সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাজু মণ্ডলের চা দোকানের সামনে চারা গাছের ফুল-ফলের নতুন জগত

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
  ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৩৩

চা বিক্রির পাশাপাশি দীর্ঘদিন কাঠ জাতীয় গাছের চারাসহ প্রায় দেড়শতাধিক ফল ও ফুলের চারার পশরা সাজিয়ে বিক্রি করেন সাজু মণ্ডল। নিজের চায়ের দোকানের সামনে মহাসড়কের দু’ধারে ২শ’মিটার জায়গা জুড়ে এ যেন ফুল-ফলের নতুন জগত।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কোটচাঁদপুর-কালিগজ্ঞ মহাসড়কে ব্র্যাক অফিসের সামনে প্রায় ৩৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করেন সাজু মণ্ডল। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আগে তিনি অন্যের নার্সারী থেকে চারা গাছ ক্রয় করে চা বিক্রির পাশাপাশি চারা গাছের ব্যবসা করতেন। ১২ বছর হলো তিনি পাশেই সাড়ে ৪বিঘা জমিতে নিজেই “সাজু নার্সারী” নামে নার্সারী করেছেন। এখন সেখান থেকেই চারা গাছ তৈরী করে বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন- গাছের চারা বিক্রিতে ক্রেতার ভীড় সব সময় থাকে না যে কারনে পাশের টং-এ বসে চা বিক্রি করি। চারা গাছের খরিদ্দার এলে দোকান থেকে নেমে তাদেরকে গাছের চারা দিই। পাশাপাশি দুটি ব্যবসা থেকে ভালই আয় রোজগার হয় ।

তিনি জানান, তার নার্সারীতে সেগুন, মেহগুনি, কড়ুই, নিম, লম্বু এ ধরণের কাঠ জাতীয় গাছ ছাড়াও ফল ও ফুলেই চারা রয়েছে প্রায় ১৬০ থেকে ১৭০ প্রজাতির। তিনি আরো বলেন- আমার নার্সারিতে প্রতিদিনই ২জন শ্রমিক কাজ করেন। চারা তৈরী করার মৌসুমে শ্রমিকের সংখ্যা বেশী লাগে।

প্রতিদিন শ্রমিকদের মাথা পিছু দিতে হয় সাড়ে ৫শত টাকা করে। ওই শ্রমিকরা একাধারে আমার নার্সারিতে কাজ করে বিধায় তাদেরকে নার্সারি পরিচর্যা, বীজ বোপন বা গাছ থেকে কলম বাঁধার কথা খুব একটা বলে দিতে হয় না। সমস্যা হলে আমি শুধু তাদের দিক নির্র্দেশনা দিই।

এখন গাছ লাগানোর ভরা মৌসুম হলেও এবার চারা গাছ বিক্রি হচ্ছে বিগত বছর গুলির তুলনাই অনেক কম। ৫ থেকে ৭হাজার টাকার বেশী বিক্রি হচ্ছে না। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, এলাকার ফাঁকা জমি জায়গা ড্রাগনে গিলে খাচ্ছে। ড্রাগন চাষে ঝুঁকে পড়ায় এবার অন্যান্য ফল গাছের চাহিদা কম। সাজু মণ্ডল বলেন, আমি খুব ছোট বেলা থেকে গাছ লাগাতে ভালবাসি। আমি তুলনা মূলক কমদামে চারা গাছ মানুষের হাতে তুলে দিই। আমি চাই আমার কোটচাঁদপুরসহ আশপাশ এলাকা সবুজে ভরে উঠুক। ওই নার্সারির শ্রমিক আব্দুস সাত্তার বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে এ নার্সারীতে কাজ করছি। এক জায়গায় কাজ করলে সুবিধা আছে। মালিকের নেক নজর থাকে। তাছাড়া কাজ কামাই যায় না। এখানে আমি মোটামুটি ভাল আছি।

ঝিনাইদহের কালিগজ্ঞ থেকে মহাসড়ক ধরে কোটচাঁদপুর উপজেলায় ঢোকার পথে চোখে পড়বে রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছের সমারহ। এটিই হচ্ছে সাজু মণ্ডলের নার্সারির চারা। এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আতিয়ার গাজী বলেন- আমি নিজেই এখান থেকে বিভিন্ন ধরণের গাছ ক্রয় করে আমার বাড়ীর আঙ্গিনাতে লাগিয়েছি। কয়েক বছর ধরে ওই গাছ গুলি থেকে আম, লেবু, আমড়া পাচ্ছি। তিনি বলেন, চলতি পথে এখানকার ছোট ছোট গাছে ফুল ফল দেখে অনেকেই উৎসাহ নিয়ে গাছ ক্রয় করে তাদের বাসা বাড়ির ছাদ অথবা আঙ্গিনায় লাগাচ্ছেন।

কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিবুল হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি এ উপজেলাতে অল্প কিছুদিন এসেছি। শুনেছি সাজু মণ্ডল চা বিক্রির পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে নিজেই নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির চারা তৈরী করে রাস্তার পাশে রেখে ব্যবসা করছেন। অবশ্য আমিও তা দেখেছি। আসা যাওয়ার পথে সাজু মণ্ডলের বিভিন্ন প্রজাতির চমৎকার গাছ দেখে অনেকে আগ্রহভরে পছন্দ আনুযায়ী চারা গাছ ক্রয় করে বাড়ীর ছাদ ও বাড়ীর আঙ্গিনার ফাকা জায়গায় সে গুলি লাগাচ্ছেন। এতে করে পরিবারের সদস্যেদের ফল থেকে পুষ্টির চাহিদা যেমন মিটছে অন্যদিকে গাছে ঢাকা শীতল সবুজ পরিবেশ পাচ্ছে ওই পরিবার। অনেকে এখান থেকে মেহগুনি, কড়ুই, নিম এধরণের কাঠ জাতীয় গাছ ক্রয় করে তাদের পরিত্যাক্ত জমিতে বাগান করেছেন এবং করছেন। সাজু মণ্ডলের চারা গাছের ব্যবসা হলেও তিনি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছ বিক্রির মাধ্যমে অনেক ভুমিকা রাখছেন বলে আমি মনে করি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে