রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশখালীর ছেলে প্রিয়াংশুর কন্ঠে ১২০ দেশের জাতীয় সংগীত

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
  ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৫৯

দেশে দীর্ঘ দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে চলছিল করোনার রাজত্ব, করোনার অধিক প্রকোপের কারনে স্কুল-কোচিংও বন্ধ ছিল সাথে দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় পড়াশোনার তেমন চাপ ছিল না প্রিয়াংশু রায় চৌধুরীর তাই অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে অনন্য এক উদাহারণ সৃষ্টি করেছে সে ঘরে বসে একে একে রপ্ত করেছেন ১২০ দেশের জাতীয় সংগীত প্রিয়াংশুর এখন লক্ষ্য, গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নিজের নাম লেখানো

চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র প্রিয়াংশু রায় চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নে বর্তমানে পরিবারের সাথে থাকেন নগরীর পাথরঘাটায় বাবা পলাশ রায় চৌধুরী কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক মা সোমা দত্ত গৃহিণী

দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিবেদক এর সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রিয়াংশু রায় চৌধুরী জানান, আমার পথচলার শুরুটা ক্রিকেট থেকেই ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া দলের খেলা আমার খুব পছন্দের সাধারণত আমি অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ কখনোই মিস দেয় না করোনার কারনে স্কুল বন্ধ লকডাউনের কারনে বাহিরেও বের হওয়া যাচ্ছে না এক দিন অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের খেলা দেখতে বসে মনে হলো আমাদের জাতীয় সংগীত তো জানি প্রিয় দল অস্ট্রেলিয়ারটাও শিখতে পারলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ গুগলের সাহায্যে রাতের মধ্যেই শিখে নিলাম অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত এরপর মনে হলো, অস্ট্রেলিয়ার পাশের দেশ নিউজিল্যান্ডেরটাও তো শেখা যেতে পারে শিখে নিলাম সেটাও এভাবে এক এক করে জাপান, রাশিয়া, ভুটান, আমেরিকা সহ ১২০ দেশের জাতীয় সংগীত শিখেছি

এমন এক ব্যতিক্রমী ভাবনা কোথা থেকে মাথায় আসলো- জানতে চাইলে প্রিয়াংশু রায় চৌধুরী বলেন, ক্রিকেট আমার পছন্দের খেলা সাধারণত ক্রিকেট-ফুটবল কিংবা যেকোনো খেলা শুরুর আগে দেখি খেলোয়াড়রা মাঠে এসে নিজ দেশের জাতীয় সংগীত গান একদিন ভাবলাম- আমিও যদি তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে পারি, শুধু নিজের দেশ না; অন্যান্য দেশের জাতীয় সংগীতও যদি গাইতে পারি, বিষয়টি কেমন হয় মূলত সেখান থেকেই আমার মধ্যে ইচ্ছে জাগে

এতগুলো দেশের জাতীয় সংগীত শেখার মাধ্যম বা প্রশিক্ষক হিসেবে কাকে ব্যবহার করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়াংশু বলেন, আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি গান শুনি, গান গাই কিন্তু কাকে দিয়ে গান শিখবো তা কখনো ভাবিনি এছাড়া একেক দেশের একেক ভাষায় জাতীয় সংগীত গাওয়া, এটি ব্যতিক্রম একটি বিষয়; চাইলেও এক্ষেত্রে কারো সহযোগিতা আমি পাবো না প্রতিটি দেশ থেকে মানুষ এনে শেখাও সম্ভব না তাই ইউটিউবে সার্চ করে একেক দেশের জাতীয় সংগীত বের করে শুনতাম এভাবেই সবগুলো জাতীয় সংগীত রপ্ত করি

গিনেজ বুকে নাম লেখানোর ভাবনা নিয়ে প্রিয়াংশু রায় বলেন, বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংগীত শিখতে শিখতে একসময় মনে হলো এটা তো একটা ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও হতে পারে এরপর গুগলে সার্চ করে জানতে পারলাম কানাডার শিশুশিল্পী কেপ্রি এভেরিট এর কথা সে বিশ্বের ৭৬টি দেশে গিয়ে সেসব দেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম লেখিয়েছে এরপর মনে হলো ২০১৬ সালে করা কেপ্রির রেকর্ড তো আমি ভেঙে ফেলছি এরপর আমি বিষয়ে গিনেজ ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছি

প্রিয়াংশু রায় বলেন, এতগুলো দেশে গিয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে গেলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন তবে সেই অর্থের জোগান কীভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তিত আমি ছাড়া গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো নিয়ে দেখা দিয়েছে শত অনিশ্চিয়তা তবে আমার একটাই স্বপ্ন যেমন করেই হোক গিনেস ওয়ার্ল্ডে নাম লেখানো এর জন্য আমি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরেও আবেদন করেছি

১২০ পেরিয়ে আর কত জানতে চাইলে প্রিয়াংশু রায় বলে, বর্তমানে ১২০টি দেশের জাতীয় সংগীত একদম নির্ভুল ভাবে আমি গাইতে পারি নতুন করে আরও অনেক শিখছি তবে পৃথিবীর সব দেশের জাতীয় সংগীত শেখার ইচ্ছা নেই আপাতত পড়াশোনার পাশাপাশি যে কয়টা পারি শিখব তবে আমার ক্রিকেট ম্যাচে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ইচ্ছা বিদেশ থেকে যখন ক্রিকেটাররা খেলতে আসেন তখন ম্যাচের শুরুতে সেসব দেশের জাতীয় সংগীত গাইতে চাই আমিআমাদের জাতীয় সংগীত গাওয়ার পাশাপাশি সফরকারী দলগুলোরও জাতীয় সংগীত গাইতে চাই এতে বিদেশিদের কাছে আমাদের দেশের প্রতি একটা ইতিবাচকতা তৈরি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি

প্রিয়াংশু বলেন, ছোট থেকেই গান ভালো লাগেমুলত গানের হাতেখড়ি হয় আমার মায়ের কাছে ছোট থেকেই গান গাইতে ভালো লাগে আমার সবচেয়ে প্রিয় রবীন্দ্র সংগীত তবলা বাজাতেও দারুণ লাগে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংগীত শেখার পাশাপাশি ইউটিউব দেখে ইউকুলেলে বাজানো শিখছি আমি

প্রিয়াংশুর মা সোমা দত্ত বলেন, ‘আমার ছেলে সাধারণত অবসরে গান, তবলা ইউকেলেলে নিয়ে সময় কাটাতো সে যখন নবম শ্রেণিতে তখন খন জাতীয় সংগীত শেখা শুরু করে তা মায়ের চোখে পড়ে শুরুতে ভেবেছিলাম পড়াশোনায় ফাঁকি দিচ্ছে একদিন লকডাউনে দেখলাম ছেলে বাসায় বসে পড়াশোনার পাশাপাশি দেখতাম মোবাইলে কী যেন করতো শুরুতে ভেবেছিলাম গেমস খেলে কিংবা ফেসবুকে চালিয়ে সময় নষ্ট করছে এরপর বকাবকি করতাম আমি পরে বিষয়ে একদিন তার সঙ্গে কথা বলতেই বললো- ‘মা আমি বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংগীত রপ্ত করছি এটি শুনে ভাবতাম- তা কীভাবে সম্ভব? কিন্তু দেখি আসলেই সে রপ্ত করতে পেরেছে পরে একদিন বিষয়টি তার বাবাকে জানাই এরপর এটা শুনে তার বাবাও প্রথমে বকাবকি করলেও একসময় ছেলের এই প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন শুরু করেন অনুপ্রেরণা দেয়া।’

প্রিয়াংশুর বাবা পলাশ রায় চৌধুর বলেন, করোনাকালে যখন স্কুল বন্ধ ছিল, তখন দেখতাম সে তবলা-ইউকেলেলেসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকতো আমি সারাদিন অফিস করতাম একদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখি- সে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় গান গাইছে শুরুতে ভেবেছিলাম বদ্ধ ঘরে থাকতে থাকতে ছেলে পাগল হয়ে গেল কিনা বিষয়টি তার মাকে বলতেই মা জানালো ভিন্ন কথা এরপর ছেলেকে কাছে ডেকে তার কাছে পুরো ব্যাপারটি জানতে পারি জানার পর শুরুতে ওর বিষয়টা না বুঝে বকাবকি করলেও এর জন্য পরে নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছিল এরপর থেকে প্রতিরাতে বাসায় ফিরে কখনো পাঁচটি, কখনো ছয়টি করে ছেলের মুখে একে একে বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংগীত শুনতে থাকি লকডাউনে গেমসে বা ভার্চুয়াল জগতে আসক্ত না হয়ে এতগুলো দেশের জাতীয় সংগীত শিখেছে এটা একটা সৃষ্টিশীল বিষয় বাবা হিসেবে তাকে নিয়ে গর্ব করার মতো তবে ছেলে যেন সবার আগে ভালো একজন মানুষ হয় এটাই একমাত্র চাওয়া আমার আমি চাই সে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে কাজ করুক

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে