছেলে-মেয়েসহ সবাই কুয়াকাটা যাবো বলে রওয়ানা দিয়েছিলাম।একটার পর একটা ফেরি পার হতে হতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পটুয়াখালী পৌছালাম। পটুয়াখালী থেকে আর কিছুতেই কুয়াকাটা পৌছাতে পারলাম না, ঘন কুয়াশার কারনে লঞ্চ পেলামনা, অার নদী পার হওয়া গেলো না। পটুয়াখালী থেকেই ফিরে আসি। ওই অবস্থায় আমরা ওখান থেকে আসি, তারপর থেকেই একটা আকাঙ্খা ছিলো এই যোগাযোগ ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে। আর চমৎকার এই জায়গাটা আমাদের দেশের মানুষ দেখতে পারবে না এটা হতে পারে না।
উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরো বলেন, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর শরিয়তপুর থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ ওই এলাকার ১২ টি জেলা সবসময় অবহেলিত ছিলো। তাদের অপরাধ কি ছিলো এটাই প্রশ্ন? প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়িত এ অঞ্চলটাকে ক্ষতবিক্ষত করে, এই অঞ্চলের মানুষ সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই অঞ্চলে কিছু ছিলো না। আমরা একের পর এক রাস্তাঘাট করে গেছি। বিশেষ করে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে আর্থ সামাজিক উন্নতিটা তরান্বিত হবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষেই আমরা কাজ শুরু করি। প্রধানমন্ত্রী অারো বলেন, বরিশাল বিভাগে শুধু রাস্তাই করিনি, সেখানে আমাদের ক্যান্টনমেন্ট নির্মান হয়েছে। একটি নৌ ঘাটি ও বিমান ঘাটিও হচ্ছে। সেই সাথে সাথে কোষ্টগার্ডের ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এবং কোষ্টগার্ড ঘাটি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, বিজ গবেষনা কেন্দ্র করেছি, পায়রা বন্দর করেছি।ঠিক এভাবে পুরো বরিশালটা মিলিয়ে কিন্তু একটা কর্মযজ্ঞ চলছে।
তিনি বলেন,বরিশাল-পটুয়াখালীর একটি সংযোগ সৃস্টি হবে এই পায়রা সেতুতে। পায়রা নদীর ওপর সেতু, তাই নদীর নামে সেতুর নাম হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। সেজন্য এ নামটা আমি পছন্দ করেছি। আর পায়রা তো শান্তির প্রতীক। এ সেতুটা হওয়ার পর এ অঞ্চলের মানুষের যে একটা আর্থিক উন্নতিটা হবে, তার ফলে মানুষের মনে একটা শান্তি আসবে এবং তারা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বরিশাল ৪ অাসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক অাব্দুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল, ডিঅাইজি এস এম অাক্তারুজ্জামান, বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারসহ পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পরপরই লেবুখালি ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে টোল পরিশোধ করে পায়রা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।
যাযাদি/ এস